-
সুন্দরবনের রাজা সিংহমামা তার অঙ্গবনসমূহ পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রতিনিধি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলেন। রাজার সিদ্ধান্তের কথা বনের পশু-পাখিদের জানিয়ে দেয়া হল।
নির্বাচনে যারা অংশ নিতে ইচ্ছুক তারা যে যার মত ডাকঢোল পিটিয়ে গাধা ও ঘোড়ার টিঠে সরওয়ার করে প্রচারণায় মেতে ওঠে। প্রতিটি প্রার্থীর মুখে উন্নয়নের বুলি। নিরীহ পশু পাখির ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রায় সব প্রার্থীর মুখে মুখে।
হিরণ পয়েন্ট সংলগ্ন বনের সাধারণ নাগরিক তোতাপাখি। অভাব অনটন যার নিত্য দিনের সঙ্গী। পাখা ভেঙ্গে যাওয়ায় তিনি আহার সংগ্রহে বেরুতে পারতেন না। জীবিকা নির্বাহের জন্য তার প্রধান অবলম্বন ছিল বাগেরহাটের খান জাহান আলীর ষাট গম্বুজ মসজিদ পাশ্ববর্তী মাজার শরীফ। ভক্তদের দানে যতটুকু তবারক সংগ্রহ হতো সেখান থেকে তিনি যখন যা রিজিকে থাকতো খেতেন।
একদিন এক প্রার্থী অজগর সাপ মাজারে গিয়ে ঘোষণা দিলেন, আগামী শুক্রবার তিনি মাজারে অবস্থানকারী সকল পশুপাখিকে পেটপুড়ে উন্নত খাবার খাওয়াবেন। ঐ দিন অন্য ভক্তদের আর কিছু দান করতে হবে না।
অজগরের ওয়াদার পরিপেক্ষিতে শুক্রবার দিন মাজারে অন্যকেহ কিছুই দান করলেন না। সবাই আশায় ছিলেন অজগর খাবার দিনয়ে আসবেন, সেই খাবার তারা আয়েশ করে খাবেন।
দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু খাবার আসছিল না।
এক মুসাফিরর ভল্লুকের আনীত খাবার শেষ হওয়ায় তিনি মাজারে আসলেন তবারক খেতে। এসে দেখেন মাজারে তবারক নেই। তিনি হতাশ হলেন এবং এর কারণ তোতাপাখির নিকট জানতে চাইলেন।
তোতাপাখি জানালেন, এ বনের প্রভাবশালী অজগর আজ তাদের খাওয়ানোর ওয়াদা করেছেন। তারা সেই আশাতেই আছেন।
ভল্লুক জানালেন, তিনি নিজে একজন ধার্মিক এবং প্রার্থী অজগরকে চিনেন। ভল্লুকের আশ্বাস অজগর খুব ভালো প্রাণী। তার দৃঢ় বিশ্বাস অজগর অবশ্যই খাবার নিয়ে আসবেন। সকলকে চিন্তা করতে নিষেধ করলেন।
অজগরের প্রতি ভল্লুকের এত উচ্চ বিশ্বাস দেখে তোতাপাখি আফসোস করে বললেন, অজগরের ওয়াদার প্রতি তারও বিশ্বাস আছে। তবে তিনি এর চেয়ে বেশি বিশ্বাস রাখেন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি। কেননা আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র রিজিকদাতা। ভল্লুক একথা শুনে লজ্জিত হলেন।
এদিকে অপরপ্রার্থী দুবলারচরের বাঘমামা প্রত্যেক ভোটারের সমর্থন পাওয়ার প্রত্যাশায় হন্নে হয়ে ছোটাছুটি করছিলেন এবং বনের পশুপাখিদের বিভিন্ন সমস্যা সাময়িকভাবে তাৎক্ষনিক সমাধান করছিলেন। তিনি খোঁজ পেলেন গহীন জঙ্গলে এক অন্ধ গোঁখরা সাপ বাস করেন, যিনি একজন বৈধ ভোটার। সেই গোঁখরা সাপ একা একা খোদার বন্ধনায় মগ্ন থাকতেন। সাপটি অন্ধ বিধায় সেখানে শুরুতে বেশ কয়েকদিন খাবার সংগ্রহ করতে না পেরে অনাহারে কাটিয়েছেন আর ক্ষুধা নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে ইবাদতে মশগুল ছিলেন। অতঃপর আল্লাহর রহমতে এক হরিণী প্রতিনিদ গোঁখরা সাপকে দুবেলা এসে দুধ পান করিয়ে যেতেন।
এভাবে চলছিল গোঁখরার জীবিকা নির্বাহ।
প্রার্থী বাঘমামা গোঁখরা সাপের নিকটে গেলেন। ভোট পাবার আশায় গোঁখরাকে মুখরোচক খাবারের প্রলোভন দেখালেন। খাবারের মোহে সাপটি বাঘের সাথে গেলেন এবং পেটপুড়ে স্বাদের খাবার খেলেন। ফিরে এসে পুনরায় ধ্যানমগ্ন হলেন।
পরদিন তার প্রচন্ড ক্ষুধা পায়। তিনি আশায় চিলেন হরিনী এসে তাকে দুধ পান করাবেন। কিন্তু কয়েকদিন গত হতে চলছে হরিণী আর আসছে না। সাপ বুঝতে পারলেন তিনি মস্ত ভুল করেছেন। আল্লাহর উপর ভরসা করা বাদ দিয়ে বাঘের উপর আস্থা এনে খেতে যাওয়া ঠিক হয়নি। তিনি তওবা করে আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত হলেন।
অন্যদিকে সুন্দরী কাঠ বাগানের প্রার্থী শিয়াল পন্ডিত গোটা বনে চমক লাগিয়ে দিলেন। তিনি প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি না ছেড়ে শুধু এই বনে প্রচারণ করছিলেন, আল্লাহ চাহেন তো তিনি সকলের সেবা করবেন এবং বনের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করবেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না। নিজের জন্য যা পছন্দ করেন অপরের জন্যও তাই পছন্দ করবেন। তার দাবী যিনি খোদাভীরু সবাই এমন একজন প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন। তার ধারণা বিজয়ী করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। সমস্ত ক্ষমতার মূলেও একমাত্র আল্লাহ। একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালাই যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান করেন।
নির্বাচনের তারিখ মোতাবেক নির্বাচন সম্পন্ন হলো। অজগর সাপ, বাঘমামা ও শিয়াল পন্ডিত তিনজনই কাছাকাছি ভোট পেলেন। তবে নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে মাত্র এক ভোট বেশী পেয়ে শিয়াল পন্ডিত বিজয়ী হলেন। এতে হট্রগোল সৃষ্টি হয়ে গেল নির্বাচনে কারচূপী হয়েছে।
এ সংবাদ রাজা সিংহমামা নিকট পৌাঁছাল। বনের হট্রগোল থামাতে রাজা নিরাপত্তাবাহিনী পাঠালেন। আর সমালোচনা করলেন, আল্লাহ্ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন। নির্বাচনে কারচূপী প্রসঙ্গে তিনি বিচলিত নন। তার ভাষ্য, ক্ষমতা নিয়ে গন্ডগোল পশুপাখিদেরই মানায়।
অদ্ভূত কিছু নিয়ম অদ্ভুত কিছু জীবন তবুও নতুন এক জীবন্ত সুরে দুঃখ থেকে বহুদূরে অতৃপ্ত স্বত্তা খুঁজে ফেরে সকল উন্মাদনা ছেড়ে ছেড়ে
Wednesday, December 31, 2014
প্রাণীদের গণতন্ত্র
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment