পৃষ্ঠাসমূহ

Tuesday, January 6, 2015

দেশ থেকে ১০ বছরে পাচার হয়েছে সোয়া লাখ কোটি টাকা

দেশ থেকে বৈধ-অবৈধ পথে বিদেশে পাচার হয়ে যাচেছ হাজার হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন গ্রুপ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি অর্থপাচারে জড়িত। দুর্নীতি দমন কমিশনের হাতে সন্দেহভাজনদের তালিকাও রয়েছে, যদিও সক্ষমতার অভাবে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না সংস্থাটি। তবে অর্থপাচারের বিষয়টি দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ১০ বছরে অন্তত ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা অবৈধ পন্থায় বিদেশে পাচার হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল ১৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম। অন্যদিকে মালয়েশিয়ার মাই সেকেন্ড হোম প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন ২ হাজার ৭৫৫ জন বাংলাদেশি। অর্থপাচারের বিষয়টি স্বীকার করে এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অর্থপাচার ইতোমধ্যে হুমকি হয়ে উঠেছে। যেসব গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে, সেগুলোর অন্যতম ইউনিপে-২, হলমার্ক ও ডেসটিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি বৈধ-অবৈধ পথে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। বেশির ভাগ অর্থপাচার হয়েছে হুন্ডির মাধ্যমে। যেসব দেশে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কানাডা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড উল্লেখযোগ্য। অর্থপাচার নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা সরকারকে হুঁশিয়ার করলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবমুখী কোনো পদপে নেওয়া হয়নি। বরং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অনেকে সেই টাকাও বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন। ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচেছ।
সূত্রমতে, একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ীর পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও বিদেশে অর্থপাচারে জড়িত। তাদের অনেকেই মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি কিনেছেন। স্থানীয়ভাবে কেউ কেউ ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলেছেন। কেউ কেউ স্ত্রী-পুত্র, পরিবার-পরিজনদের পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) করা ‘ইলিসিট ফাইন্যান্সিয়াল কোজ ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ : ২০০২-২০১১’ শিরোনামের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১ হাজার ৬০৭ কোটি ১০ লাখ ডলার বা ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা অবৈধভাবে বিদেশে চলে গেছে। পাচার হওয়া অর্থের আধিক্যের বিবেচনায় বিশ্বের উন্নয়নশীল ১৫০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম। আর মালয়েশিয়ার ‘মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পের নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওই প্রকল্পে ২৪ হাজার ১০৫ জন বিদেশি নাগরিক বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের রয়েছেন ২ হাজার ৭৫৫ জন। চীন ও জাপানের পরেই সেকেন্ড হোমে বিনিয়োগে বাংলাদেশিদের অবস্থান।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ইতোমধ্যে অর্থপাচারের সঙ্গে সংযুক্ত সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে। তবে দুদক সমতার অভাবে সে বিষয়ে কার্যকর পদপে নিতে পারেনি।
গত ৬ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থপাচার হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ অবৈধ উপায়ে পাচার হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জমি বিক্রি করা টাকার সঠিক পরিমাণ দেখানো হয় না। এই অর্থ ¯স্থানান্তরের প্রশ্ন আসে। বিদ্যমান করের হার কমানো হলে জমি কেনাবেচার ক্ষেত্রে প্রকৃত মূল্য দেখাতে মানুষ আগ্রহী হবে। তাতে পাচার কমার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আরও বাড়ার সুযোগ থাকে। এ বিষয়ে একটি করণীয় নির্ধারণ করা যেতে পারে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দেশের টাকা বিদেশে পাচারের ফলে আমাদের অর্থনীতির অপূরণীয় তি হচ্ছে। সুশাসনের অভাবে এর মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। অপরাধীরা অপরাধ করেও আইনের মারপ্যাঁচে পার পেয়ে যায়। ফলে এ ধরনের অর্থনৈতিক অপরাধের মাত্রা বাড়ছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থপাচার হওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। দেশের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। এ জন্য আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

No comments:

Post a Comment