: কি, কি বললে তুমি?
: আমি বলেছি আমি রিফাতকে বিয়ে করবো।
: তুমি কি আজকে পাগল হয়ে গেছ?
: হ্যা বাবা হয়েছি তবে রিফাতের প্রেমে।
: তুমি আমার মেয়ে হয়ে এমন একটা সিদ্ধান্ত কিভাবে নিলে আমি ভেবে অবাক হচ্ছি।
: তোমার মেয়ে বলেই তো আমি এমন একটি কঠিন সিদ্ধান্ত এত সহজে নিয়ে ফেলেছি।
: রিফাত কি করে, কি তার বংশ মর্যাদা, তার সামাজিক অবস্থানই বা কি সেসব কিছু না জেনে তোমার এমন আত্মহত্যা মূলক সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিতে পারিনা।
: ওকে বাবা, তাহলে আমি ওকে পালিয়ে বিয়ে করবো। আমাকে খাওয়ানো পড়ানো এবং আমার এমএ পড়ানো সহ আমার পুরো দায়িত্ব রিফাত অনায়াসে নিতে পারবে।
: তার বাবা কি কোটিপতি?
: না বাবা, তার বাবা পরের জমিতে কামলা খেটে রিফাতকে এমএ পাশ করিয়েছে।
: তাহলে নিশ্চই রিফাত বড় কেন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীতে জব করে?
: না বাবা, সে বিভিন্ন মুদি দোকানে নানা ধরনের ব্যবহার্য পণ্য সাপ্লাই করে।
: মুদি দোকানে দাঁতের ব্রাশ, দাঁতের কালো মাজন বিক্রি করে হাহ হাহ হা, হাসালে তুমি। তোমার লালন পালনে আমি সারা জীবনে অগাধ টাকা খরচ করেছি এবং এখনও করছি।
: আমি সব কন্ট্রোল করে ফেলবো বাবা, খরচ কমিয়ে আনবো।
: গত মাসেই তোমাকে ২০১৫ মডেলের লেক্সাস গাড়ি কিনে দিলাম।
: বাবা আমি এবং রিফাত রিকশা ব্যবহার করবো। রিকশায় ঘুরতে ভিন্ন ধরনের মজা আছে বাবা।
: তুমি একটি মাসও ওই রিফাতের সাথে টিকবেনা, অভাব কি জিনিষ তুমি জানইনা। তুমি অল্প কিছু দিনের ভেতরেই আবার আমার কাছে ফেরত আসতে বাধ্য হবে।
: আমারও তাই মনে হচ্ছে বাবা। তবে দেখিনা কি হয়, জীবনটা একটু অন্যরকম হলে তো আর মন্দ না।
: ইটস ইওর চয়েস মাই বেবি। এন্ড আই প্রমিস, ভেরি সুন ইউল বি ব্যাক টু ইওর পাপা।
: লেটস মি হ্যান্ডেল ইট পাপা। লেট মি মেক মাই ওউন হ্যাভেন।
বিজনেস টাইকুন আফতাব হোসেন একজন প্রাইভেট গোয়েন্দা লাগালেন তার মেয়ে সাবা এবং রিফাতের উপর। আজ পত্রিকার হেড লাইনে তার আদরের মেয়ে সাবার ছবি এসেছে। সাবা পুরো বাংলাদেশে মেধা তালিকায় শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। পত্রিকার সাক্ষাৎকারে সাবা তার ভালো রেজাল্টের জন্য তার বাবা এবং স্বামী রিফাতের সহযোগীতার কথা বলেছে। দীর্ঘ দুই বছর পর তিনি স্থির করলেন এবার নিজ চোখে দেখা যাক তারা কেমন আছে।
রহমান সাহেব সকাল সকাল সাবার প্রিয় ক্যাডব্যারি চকলেটের একটা প্যাকেট হাতে মিরপুরের একটা তিনতলা বস্তি মত বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছেন। দামি সাফারি স্যুট গায়ে চতূর্দিকের ময়লা, নোংরা বাচ্চাদের হই হল্লোর আর দূর্গন্ধকে পাশ কাটিয়ে তিনি তিন তলার একটা দরজার সামনে থমকে দাড়ালেন। দরজার গায়ে বড় বড় করে তার মেয়ে সাবার হাতের লেখা "আওর হ্যাভেন"।
রহমান সাহেব একটু কাছে গিয়ে দরজা হালকা ধাক্কা দিতেই শুনলেন ভেতর থেকে কথার আওয়াজ আসছে...
সাবা : তুমি আর কবে চুল আচড়ানো শিখবে বলো দেখি? কাস্টমার তোমার মাথা দেখে বলবে কাক এই মাত্র বুঝি তোমার মাথায় একটা ডিম পেরে গেছে।
রিফাত : আরে না, সাত সকালে তোমার সাথে আমি ঝগড়া না করলে আমার দিনটাই পানসে পানসে লাগে।
সাবা : ইশ সাহেবের ঢং দেখে বাঁচিনা। এই শোন আজকে বিকেলে আমরা দুজন ঘুরতে যাবো।
রিফাত : কিন্তু মালের ডেলিভারি আমি না দিলে তে সমস্যা।
সাবা : অসুবিধা নেই আরেকদিন যাবো। আর শোন, রাতে কিন্ত তারাতারি বাসায় আসবে, আমরা দুজন একসাথে খাবো।
রিফাত : এক শর্তে আমি রাজি আছি।
সাবা : ওরে বাবারে, আমি তোমাকে ভাত খাইয়ে দিতে পারবো না। বুড়া বাবু কোথাকার।
রিফাত : বোঝেনা সে বোঝেনা।
সাবা : গান টান বাদ দিয়ে এবার যাও তারাতারি। নইলে মালের বিল আজকেও পাবেনা।
রিফাত : হ্যা হ্যা যাচ্ছি, আমাকে ভাগিয়ে দিতেই খুব ভালো লাগে না?
সাবা : অফিসটা তোমার শশুরের নয়, দেরি করলে আমার চাকরি ঘ্যাচাং করে কেটে দেবে। তুমি আসার সময় চাল নিয়ে এসো। আমি সন্ধার সময় মাছ আর সব্জি নিয়ে আসবো।
রহমান সাহেব সাবা আর রিফাতের তীব্র সুখ সহ্য করতে পারলেন না। তাদের বেহেস্তের সামনে থেকে যত তারাতারি সম্ভব চলে যেতে হবে। তাদের এই সুখ নস্ট করার কোন অধিকারই তার নেই। তিনি চকোলেটের প্যাকেটটা দরজার কাছে রেখে সেখান থেকে চলে আসলেন।
সাবা দরজা খুলতেই ক্যাডবেরির প্যাকেটটা তার চোখে পরে। সাবা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। তার বাবা নিশ্চই এখানে এসেছিল।
রহমান সাহেব গাড়িতে বসে স্তব্ধ হয়ে আছেন। কি আশ্চর্য ব্যপার, চোখে পানি কেন? তিনি মোটেই চোখের পানি আটকাতে পারছেননা। সাবা পুরোপুরি তার মত হয়েছে। কখনো হার মানতে রাজি নয়। আজ সাবা জিতে গেছে, তিনি হেরে গেছেন। তিনি টাকা দিয়ে যে বেহেস্তটা বানাতে পারেননি, সেটা সাবা ভালোবাসা দিয়ে বানিয়ে ফেলেছে। তিনি এখন হাসছেন মেয়ের জয়ে। কিছু কিছু হার জয়ের চাইতেও মধুর হয়।
তিনি নতুন কেনা অফিসের কর্মচারীদের বেতনের বইটা হাতে নিলেন। সেখানে ইক্সিকিউটিভ অফিসারের সাইনটার উপর তিনি পরম মমতায় হাত বুলালেন। কি সুন্দর করে বেতনের রশিদে তার মেয়ে সাইন করেছে "সাবা"। আরে আশ্চর্য ব্যপার, আবারও তার চোখে জ্বল আসছে কেন?
বাবারা কি এমনই হয়?
পুনশ্চ : গল্পটির ৮০% বাস্তব। বাকিটুকু ফ্লেভার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment