পৃষ্ঠাসমূহ

Tuesday, October 9, 2018

স্বপ্নগুলি প্রায়ই ইতিবাচক আবেগ নিয়ে আসে



রাগ, জিদ, ঘৃণা, ভালোবাসা সবই আবেগের প্রকাশ। আর আবেগ মূলত অনুভূতির প্রকাশ। কিছু আবেগ আছে যা আমরা ভালো বলি আবার কিছু আবেগ আছে যা আমরা খারাপ মনে করি। কিন্তু খারাপ আবেগ সবসময় নেতিবাচক নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই খারাপ আবেগ থেকে ভালো কিছু পাওয়া সম্ভব। এমন কিছু নেতিবাচক আবেগ যার রয়েছে ইতিবাচক প্রভাব তা জেনে নিন।

১। মন খারাপঃ-

মন খারাপ হওয়া মানে হতাশা নয়
। মনস্তত্ত্ববিদ জসেফ ফরগাস মনে করেন, মন খারাপ আমাদের আরো বেশি মনোযোগী করে তোলে। মন খারাপ যেকোনো কিছু আরো বেশি গভীরভাবে চিন্তা করার সুযোগ তৈরি করে দেয়। শুধু তাই নয় এটি স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে। এমনকি যে কোনো বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সাহায্য করে। এছাড়া মন খারাপ নাহলে প্রচণ্ড খুশির মুহূর্তগুলিকে আলাদা করে চেনা যায় না।

২। হতাশাঃ-

হতাশাকে যে কোনো ব্যার্থতার অন্যতম কারণ
মনে করা হয়। মনোবিজ্ঞানী জুলি নোরিম মনে করেন, “ নেতিবাচক চিন্তা উদ্বিগ্নতার বা হতাশার সৃষ্টি। একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষ সবচেয়ে খারাপটা চিন্তা করে থাকেন। আর এই খারাপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। যা থেকে সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে”। হতাশা আমাদের দরকার আছে যাতে অনেক খারাপ হলে আমরা সেটিকে গ্রহণ করতে পারি।

৩। রাগঃ-

রাগকে আমরা খারাপ হিসেবে ধরে থাকি। কিন্তু এই রাগেরও কিছু ভাল দিক আছে। রাগ কখনো ভিতরে রেখে দিতে নেই। এটি স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর। রাগ প্রকাশ করে দিলে আপনার মন হালকা হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ রাগের প্রকাশটা কোন ব্যক্তির ওপর করা উচিত না। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন মনে করে, রাগ অনেক ক্ষেত্রে গঠনমূলক কাঠামো হিসেবে কাজ করে।

৪। কান্না করাঃ-

দুঃখের মুহূর্তগুলোতে আবেগে আমরা কেঁদে ফেলি
। অনেকে সেটিকে খারাপ আবেগ মনে করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, কান্না পেলে তা চেপে না রেখে কেঁদে ফেলা উচিত। কারণ তাহলে মন অনেক হালকা হয়ে যায়।

৫। একা থাকাঃ-

একা থাকতে অনেকেই পছন্দ করেন না। একাকী থাকলে মনের মধ্যে অনেক নেতিবাচক কথা আসে। তবে মন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কখনও কখনও একা থাকা আপনার জন্য ভাল। এটি আপনার চিন্তার গণ্ডীর বাইরে যেয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করে। যা আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তুলবে।

৬। কাল্পনিক চিন্তা ভাবনাঃ-

কখনও কখনও যুক্তিকে একপাশে সরিয়ে রেখে নানা
খেয়ালের সাগরে ডুব দিই আমরা। কিছু মানুষের মতে, নেতিবাচক মানসিকতার পাল্লা ভারী হলে এমন উদ্ভট চিন্তা মাথায় নাড়া দেয়। তবে মাঝে মাঝে বাস্তবিক চিন্তা বাদ দিয়ে কল্পনার সাগরে ডুব দেওয়া মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভাল।

৭। হিংসাঃ-

হিংসা খুব
খারাপ একটা অভ্যাস। মনস্তাত্ত্বিকবিদরা হিংসাকে
দুই ভাগে ভাগ করেন, একটি ম্যালিকিয়াস (খারাপ হিংসা)। এই ধরনের হিংসা তাকে অন্যের ক্ষতি করতে উদ্ভব করে। আরেক ধরনের হিংসা যা বেনাইন (ক্ষতিকর নয়) নামে পরিচিত। এই ক্ষেত্রে চিন্তা করা হয়, অন্যরা পারলে আমি কেনো পারবো না। আর এটি লক্ষ্যে অর্জনে সাহায্য করে। তাই, অন্যকে হিংসা করে তার ক্ষতি না করে বরং সেটাকে জিদে পরিণত করুন। আর দেখুন আপনি পৌঁছে গেছেন আপনার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
@রাজকবি
@কবিরাজ



Sunday, October 7, 2018

প্রবাদ-প্রবচন

প্রবাদ-প্রবচন

লোকসাহিত্যের বিভিন্ন শাখা রয়েছে। তার মধ্যে প্রবাদ সমকালকে সবচে বেশি স্পর্শ করে আছে। আধুনিক যুগে সব ধরনের রচনায় প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক, সংবাদপত্র, বিজ্ঞাপন, বক্তৃতা, দৈনন্দিন কথাবার্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রবাদের ব্যবহার অহরহ লক্ষ্য করা যায়। প্রবাদ লোকসাহিত্য ধারায় ক্ষুদ্রতম রচনা। ‘গরু মেরে জুতা দান’, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান বানে’, ‘অতি চালাকের গলায় দড়ি/অতি বোকার গায়ে বেড়ি’ ইত্যাদি প্রবাদে দুই শব্দের বাক্য থেকে দুই চরণের বাক্য আছে। প্রবাদ যতোই ক্ষুদ্র হোক না কেন তা পূর্ণাঙ্গ ভাব ও অর্থবহ। প্রবাদ মানুষের সামাজিক বাস্তব অভিজ্ঞতাপ্রসূত এবং মূলত বুদ্ধিপ্রধান রচনা। একটি প্রবাদ মানুষের ব্যবহারিক জ্ঞান, অভিজ্ঞতা বা উপলব্ধি থেকে জন্ম নেয়। ‘অতি সন্যাসীতে গাজন নষ্ট’, ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’, ‘জোর যার মুলুক তার’, ‘লাগে টাকা, দিবে গৌরীসেন’, ‘কোম্পানির মাল দরিয়া মে ঢাল’, ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’ ইত্যাদি প্রবাদের আটসাঁট গড়ন, এতে বাড়তি কোন বিষয় নাই। স্বল্প কথায় খুব বেশি অর্থ বহনক্ষমতা। প্রবাদের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো বিশেষ উক্তি বা কথন। যে উক্তি লোক পরস্পরায় জনশ্রুতিমূলকভাবে চলে আসছে তাই প্রবাদ। প্রবাদ ভাঙে না বা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ অথবা ধান ভানতে মহীপালের গীত’ প্রবাদটির মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন হয়নি। ‘শিব’ কৃষিদেবতা, ‘মহীপাল’ বাংলার পাল বংশের একজন শক্তিশালীরাজা। প্রবাদের জন্মতিহাসের দিক থেকে শিব আগে। অতএব এটি মৌলিক প্রবাদ, শিবের স্থলে মহীপাল পরে যুক্ত হয়েছে। সাধারণ কাজে বড় বিষয়ের অবতারণা করলেই প্রবাদ বলা হয়। ‘কোম্পানির মাল দরিয়া মে ঢাল’ অথবা ‘সরকারের মাল দরিয়া মে ঢাল’ প্রবাদে কোম্পানির সরকার শব্দের স্থানবদল হয়েছে। ‘সরকার’ ও ‘দরিয়া’ ফার্সি শব্দ, ‘কোম্পানি’ ইংরেজি শব্দ। ফার্সি ভাষার সঙ্গে বাংলার মানুষের আগে পরিচয় হয়েছে, ইংরেজি ভাষার সঙ্গে পরে পরিচয় হয়েছে। সুতরাং সরকারযুক্ত প্রবাদটি মৌলিক।

জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তৈরি জনপ্রিয় অর্থবহ উক্তিকে প্রবাদ বলে। ভাষা বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয় বলে প্রবাদ ভাষাকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলে। প্রবাদ বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। Proverb যেমন ইংরেজি ভাষার সম্পদ তেমনি প্রবাদ বাংলা ভাষার সম্পদ। দার্শনিক বেকন প্রবাদের মধ্যে একটি জাতির মেধা, বুদ্ধির চৈতন্যের প্রতিফলন দেখেছেন। তিনি বলেন, the genius, wit and spirit of a nation are discovered by their proverbs। আর্চার টেলর প্রবাদ বিষয়ে সংজ্ঞার্থে বলেছেন- A proverb is aterse did active statement that is currentintradition or as an epigram says, the wisdom of many and the wit of one অর্থাৎ তাঁর মতে, প্রবাদ হলো ঐতিহ্যাশ্রিত নীতিশিক্ষামূলক নিটোল উক্তি। তিনি আরও বলেন, প্রবাদে একের বুদ্ধির বহুর জ্ঞান নিহিত আছে। ডবলিউ সি হ্যাজলিট প্রবাদকে লোকমনে ব্যাপ্ত সত্যের প্রকাশ বলেছেন অলংকার ছন্দের ভাষায় তা ব্যক্ত করা হয়। উপরের সংজ্ঞা থেকে প্রবাদ সম্পর্কে কতকগুলো তথ্য পাওয়া যায়। যেমন: প্রবাদে জাতির ‘দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, ‘পরিণত বুদ্ধি’, নীতিবাক্য’, ‘নৈতিকতার অলিখিত বিধি এবং ‘লোকমনে প্রভাহিত সত্যকথন’ প্রকাশিত হয়। প্রবাদের অবয়ব হলো ‘একটি সংক্ষিপ্ত বাক্য’, ‘স্ফটিকীকৃতরূপ’ ও ‘শব্দগুচ্ছের সমন্বয়’। প্রবাদ ঐতিহ্যাশ্রিত। প্রবাদ উপমা, বক্রোক্তি, বিরোধাভাস, অতিশয়োক্তি অলংকারের ভাষায় প্রকাশিত হয়।



প্রবাদের অর্থগত প্রকরণ

বিভিন্নভাবে প্রবাদের প্রকরণ হতে পারে। যেমন :

১. নীতিকথামূলক : ধর্মের কল বাতাসে নড়ে, সত্যের জয় হয়।

২. ইতিহাসমূলক কথা : ধান ভানতে শীবের গীত।

৩. সাধারণ অভিজ্ঞতামূলক : দশের লাঠি একের বোঝা। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে।

৪. চরিত্রমূলক : গায়ে মানে না আপনি মোড়ল।

৫. সমাজমূলক : মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। মরলে শহিদ বাঁচলে গাজি।

৬. কাহিনিমূলক : অতি লোভে তাঁতি নষ্ট।

৭. সমার্থকমূলক : কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি।

৮. পরস্পর বিরোধিমূলক : দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ। অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট।

৯. ক্রিয়াহীন : আপন ভাল তো জগৎ ভাল।



প্রবাদের বাক্যগত গঠন

১. পূর্ণবাক্য : মরা হাতিও লাখ টাকা। এক হাতে তালি বাজে না। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।

২. খণ্ডবাক্য : ঘরের শত্রু বিভীষণ। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত ।

৩. বহুখণ্ডবাক্য : কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরালে পাজি। অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর।



বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত প্রবাদ (প্রবাদ-প্রবচন, অর্থ ও বাক্যরচনা)



১. অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ (ভক্তি শ্রদ্ধার মাত্রা বেশি হলে সন্দেহ জাগে যে এর পেছনে হয়তো স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্য আছে) চেয়ারম্যানের সাগরেদদের দেখলেই বোঝা যায় তাদের মতলব খারাপ-কেনা জানে অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।

২. অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস পায় (চর্চাহীন থাকলে অর্জিত জ্ঞানও হ্রাস পায়) কতদিন কবিতা পড়া নাই, আমাকে অনুরোধ কর না জানইত অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস পায়।

৩. অতি দর্পে হত লংকা (অহংকারের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে পতন অবশ্যম্ভাবী) ধনের গৌরবে তোমার যেন মাটিতে পা পড়ে না, এ কথাতো জানো অতি দর্পে হত লঙ্কা।

৪. অতি বাড় বেড়ো নাকো ঝড়ে পড়ে যাবে (অহংকার বেশি করতে গেলে পতন অবশ্যম্ভাবী) মামা এসপি হয়েছে বলেই অতি বাড় বেড়ো না একদিন অপরাধী ঠিকই ঝড়ে পড়বে।



৫. আঙুল ফুলে কলা গাছ (সামান্য অবস্থা থেকে হঠাৎ বড়লোক হওয়া) রহমত সরকারি চাকরি পেয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছিল, দুর্নীতির দায়ে এখন তার জায়গায় শ্রী ঘরে।

৬. আঠার মাসে বছর (দীর্ঘসূত্রিতা/কুঁড়ে স্বভাব) কাজটি আমার তাড়াতাড়ি দরকার, তোমাকে দিয়ে হবে না, তোমার তো আঠার মাসে বছর।

৭. আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো (খুব প্রাচীন ব্যক্তি) অল্প বয়সেই বলছ-আদ্যিকালের বদ্যি বুড়ো।

৮. আপন ভালো তো জগৎ ভালো (নিজে ভাল হলে সব ভালো) অচেনা জায়গা বলে ভয় পাবার কিছু নাই, মনে রেখ আপন ভালো তো জগৎ ভালো।

৯. আদার ব্যাপারির জাহাজের খবর (সামান্য কাজের লোক) সামান্য কেরানি হয়ে অফিসের নীতি নির্ধারণী বিষয় নিয়ে মাথা খাটানো আর আদার ব্যাপারির জাহাজের খবর নেয়া সমান কথা।

১০. আমড়া কাঠের ঢেঁকি (অকর্মণ্য) তুমি আস্ত একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি, জগৎ সংসারে কিছুই তোমাকে দিয়ে হবে না।

১১. আপন চেয়ে পর ভালো (অপ্রত্যাশিত কারো সাহায্য লাভ) এই বিপদে স্বজনদের কারো সাহায্যই পাইনি, তুমিই আমাকে উদ্ধার করেছ এখন দেখছি আপন চেয়ে পর ভালো।

১২. আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া (দুর্লভবস্তু নাগালের মধ্যে পাওয়া) এই দুর্মূল্যের বাজারে টাকা ধার পাওয়া আর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া সমান কথা।

১৩. আকাশ থেকে পড়া (অপ্রত্যাশিত) বিশ্বস্থ কর্মচারীর দুর্নীতির কথা জানতে পেরে বড় সাহেব আকাশ থেকে পড়লেন।

১৪. আপনার নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ (নিজের ক্ষতি করেও অপরের অনিষ্ট করা) বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুধু বিরোধীতার স্বার্থে বিরোধীতা এখানে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার লোকের অভাব নাই।

১৫. আকাশ পাতাল প্রভেদ (প্রচুর ব্যবধান) চৌধুরী বংশ ও সর্দ্দার বংশের মধ্যে আকাশ পাতাল প্রভেদ, ওদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠা সহজ নয়।

১৬. আপন চরকায় তেল দাও (কেউ অনধিকার চর্চা করলে, তাকে একথা বলে সতর্ক করা হয়) বন্ধুর পারিবারিক সমস্যায় নাক না গলিয়ে নিজের চরকায় তেল দাও।


১৭. ইচ্ছে থাকলে উপায় হয় (উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ইচ্ছাই যথেষ্ট) পরিবেশ যতই প্রতিকূল হোক না কেন কাজে নেমে পড়, জানতো ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।

১৮. ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয় (কারো সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে বিনিময়ে দুর্ব্যবহার পেতে হয়) অন্যকে অপমান করার আগে স্মরণ রেখ ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়।

১৯. ইল্লত যায় না ধুলে, স্বভাব যায় না মলে (যার যা স্বভাব তা সে কিছুতেই ছাড়তে পারে না) সন্ত্রাসীদের বারবার উপদেশ দিয়েও সুপথে আনা গেলো না আসলে ইল্লত যায় না ধুলে, স্বভাব যায় না মলে।

উ/ঊ

২০. উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে (একের দোষ অন্যের ঘাড়ে দেওয়া) যুদ্ধাপরাধীরা যতই উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতে চাকনা কেন, জাতি এবার বিচার চায়।

২১. উঠন্তি মূল পত্তনেই চেনা যায় (ভবিষ্যতের আভাস শুরুতেই মেলে) তুমি জীবনে অনেক বড় হতে পারবে, উঠন্তি মূল পত্তনেই চেনা যায়।

২২. উড়ে এসে জুড়ে বসা (যার ন্যায়সঙ্গত কোন দাবি) ভূমিহীনদের বঞ্চিত করে চৌধুরী সাহেব খাস জমিতে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন।

২৩. উন বর্ষায় দুনো শীত (অল্প কাজে অধিক লাভ) শেয়ার বাজারে লগ্নি করে মানুষ হঠাৎ বড়লক হবার স্বপ্ন দেখছে, রখানে উন বর্ষায় দুনো শীত।
২৪. উনা ভাতে দুনা বল (অল্প আহার স্বাস্থ্যসম্মত) স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হলে জানতে উনা ভাতে দুনা বল।



২৫. এক ঢিলে দুই পাখি মারা (একসঙ্গে দুই কাজ সমাধা করা) বহুদিনের শত্রুতা ভুলে রহিম জোয়ার্দ্দার সর্দ্দার বংশে ছেলের বিয়ে দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার পরিকল্পনা করেছেন।

২৬. এক মাঘে শীত যায় না (বিপদ একবার এসেই শেষ হয় না) আমার এ বিপদে আমাকে একলা ফেলে চলে যেও না, মনে রেখ এক মাঘে শীত যায় না।

২৭. এক হাতে তালি বাজে না (সব দ্বন্দ্বেই দুপক্ষের দায়িত্ব থাকে) নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে তোমার কোন লাভ নাই আমরা জানি এক হাতে কখনও তালি বাজে না।



২৮. ওস্তাদের মার শেষরাতে (যথার্থ ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত সফল হয়) জাহিদ শেষ পর্যন্ত নাটক প্রদর্শনীতে আমাদের গ্রুপের মান রক্ষা করল, আসলে ওস্তাদের মার শেষরাতে একথা মিথ্যা না।



২৯. কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না (সাফল্যের পেছনে সাধনার প্রয়োজন) ব্যারিস্টার হবে অথচ পরিশ্রম করবে না, তা কি হয়? কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে?

৩০. কয়লা ধুলে ময়লা যায় না (অসৎ লোক সৎ উপদেশেও কাজ হয় না) কাল টাকা সাদা করলেই কি দুর্নীতিবাজ ভালো হয়, আসলে কয়লা ধুলে ময়লা যায় না।

৩১. কত ধানে কত চাল (পরিণাম) কত ধানে কত চাল একথা বুঝে তার পরে কাজে হাত দাও।

৩২. কথায় চিড়ে ভেজে না (বাকচাতুরিতে সব কাজ হাসিল হয় না) সরকারি দপ্তরে এখন আর কথায় চিড়া ভেজে না কাজের অনুমোদন পেতে নগদ অর্থের প্রয়োজন হয়।

৩৩. কারো পোষমাস কারা সর্বনাশ (কারো সুদিন কারো দুর্দিন) চিরদিন কারো কি সমান যায়, কারো পোষমাস কারো সর্বনাশ এতো প্রকৃতিরই নিয়ম।

৩৪. কাঙালের কথা বাসি হলে ফলে (নগণ্য লোকের কথাও শেষ পর্যন্ত ফলতে পারে) আগেই বলছি ওদের মতো দুষ্ট ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করো না-মনে রেখ কাঙালের কথা বাসি হলে ফলে।


৩৫. খাল কেটে কুমির আনা (নিজের জন্য বিপদ সৃষ্টি করা) বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ মতো চলা আর খাল কেটে কুমির নিয়ে আসা সমান কথা।

৩৬. খোদার মার দুনিয়ার বার (প্রাকৃতিক কারণে যা ঘটে তা রোধ করার শক্তি মানুষের নাই) খোদার মার দুনিয়ার বার তাই ভেবে বসে থাকলে তো আর জগৎ সংসার চলবে না মানুষকে কাজ করে যেতেই হবে।

৩৭. খুঁটির জোরে ভেড়া নাচে (শক্তিমানের সাহায্যে শক্তি বৃদ্ধি হয়) শুধু ছাত্রদের দোষারোপ করলে চলবে না, মুরুব্বিরাজনীতিবিদদের আস্কারাতেই নেতাকর্মীরা শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাস করতে সাহস পায়, খুঁটির জোরে ভেড়া নাচে।

৩৮. খালিকলসি বেশি শব্দ করে (অন্তঃসারশূন্য) টেলিভিশনের টক শোগুলো দেখলে মনে হয় খালিকলসি শব্দ করে বেশি।

৩৯. খিদে পেলে বাঘেও ধান খায় (প্রয়োজনে মানুষ যেকোনো কাজ করতে বাধ্য হয়)রহিমকে শেষ পর্যন্ত আতাহার সাহেবের কাছেই ধর্না দিতে হলো, খিদে পেলে বাঘেও যে ধান খায়।



৪০. গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না (নিজের দেশে গুণীর কদর নাই) আমাদের দেশে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না বলেই যোগ্য মানুষ গড়ে ওঠে না।

৪১. গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল (গ্রামবাসী না মানলেও নিজেকে কর্তা বলে জাহির করা) কাজ কাম করার নাম নাই গায়ে মানে না আপনি মোড়লের মত দেশ উদ্ধার করতে নেমেছ, তাই না?

৪২.
গরু মেরে জুতা দান (নিদারুণ অপমান করে পরে সামান্য উপায়ে তুষ্ট করার চেষ্টা) বড় সাহেবের কাছে কান কথা লাগিয়ে এখন এসেছ সান্তনা দিতে? তোমার গরু মেরে জুতা দানে আমার কোন প্রয়োজন নাই।

৪৩. গাছে তুলে মই কেড়ে নেয়া (আশা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করা) যৌথ কারবারে টাকা লগ্নি করবে বলেই ব্যবসা শুরু করেছিলাম, গাছে তুলে এখন তুমি মই কেড়ে নিচ্ছ কেন?

৪৪. গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল (ভবিষ্যতের অতিরিক্ত আশা) গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল লাগিয়ে সময় নষ্ট না করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি নাও।

৪৫. গোদের ওপর বিষফোঁড়া (ঝামেলার ওপর আরও ঝামেলা) কলেজে পরীক্ষা অন্যদিকে বউয়ের অসুখ আশরাফ সাহেবের গোদের উপর বিষফোঁড়া ওঠার অবস্থা।


৪৬. ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি (মন্দ লোককে জব্দ করা) ভেবেছ মোটা অংকের লাভের লোভ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে পালাবে, ঘুঘু দেখছ ঘুঘুর ফাঁদ দেখনি, দেখাচ্ছি মজা।

৪৭. ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় (বিপদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে অল্পতেই শঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক) একবার প্রতারণার শিকার হয়ে লুৎফর আর এনজিওর কথা শুনতে পারে না, ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়।

৪৮. ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো (বিনা লাভে কোন কর্ম করা) আমাদের সমাজে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো লোকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।

৪৯. ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া (গুরুজনদের অগ্রাহ্য করে অর্বাচীনদের মাতব্বরি) বিয়ে করতে হলে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া বাদ দিয়ে তোমার বাবা মাকেই সঙ্গে নিয়ে এসো।

৫০. ঘোমটার নিচে খেমটা নাচ (বাইরে সাধু ভিতরে খল) আদর্শের কথা ভুলে সমাজে এখন অনেকেই ঘোমটার নিচে খেমটা নাচ নাচতে শুরু করেছে।



৫১. চকচক করলেই সোনা হয় না (বাহ্যিক সৌন্দর্যই প্রকৃত পরিচয় নয়) জিন্স সার্ট পরলেই প্রগতিশীল হয় না, মনের খবর নাও, মনে রেখ চকচক করলেই সোনা হয় না।

৫২. চোরে চোরে মাসতুত ভাই (প্রতারকরা পরস্পরকে সমর্থন করে) উপর উপর বিরোধ দেখালে হবে কী আসলে ওরা সবাই চোরে চোরে মাসতুত ভাই।

৫৩. চেনা বামুনের পৈতা লাগে না (যার যোগ্যতা জানা আছে, তার সম্পর্কে সুপারিশ লাগে না) চেনা বামুনের পৈতা লাগে না, তুমি এসেই কাজে যোগ দাও।

৫৪. চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি (অসৎ ব্যক্তি ভাল উপদেশ গ্রহণ করে না) দুর্নীতিবাজদের কাল টাকা সাদা করতে বলে লাভ কী, চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি এতো জানা কথা।



৫৫. ছেলের হাতের মোয়া (সহজলভ্য বস্তু) শিক্ষানীতি ছেলের হাতের মোয়া নয়, তার জন্য জাতীয় আদর্শ নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয়।

৫৬. ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি (দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির জন্য ব্যাকুলতা) ভর্তি বাণিজ্যের এ যুগে নেতা-পাতিনেতাদের চাপে আশরাফ সাহেব একেবারে কাহিল-তাঁর এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা।

৫৭. ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা (অসম্ভব কল্পনা করা) সরকারি চাকরি করে ঢাকা শহরে বাড়ি বানানোর চিন্তা করা আর ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা সমান কথা।



৫৮. জলে কুমির ডাঙায় বাঘ (উভয় দিকে বিপদ) একদিকে সন্ত্রাসীদের হুমকি অন্যদিকে পুলিশের নজরদারি আমারতো জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ অবস্থা।

৫৯. জাতে মাতাল তালে ঠিক (বেহিসেবির মতো দেখালেও প্রকৃতপক্ষে হিসেবি) ছন্নছাড়ার মত জীবন যাপন করলেও রশিদ ঢাকায় ফ্ল্যাট এবং ব্যাংকে মোটা অংকের সঞ্চয় করে রেখেছে। আসলে সে জাতে মাতাল তালে ঠিক।

৬০. জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ (প্রভাবশালী ব্যক্তির অধীনে থেকে তার সঙ্গে বিবাদ) প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে বসের সঙ্গে পোদ্দারি করা আর জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে বিবাদ করা সমান কথা।

৬১. জ্বলন্ত আগুনে ঘি দেওয়া (উত্তেজনা বৃদ্ধি করা) চাকরি হারিয়ে যারা অনশন করছে তাদের উপর লাঠিচার্য করে পুলিশ জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে।



৬২. ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি ফলে (কাজ আপনা আপনি হয়ে যায়, চালাক লোক বাহাদুরি নেয়) কার সুপারিশে চাকরি হলো বোঝা দায়, আসলে ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি ফলে।

৬৩. ঝিকে মেরে বউকে শেখানো (ইশারায় তিরস্কার) ঝিকে মেরে বউকে শেখানোর জন্যই প্রধানমন্ত্রী ছাত্রনেতাদের তিরস্কার করলেন, আসলে তাঁর লক্ষ্যই ছিল মন্ত্রীরা।

৬৪. ঝোপ বুঝে কোপ মারা (সুযোগের সদ্ব্যবহার করা) সবাই তোমার মত অথর্ব নয়, ঝোপ বুঝে কোপ মারার লোকের এখন অভাব নাই।





৬৫. টাকায় বাঘের দুধ মেলে (অর্থের জোরে সবকিছু করা যায়) টাকায় এখন বাঘের দুধ মেলে আর তুমি কিনা অফিস ডেকোরেশনের চিন্তায় দিশেহারা হতে বসেছ।



৬৬. ঠেলার নাম বাবাজি (চাপে পড়ে কাবু হওয়া) যত ক্ষমতাধারী স্বৈরাচারীই হোক না কেন জনগণের দাবির কাছে নতি স্বীকার করতেই হবে। যান না যে ঠেলার নাম বাবাজি।



৬৭. ডানায় ভর দিয়ে চলা (শূন্যলোকে ভাসা) পরীক্ষা শেষ করেতো ডানায় ভর দিয়ে চলছ, ভর্তি কর্ম অনুশীলন নিতে হবে সে কথা কী ভুলে গেছ?

৬৮. ডুবে ডুবে জল খাওয়া (গোপনে কাজ করা) ডুবে ডুবে জল খেয়ে যে আমার বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করছে একথাতো ঘুর্ণাক্ষরেও জানতে পারেনি।



৬৯. ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে (সবখানে একই কাজ করা) ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে মাস্টারি করি বলে বিয়ে বাড়িতে এসেও অংক কষতে হবে একথা প্রমাণ করার জন্য?

৭০. ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয় (পরের অনিষ্ট করলে নিজেরও অনিষ্ট হয়) কারো বিরুদ্ধে কুৎসারটানোর আগে ঢিলটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয় প্রবাদটি স্মরণে রেখ।

৭১. ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার (শূন্য হাতে বাহাদুরি) বল নাই ব্যাট নাই বাবু চললেন খেলতে, যেন ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দ্দার।



৭২. তিলকে তাল করা (সামান্য বিষয়কে বাড়িয়ে গুরুতর করা) দুইবন্ধুর মনোমালিন্য নিয়ে তিলকে তাল না বানিয়ে মিটমাট করে নাও, তাতেই মঙ্গল।

৭৩. তেলা মাথায় তেল দেওয়া (ধনীর খোশামোদ করা) তেলা মাথায় তেল দেওয়া মানুষেরই স্বভাব, চৌধুরী সাহেবের কথা বাদ দিয়ে আমার মত অভাজনের কথা তুমি কেন রাখবে?



৭৪. দশের লাঠি একের বোঝা (দশজনের পক্ষে যা করা সহজ একজনের পক্ষে তা করা অতি কঠিন) দশের লাঠি একের বোঝা এ কথা মনে রেখেই গণ শিক্ষা বিস্তার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।

৭৫. দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ (ঐক্যবদ্ধ হওয়াই আসল কৃতিত্ব) ‘দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ’ এই মন্ত্রে জেগে ওঠ-এসো আরো একবার রুখে দাঁড়াই অশুভ চক্রের বিরুদ্ধে।

৭৬. দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পোষা (শত্রুকে যত্নে লালন পালন করা) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করা আর দুধকলা দিয়ে কালসাপ পোষা সমান কথা।

৭৭. দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল (দুর্জন সঙ্গীর চেয়ে নিঃসঙ্গ থাকা অধিকতর বাঞ্ছনীয়) অনেক দিনইতো দেখা হলো এবার তোমরা বিদায় হও, আমার জন্য দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়ালই ভাল।

৭৮. দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো (ভালোর অভাব মন্দ দিয়ে পূরণ) অতিথি শিল্পীর অনুপস্থিতিতে স্থানীয়দের দিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করে আয়োজকেরা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালেন।



৭৯. ধরি মাছ না ছুঁই পানি (দায়িত্ব পালন না করে সুখ ভোগ) বুড়ো বাবার কাঁধে চাপিয়ে আর কত দিন ধরি মাছ না ছুঁই পানি করে সংসার চালাবে, এবার নিজের কাঁধে বোঝা নাও।

৮০. ধর্মের কল বাতাসে নড়ে (সত্য আপনা আপনিই প্রকাশ পায়/ অন্যায়ের শাস্তি দৈবক্রমেই হয়) স্ত্রীকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে শেষ রক্ষা হলো না রহিমের, আসলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।

৮১. ধরাকে সরা জ্ঞান করা (অহঙ্কারী হওয়া) এখন এমন পাশের ছড়াছড়ি আর তুমি কিনা আই এ পাশ করেই ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করেছ?



৮২. নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা (নিজের অপারগতা অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা) মামা খালু না থাকলে শুধু যোগ্যতাই চাকরি হয় না একথা বল না, নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা সবাই বলে।

৮৩. নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল (একেবারে না থাকার চেয়ে কম থাকা ভাল) অভাবের সংসারে আর কিছু না থাক-মাথা গুজার ঠাঁইটুকুই তো নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল।

৮৪. নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো (নিশ্চিন্তে দিন কাটানো) প্রতিযোগিতার এ বাজারে নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো বাদ দিয়ে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোল।

৮৫. নুন আনতে পান্তা ফুরায় (প্রবল দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটানো) নুন আনতে পান্তা ফুরায়, আমাদের কী বড়লোকি চাল মানায়?



৮৬. পাকা ধানে মই দেওয়া (প্রায় সমাপ্ত কাজ নষ্ট করা) তোমার সম্মতি পেলেই বিয়েটা হয়ে যাবে, তুমি আবার পাকা ধানে মই দিও না।

৮৭. পচা শামুকে পা কাটা (তুচ্ছ কারণে বিপন্ন হওয়া) মৌলবাদিদের কথায় নাটক বন্ধ করব কেন? পচা শামুকে পা কাটলে কি কেউ হাঁটা বন্ধ করে?



৮৮. ফাঁদে পা দেওয়া (চক্রান্ত না বুঝে বিপদে পড়া) বিশ্বাস করে ফাঁদে পা দিয়েছ এখনতো প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে।

৮৯. বানরের গলায় মুক্তোর মালা (অযোগ্য লোককে মূল্যবান বস্তু দান) ওর মতো অসৎ ছেলের সঙ্গে বোনের বিয়ে দেয়া আর বানরের গলায় মুক্তোর মালা দেয়া সমান কথা।

৯০. বামন হয়ে চাঁদে হাত (সাধারণ ব্যক্তির অসাধারণ বস্তু লাভের আশা) টাকার খেলায় নির্বাচনে গরিবের প্রার্থী হতে চাওয়া বামন হয়ে চাঁদে হাত দিতে চাওয়া সমান কথা।



৯১. ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ (বাজে কাজে অর্থ ব্যয় করা) তার লেখা পড়ার জন্য টাকা খরচ করা আর ভূতের বাপের শ্রাদ্ধ সমান কথা, তার চেয়ে ভাল এখন থেকেই কোন কাজে লাগিয়ে দাও।

৯২. ভিটেয় ঘুঘু চড়ানো (চরম সর্বনাশ করে দেওয়া) নির্বাচনে জয়ী হয়েই প্রতিশোধ নিতে বিরোধী পক্ষের ভিটেয় ঘুঘু চড়ানোর রেওয়াজ শুরু হয়েছে আমাদের দেশে।



৯৩. মায়ের কাছে মামার বাড়ির গল্প (কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ লোককে সে বিষয়ে নতুন করে জানানোর চেষ্টা) দলছুট পান্ডাদের কথা আমাকে আর নতুন করে বলতে হবে না, আমি সবই জানি, মায়ের কাছে মামার বাড়ির গল্প করে কী লাভ?

৯৪. মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া (কিংকর্তব্যবিমূঢ় হওয়া) বিদেশে যাওয়ার টাকা ফেরৎ না পেয়ে কুদ্দুসের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।

৯৫. মেঘে মেঘে বেলা হওয়া (বয়স বেড়ে যাওয়া) মেঘে মেঘে বেলা বেড়ে গেছে এবার সংসারের দায়িত্বটি কাঁধে নাও।



৯৬. যত গর্জে তত বর্ষে না (শূন্য আস্ফালন) বাচাল মানুষকে কেউই সহজে বিশ্বাস করতে চায় না বরং ভাবে যত গর্জে তত বর্ষে না।

৯৭. যত দোষ নন্দ ঘোষ (দুর্বলের ওপর সবকিছুর দোষ চাপানো) অফিসে যাই হোক না কেন সবাইত পিয়নটাকেই সন্দেহ করে যেন যত দোষ নন্দঘোষ।

৯৮. যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা (ধৃষ্টতা) হাসিব সাহেব অফিসের পিয়নের যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা শুনেরীতিমত বিস্মিত হলেন।

৯৯. যেমন বুনোরল তেমনি বাঘা তেঁতুল (বড় অপরাধীর কঠিন শাস্তিদাতা) যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি কোন করুনা নয়, বরং যেমন বুনোরল তেমন বাঘা তেতুল হতে হবে।

১০০. যে সহে সে রহে (ধৈর্যধারণ করে থাকতে পারলে কখনও বিনাশ হয় না) অল্পতে অতিষ্ট হয়ো না, মনে রেখ যে সহে সে রহে।

১০১. যেমন কুকুর তেমন মুগুর (যার যেমন স্বভাব, তাকে সেভাবে শায়েস্তা করা) দুষ্টের দমন করতে যেমন কুকুর তেমন মুগুর না হলে চলে না।



১০২. রতনে রতন চেনে (এক মন্দ ব্যক্তি আরেক ব্যক্তির মন্দত্ব সহজেই বোঝে) আজহারই পারবে ফেরদৌসের কুকীর্তির তথ্য হাজির করতে কারণ রতনে রতন চেনে।

১০৩. লাভের গুড় পিঁপড়েয় খায় (সামান্য লাভ করতে গিয়ে অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া) বেশি লোভ করো না, শেষে লাভের গুড় পিঁপড়ে খাবে।



১০৪. শাক দিয়ে মাছ ঢাকা (ব্যর্থ চেষ্টা করা) অপরাধ করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করো না, তাতে বরং অমঙ্গলই হবে।

১০৫. শাপে বর হওয়া (যা মন্দ ভাবা হয়েছিল আসলে তা ভাল হওয়া) কুৎসা রটিয়ে বিরোধী পক্ষের কোন লাভ হলো না বরং সত্য জেনে এখন আফসার সাহেবকেই সবাই বাহবা দিচ্ছে-একেই বলে শাপে বর হওয়া।

১০৬. শিকারি বেড়াল গোঁফ দেখে চেনা যায় (হাবভাব দেখেই উদ্দেশ্য বোঝা যায়) অভিজ্ঞ মানুষ মানুষ চিনতে ভুল করে না কারণ শিকারি বেড়াল গোঁফ দেখে চেনা যায়।



১০৭. সাবধানের মার নাই (সতর্কতার বিপদ নাই) সাবধানের মার নাই-বাক্যটি প্রবাস জীবনে স্মরণ রেখ।

১০৮. সাতেও নাই পাঁচেও নাই (নিরপেক্ষ) সংসারে সাতেও নাই পাঁচেও নাই এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর।

১০৯. হক কথার মার নাই (সত্য কথা বললে লাভবান হওয়া যায়) আলোকিত মানুষ মাত্রই জানে, হক কথার মার নাই।

১১০. হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা (সুযোগ গ্রহণ না করা) হাতের লক্ষ্মী পায়ে না ঠেলে চাকরিটাই আপাতত যোগদান কর।


বাংলা বাগধারা


বাগধারা

বাগধারা ভাষায় বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয় বলে বাগধারা ভাষাকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলে। বাগধারা বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। বাগধারার আছে আলাদা প্রকাশভঙ্গি। বাক্যরীতি থেকে বাগভঙ্গি, সব ক্ষেত্রেই এর নিজস্ব শৈলী। যে শব্দ বা শব্দগুচ্ছ দিয়ে বিশেষ অর্থ প্রকাশ পায় তাকে বাগধারা বলে। বাগধারায় এমন একটি শক্তি আছে যা সাধারণ অর্থে বোঝা যাবে না। যেমন: ‘গোবরগণেশ, বিড়ালতপস্বী, গোবরে পদ্মফুল, ঘোড়ার ডিম, কই মাছের প্রাণ। বাগধারা তিন প্রকারে ভাব প্রকাশ করে থাকে। যেমন:

১. বাচ্যার্থ: শব্দের মুখ্য অর্থকে বাচ্যার্থ বলে। যেমন: ঈশ্বর, নদী, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদি।

২. লক্ষ্যার্থ: যখন কোন শব্দ মুখ্য অর্থ ছাড়া অন্য অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে লক্ষ্যার্থ বলে। যেমন: ‘গোপালের লেখাপড়ার গা নাই’। (গাত্র>গা) ‘গা’ শব্দের মুখ্য হলো দেহ’ কিন্তু এখানে বাচ্যার্থে বা মুখ্যার্থে ব্যবহৃত না হয়ে লক্ষ্যার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এই বাক্যে ‘গা’ শব্দের লক্ষ্যার্থ হলো ‘ইচ্ছা’।

৩. ব্যাঙ্গ্যার্থ: যখন কোনো শব্দ বা শব্দসমষ্টি বাচ্যার্থ বা লক্ষ্যার্থ প্রকাশ না করে অন্য একটি নতুন গভীর ব্যঞ্জনাপূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে ব্যাঙ্গ্যার্থ বলে। যেমন: ‘রমেশ বাবুর ছেলে একটা অকালকুষ্মাণ্ড।’ ‘অকাল-কুষ্মাণ্ডের’ ব্যাঙ্গ্যার্থ হলো ‘অপদার্থ’।

সুতরাং লক্ষ্যার্থ ও ব্যাঙ্গার্থযুক্ত শব্দ বা শব্দসমষ্টি অথবা বাক্যাংশকে বাগধারা বলে।



বাগধারা ও প্রবাদের মধ্যে পার্থক্য দেখাও।

বাগধারা ও প্রবাদের মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন :

১. যে শব্দ বা শব্দগুচ্ছ দিয়ে বিশেষ অর্থ প্রকাশ পায় তাকে বাগধারা বলে। আর বিশেষ অর্থে প্রকাশিত উক্তি বা কথনকে প্রবাদ বলে।

২. বাগধারা লোকমুখ হতে সৃষ্টি হয়েছে। আর প্রবাদ চিন্তাশীল ব্যক্তি ও লেখক হতে সৃষ্টি হয়েছে।

৩. বাগধারা জনপ্রিয় বা ছন্দবদ্ধ উক্তি নয়। আর প্রবাদ জনপ্রিয় বা ছন্দবদ্ধ উক্তি।

৪. বাগধারা হলো অলংকারহীন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ। আর প্রবাদ হলো অলংকারসমৃদ্ধ সংক্ষিপ্ত বাক্য।

৫. বাগধারায় পুরো বুদ্ধির ছাপ নাই। আর প্রবাদে পুরো বুদ্ধির ছাপ আছে।

৬. বাগধারার অর্থ অতি সহজে বুঝা যায় না তাই এটি একটু জটিল। আর প্রবাদের অর্থ অতি সহজে বুঝা যায় তাই এটি সহজ সরল, ছন্দবদ্ধ, মিলেবদ্ধ, স্পষ্ট হয়।


বাগধারা গঠন


বিভিন্নভাবে বাগধারা গঠিত হতে পারে। যেমন:

১. বিশেষ্য + বিশেষ্য=গোবর গণেশ

২. বিশেষ্য + বিশেষণ=বকধার্মিক

৩. একাধিক বিশেষ্য + বিশেষণ=কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা, এক ঢিলে দুই পাখি মারা

৪. দ্বিত্বক্রিয়া (আ/ই-প্রত্যয় যোগে)=মাখামাখি, নাচানাচি

৫. ক্রিয়া বিশেষণযোগে=গলায় গলায় ভাব



বাগধারার ব্যবহার

বাগধারা অর্থ বাক্যরচনা



অ আ ক খ (সাধারণ জ্ঞান)— এ বিষয়ে তার অ আ ক খ জানা নাই।

অক্কা পাওয়া (মারা যাওয়া)— বৃদ্ধ লোকটি বাসের ধাক্কায় অক্কা পেয়েছে।

অকালকুষ্মাণ্ড (অপদার্থ)—ওকে দিয়ে কিছু হবে না, ও অকালকুষ্মাণ্ড।

অন্ধের যষ্ঠি (একমাত্র অবলম্বন)— যে ছিল মায়ের অন্ধের যষ্ঠি সেও অকালে মারা গেলো।

অমাবস্যার চাঁদ (অদৃশ্য)—রহিম ভালো চাকরি পেয়ে একেবারে অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেছে।



আকাশকুসুম (অসম্ভব কল্পনা)— আকাশকুসুম না ভেবে কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

আকাশ পাতাল (বড় ব্যবধান) — দুই ভায়ের আচরণ কী আকাশ পাতাল ব্যবধান!

আমড়াকাঠের ঢেঁকি (অপদার্থ)— আমড়াকাঠের ঢেঁকিকে দিয়ে কোন কাজে ভালো ফল আশা করা যায় না।

আষাঢ়ে গল্প (আজগুবি গল্প)— আষাঢ়ে গল্প শুনিয়ে কারো কাছ থেকে উপকার পাওয়ার আশা করো না।

আঙুল ফুলে কলাগাছ (হঠাৎ বড়লোক হওয়া)— অসৎ পথেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া যায়।

ই/ঈ

ইঁচড়ে পাকা (অকালে পাকা)— ইঁচড়ে পাকা ছেলেটি বাবা মায়ের কথা শোনে না।

ইলশেগুঁড়ি (গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি)— সকাল থেকেই শুরু হয়েছে ইলশেগুঁড়ি।

ঈদের চাঁদ (অতি আনন্দ)— হারানো ছেলেকে পেয়ে মা যেন ঈদের চাঁদ পেয়েছে।

উ/ঊ

উত্তম-মধ্যম (প্রহার) — পুলিশ চোরটিকে কিছু উত্তম-মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দিলো।

উনিশ-বিশ (সামান্য পার্থক্য)— হারজিতটি উনিশ-বিশে হয়েছে।

উঠে পড়ে লাগা (আদার জল খেয়ে লাগা/প্রাণপন চেষ্টা করা)—একবার ফেল করে ছেলেটি পাশের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

উনপাঁজুরে (হতভাগ্য)— উনপাঁজুরে লোকটির ভাগ্যে সারা জীবনেও সুখ মিলল না।



এলাহিকাণ্ড (বিরাট ব্যাপার)— তার মেয়ে বিয়ে যেন এক এলাহিকাণ্ড।

এক ঢিলে দুই পাখি (এক প্রচেষ্টায় উভয় উদ্দেশ্য সাধন)— চালাক লোকটি এক ঢিলে দুই পাখি মারল।



কলুর বলদ (পরাধীন)— লোকটি সারা জীবন কলুর বলদের মতো খেটে গেলো।

কড়ায় গণ্ডায় (পুরোপুরি)— পাওনা টাকা তার কাছ থেকে কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নিবি।

কান খাড়া করা (সতর্ক হওয়া)—রাস্তাঘাটে কান খাড়া করে চলতে হয়।



গোঁফ খেঁজুরে (খুব অলস)— গোঁফ খেঁজুরে লোক দিয়ে দেশের উন্নতি অসম্ভব।

গোবর গণেশ (অপদার্থ/মূর্খ)— গোবর গণেশ দিয়ে কোন কাজে ভালো ফল আশা করা যায় না।

গোড়ায় গলদ (মূলে ভুল)— অংক মিলবে কী করে, এর তো গোড়ায় গলদ আছে।

গুঁড়েবালি (আশায় নৈরাশ্য)— শেষমেষ সব আশাই গুঁড়েবালি হবে।



ঘোড়ার ডিম (মিথ্যা জিনিস/অবাস্তব বস্তু)— এমন লেখাপড়া করলে পরীক্ষায় ঘোড়ার ডিম পাবা।

ঘোড়ার ঘাস কাটা (বাজে কাজ করা)— ঘোড়ার ঘাস কাটো; পরীক্ষায় ভালো করতে পারলে না।



চোখের পর্দা (লজ্জা)— বড় হয়ে কী চোখের পর্দা খেয়েছে?

চোখের মণি (অতি আদরের)— ছেলেটি গরিব মায়ের চোখের মণি।

চোখের বালি (চোখের কাঁটা/চক্ষুশূল)— খারাপ কাজ করে বাবা মায়ের কাছে চোখের বালি হইও না।

চোখ টাটান (হিংসা করা)— অন্যের ভালো দেখে অনেকের চোখ টাটায়।

চোখে সরষে ফুল দেখা/চোখে অন্ধকার দেখা (বিপদ দেখা, হতবুদ্ধি)— সারা বছর না পড়লে চোখে সরষে ফুল /চোখে অন্ধকার দেখতে হয়।

জ/ঝ

জলে কুমির ডাঙায় বাঘ (দুদিকেই বিপদ/উভয় সংকট) — জলে কুমির ডাঙায় বাঘ নিয়ে বাঁচা কষ্টকর।

জিলাপির প্যাঁচ (খারাপ বুদ্ধি)— জিলাপির প্যাঁচ দিয়েও লোকটি বাঁচতে পারল না।

ঝোপ বুঝে কোপ মারা (অবস্থা বুঝে সুযোগ গ্রহণ) — ছেলেটি ঝোপ বুঝে কোপ মেরেই সফল হয়েছে।

ট/ঠ

টনক নড়া (সজাগ হওয়া)— এবার ফেল করে ছেলেটির টনক নড়েছে।

টাকার গরম (অহংকার করা)— টাকার গরম বেশি দিন টেকে না।

টাকার কুমির (বড়লোক)— লোকটি টাকার কুমির কিন্তু হাড়কিপটে।

ঠোঁটকাটা (স্পষ্টবাদী)— সবসময় ঠোঁটকাটা হলে চলে না।



তাসের ঘর (ক্ষণস্থায়ী)— জীবনটি তাসের ঘর তাই সৎ হয়ে চলাই উচিত।

তিলকে তাল করা (ছোটকে বড় করা)— ঘটকরা সবসময় তিলকে তাল করে।

তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠা (রেগে যাওয়া)—রগচটা লোকরা সবসময় তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।

তালপাতার সেপাই (ছোটতে বড় শক্তি)— লোকটি ছোট হলে কী হবে একেবারে তালপাতার সেপাই।

তুষের আগুন (গোপন কষ্ট) —অন্যের ক্ষতি করলে তুষের আগুনে জ্বলতে হয়।

তেলে মাথায় তেল দেয়া (যার আছে তাকে আরো দেয়া) —সবাই তেলে মাথায় তেল দেয়।

দ/ধ/ন

দুধে মাছি (সুসময়ে বন্ধু/বসন্তের কোকিল)— দুধে মাছির মতো বন্ধু হইও না।

দুমোখো সাপ (এক মুখে দুরকম কথা)— দুমুখো সাপকে কেউ পছন্দ করে না।

দুধ কলা দিয়ে সাপ পোষা (যত্নে শত্রু পালা)— দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষে লোকটি নিজের ক্ষতি করল।

দশের লাঠি একের বোঝা (সকলে যেটি সহজে করা যায়, একের পক্ষে সেটি বোঝা)— দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ।

ধামা ধরা (তোষামদী করা)— টাকা থাকলে সবাই ধামা ধরে।

নাকে খৎ (প্রায়শ্চিত্ত করা)— ছেলেটিকে নাকে খৎ দিয়ে ছেড়ে দেয়া হলো।

ননীর পুতুল ((শ্রমবিমুখ/নরম স্বভাবের)— ননীর পুতুলকে দিয়ে কঠিন কাজ হবে না।

নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো (নিশ্চিন্ত থাকা)— নাকে তেল দিয়ে ঘুমালে পরীক্ষা ভালো হবে?



পটল তোলা (অক্কা পাওয়া/মরে যাওয়া)— বাসের ধাক্কায় সে পটল তুলেছে।

পাকা ধানে মই দেয়া (প্রায় সফল কাজ নষ্ট করা)— পাকা ধানে মই দেয়ার মতো বড় ক্ষতি আর নাই।

পুকুর চুরি (বড় চুরি)— পরীক্ষায় নকল করাও পুকুর চুরি।

পুঁটি মাছের প্রাণ (ক্ষণস্থায়ী)— পুঁটি মাছের প্রাণ নিয়ে বড় কাজ সমাধান করা যাবে না।

ব/ভ

বইয়ের পোকা (খুব বই পড়ায় অভ্যস্ত ব্যক্তি)— আমার মা বইয়ের পোকা।

ব্যাঙের সর্দি (অসম্ভব ব্যাপার)— কৃষকের কষ্ট আর ব্যাঙের সর্দি একই কথা।

বুকের পাটা (দুঃসাহস)— বুকের পাটা থাকে তো কাজটি করে দেখাও।

ভেজা বেড়াল (কপট ব্যক্তি)— লোকটি দেখতে শান্ত হলেও আসলে ভেজা বেড়াল।



মগের মুল্লুক (অরাজকতা)— দেশটি কী মগের মুল্লুক যে যা ইচ্ছা তাই করবে।

মাটির মানুষ (নিরীহ)— আমার মা মাটির মানুষ।

মানিকজোড় (অন্তরঙ্গ ভাব)— মানিকজোড় বলেই তাদের গলায় গলায় ভাব।



হ-য-ব-র-ল (বিশৃংখল)— ভালো ছাত্ররা টেবিলে বই হ-য-ব-র-ল করে রাখে না।

হাতেখড়ি (শুরু/আরম্ভ)— শিশুর লেখা পড়ার হাতেখড়ি মাই দিয়ে থাকেন।

হাতে কলমে (প্রত্যক্ষভাবে)— হাতে কলমে শিক্ষা দেয়াই প্রকৃত শিক্ষা দেয়া।

হাত টান (চুরির অভ্যাস)— লোকটির হাত টানের অভ্যাস আছে।

Friday, October 5, 2018

এড়িয়ে যেতে পারাই সফলতা

এগিয়ে যেতে হলে আপনাকে ছাড় দিতে হবে, অনেক কিছু না দেখার এবং না অনুভব করার চেষ্টা করতে হবে। সবকিছুকে গুরুত্ব দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকলে এগিয়ে যেতে পারবেন না, আপনাকে নিয়তই পরাজিত হতে হবে জীবনের বাঁকে বাঁকে.... . . . . . . .
দুশ্চিন্তা আপনার আগামীকালের সমস্যা দূর করতে পারবে না, বরং আজকের শান্তিটুকু দূর করে দিবে. .   .  

কোন কিছুর কারণে যদি আপনার মাঝে সুখ অনুপস্থিত থাকে, জেনে রাখুন তা পেলেও আপনি এমনই থাকবেন। একবার কোথায় যেন পড়েছিলাম, সুখ আসলে আমাদের মনের একটা পছন্দ, কোন অবস্থা নয়। কথাটা নিগূঢ় সত্য...
#কবিরাজ
#লকুফিশ

Saturday, August 25, 2018

কাজের মাঝে বেঁচে থাকতে হবে-- কল্যাণকর কাজ, ভালো কাজ, আনন্দময় কাজ

জীবনটার দৈর্ঘ্য খুবই কম। কেবল একটু পেছনে তাকিয়ে দেখবেন, মনে হবে যেন ৫ বছর আগের ঘটনাটা মাত্র অল্প ক'দিন আগের! আমাদের চারপাশে অনেক খারাপ মানুষ, প্রায়ই অনেক খারাপ ঘটনা ঘটে। আমরা যদি সেসবে আটকে যাই, শংকা-চিন্তা-হতাশা-দুঃখে পড়ে আমরা তখন আমাদের সত্যিকারের লক্ষ্যে পৌঁছতে আমরা বাধাগ্রস্ত হবো। ভালো চিন্তা, হৃদয়জোড়া ভালোবাসা, উচ্ছ্বাসভরা বুকে মানুষকে হাসিমুখ করে দেয়ার মতন কাজের বিকল্প নেই।
জীবনটা খুব ছোট। যে কোন ধরণের ক্ষুদ্র/খারাপ/মন্দ চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা/শংকার মাঝে ডুবে থাকার মাঝে কোন ন্যুনতম কল্যাণ নেই। এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে, কষ্টের মাত্রা, খারাপ লাগার মাত্রা যেমনই হোক না কেন। কাজের মাঝে বেঁচে থাকতে হবে-- কল্যাণকর কাজ, ভালো কাজ, আনন্দময় কাজ

দয়া আর মহত্বের স্পর্শে

শেষ কবে আপনি রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখেছেন? আমরা যাদের জ্বলতে দেখি টিমটিম আলোয়, সেই মূহুর্তের সেই আলোটাও তো কত শত বছর আগে ওখান থেকে বিচ্ছুরিত হয়েছিলো তা হিসেব করার বিষয়, কিন্তু অমন নক্ষত্র, গ্রহ তো ওই আকাশে, এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে লাখে লাখে। ওদের একেকটার আকার আমাদের এই পৃথিবীর চেয়েও অনেক বড়। ওদের ওখান থেকেও আমরা একটা বিন্দুর মতই। এই বিন্দুতেই আমাদের সব। এই বিন্দুটুকুর আরো বিন্দু অংশ নিয়ে হাজার হাজার সৈনিক যুদ্ধ করেছে, সেনাপতিরা নিজেদের অমিত শক্তিশালী মনে করেছে হয়ত কোন একটা অংশ বিজয় করে। শাসকেরা নিজেদের ভাষ্কর্য উদ্বোধন করে, অফিসে অফিসে নিজের ছবি ঝোলায়; মনে করে তাদের এই শক্তি আর এই সময় হয়ত রয়ে যাবে। মহাবিশ্বের এইটুকু বিন্দুতেই শত-সহস্র ধর্ম রয়েছে যারা সবাই নিজেকে সঠিক মনে করে। এটুকুতেই রয়েছে অনিন্দ্য সুরের ঝংকার তৈরি করা লক্ষ লক্ষ সংগীতজ্ঞ, গভীর জীবনবোধ নিয়ে কবিতা ও গল্প লেখা হাজার-লক্ষ কবি আর ঔপন্যাসিক এসে চলেও গেছে। এটুকুর মাঝেই কত আঁকিয়ে যে এঁকেছেন ছবি, শিল্পে আর সংস্কৃতির চর্চার গভীরমূলে গিয়েছেন কত শত জন! এটুকুতেই রয়েছে কত প্রেমিক, কত প্রেমিকা। কত ভালোবাসা, কত টান আর কত আবেগ! কত অশ্রু আর কত হাসি। এখানেই রয়েছে হিংসা-বিদ্বেষ, কেউ কিছু পেলে অপরের জ্বালা ধরা মন্তব্য নির্নিমেষ। এটুকু জায়গায় কত মানুষের কত মত, কত ক্রোধ, কত অহং, কত ঘৃণা। অথচ এই সুবিশাল আয়োজন, এই অন্ধ ক্রোধান্ধ, আমিত্বকে জয় করার নিরুদ্দেশ যাত্রাপথে কারো কি তার ক্ষুদ্রতা নিয়ে আদৌ অনুভব হয়? এই টুকুন সৃষ্টির মাঝে, এই বিন্দুর মাঝে এত সিন্ধু যিনি স্থাপন করেছেন, তার বিশাল সৃস্টির দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থেকে হয়ত আনমনেই অনুভব হবার কথা ছিলো, "হে আমাদের স্রষ্টা, আমাদের মালিক! আমাদের দয়া করুন। আমাদের চিন্তার আর হৃদয়ের সীমাবদ্ধতা ও ক্ষুদ্রতাকে সহ্য করতে না পারার এই জ্বালা থেকে মুক্তি দিন আপনার দয়া আর মহত্বের স্পর্শে।"

সমীকরণ


সব সমস্যার বেশি সরলীকরণ করলে সমস্যা। জটিল সমস্যার সরল সমাধান চাইতে গেলে সব হারাতে হয়। একই বুঝ দিয়ে সবাইকে বুঝতে গেলেও বিপদ।

কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়


সকল ক্ষতিই মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারে। মানুষ পরম অভিযোজন ক্ষমতার একটি প্রাণী। যাকে ছাড়া/যা ছাড়া জীবন কল্পনাও করতে পারেননি, তার বিদায়ের পরে আপনি দিব্যি খাবেন, ঘুমাবেন, হাসবেন। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। দুঃখ নয়, গ্লানি হয়। এমনকি আনন্দের সময়ও নয়। দুনিয়া নিজেই অস্থায়ী। এর ভেতরের প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি সত্ত্বা, প্রতিটি কণা অস্থায়ী, নশ্বর। এমন কিছুর প্রতি কীসের এত আকাঙ্ক্ষা, এত স্বপ্ন আর কল্পনা-জল্পনা আমাদের যা কিছু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে শেষ হয়ে যাবে?

Friday, August 24, 2018

প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি সত্ত্বা, প্রতিটি কণা অস্থায়ী, নশ্বর


সকল ক্ষতিই মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারে। মানুষ পরম অভিযোজন ক্ষমতার একটি প্রাণী। যাকে ছাড়া/যা ছাড়া জীবন কল্পনাও করতে পারেননি, তার বিদায়ের পরে আপনি দিব্যি খাবেন, ঘুমাবেন, হাসবেন। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। দুঃখ নয়, গ্লানি হয়। এমনকি আনন্দের সময়ও নয়। দুনিয়া নিজেই অস্থায়ী। এর ভেতরের প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি সত্ত্বা, প্রতিটি কণা অস্থায়ী, নশ্বর। এমন কিছুর প্রতি কীসের এত আকাঙ্ক্ষা, এত স্বপ্ন আর কল্পনা-জল্পনা আমাদের যা কিছু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে শেষ হয়ে যাবে?

Thursday, May 17, 2018

সুখে থাকা দুঃখে থাকা নিজের কাছে

জীবন কতনা অদ্ভূত! কখনও কতইনা সুন্দর আর আনন্দময়, আর কখনও কত কষ্টকর! আমাদের জীবনটাই যে এমন! কেউ তো জানিনা আমার যতি চিহ্ন কোথায়… কী নিয়ে দুঃখ করবো আমি? আজ হয়ত আমি অনেক সুখী, যদি আজই চলে যেতে হয় এই জগত ছেড়ে, তবে আমি কি প্রস্তুত যাওয়ার জন্য? আমি যতটুকু সুখে আছি, অনেকেই তো তার চাইতে খারাপ আছেন, তাইনা? জীবনটাই তো এমন! অনেক পাওয়া আর না পাওয়া দিয়ে ঘেরা… অনেক তৃপ্তি আর অতৃপ্তি মাখানো… তাকে তো আপন করে নিলে চলেনা! তাকে সাথে করে চলতে হতে হয়। এলোমেলো হয়ে গেলেও প্রস্তুত হতে হবে আখিরাতের জন্য… সেটাতে ভুলে গেলে চলবেই না!
একটা কথা শুনেছিলাম :
জীবনে যা ঘটেছে, তা ভালো হয়েছে। যা হচ্ছে, তা-ও ভালো হচ্ছে। আর ভবিষ্যতে যা ঘটবে, তা-ও ভালোই হবে।
ছেলেবেলায় শোনা সেই গল্পের কথা মনে পড়ে গেলোঃ
এক লোক মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখেন তার জুতো জোড়া হারিয়ে গেছে। ভীষণ মন খারাপ করে তিনি পথ চলতে শুরু করলেন খালি পায়ে।
কিছুদূর যাবার পর তিনি দেখলেন একজন ভিক্ষুককে যার দু’টো পা-ই নেই…
তখন তার নিজের জুতো হারাবার দুঃখ ঘুচে গেলো… আমার তো অন্ততঃ দু’টো পা অক্ষত আছে! যাক না দু’জোড়া জুতো…
যা হারিয়ে গেছে আমার, তার চাইতে অনেক বেশি কিছু আমার কাছেই আছে। অনেকের কাছে সেটুকুও তো নেই! এটাই হয়ত আত্মিক শান্তি অর্জনের ভাবনা হওয়া উচিত। আর সেই শান্তির খোজেই তো আমরা ছুটে চলেছি জগতময়! যদি মনেই শান্তি পাওয়া যায়, তবে আর ক্ষতি কী?
আজ কিছু টিপস পেলাম ইন্টারনেটে, কীভাবে ভালো থাকা যায় সে বিষয়ে কিছু কথা, কীভাবে মনটাকে ভালো রাখা যাবে সে বিষয়ে কিছু কথা…
নিজেকে কখনও অন্যের সাথে তুলনা করবেন না।
নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা থেকে বিরত থাকুন। সবকিছুকে পজেটিভ ভাবে গ্রহন করতে চেষ্টা করুন।
নিজেকে নিয়ে এবং কাছের মানুষদেরকে নিয়ে অনর্থক বেশি দুঃচিন্তা করবেন না। মনে রাখবেন, দুঃশ্চিন্তা কখনোই সমস্যার সমাধান করবেনা।
নিছক আড্ডা দিয়ে সময়ের অপচয় করবেন না।
শত্রুতা এবং অন্যের প্রতি ঘৃণা বজায় রাখবেন না। এতে কেবল দুঃশ্চিন্তা বাড়ে এবং মানসিক শান্তি নষ্ট হয়, যা আপনার স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
নিজের এবং অন্যের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিন, শিক্ষাকে মনে রাখুন, ভুলকে ভুলে যান। অতীতের ভুল নিয়ে অতিরিক্ত ঘাটাঘাটি করে তিক্ততা বাড়িয়ে বর্তমানের সুন্দর সময়কে নষ্ট করবেন না।
মনে রাখবেন, জীবন একটি বিদ্যালয় যেখানে আপনি শিখতে এসেছেন। জীবনের যত সমস্যা তা এই বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত, এ নিয়ে তাই চিন্তা না করে বীজগণিতের মত সমাধানের চেষ্টা করুন।
প্রচুর পরিমাণে হাসুন এবং সবসময় হাসিখুশী থাকার অভ্যাস করুন। সেই সাথে অন্যদেরকেও হাসিখুশী রাখতে চেষ্টা করুন।
জীবনের সব ক্ষেত্রে জয় লাভ করা অসম্ভব। তাই হার মেনে নিতে প্রস্তুত থাকুন। এটাও আপনার একটা মানসিক বিজয়।
অন্যের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টা করুন।
অন্যেরা আপনাকে নিয়ে কি ভাববে তা নিয়ে চিন্তিত হবার কিছু নেই। নিজের কাজ করে যান আত্মবিশ্বাস নিয়ে।
সময়ের কাজ সময়ে করুন, কিছুতেই এখনকার কাজ পরে করার জন্যে ফেলে রাখবেন না।
যেসব জিনিস চিত্তাকর্ষক ও আকর্ষণীয়, কিন্তু ও উপকারী নয়, তা থেকে দূরে থাকুন।
সুসময় বা দুঃসময় যাই হোক না কেন, সবই বদলাবে, এটাই চিরন্তন নিয়ম, তাই কোনো কিছুতেই অতিরিক্ত উৎফুল্ল বা অতিরিক্ত দুঃখিত হবেন না।
অনেক তো শুনলাম… এবার শুধু একটা কথা বলতে চাই… মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ
তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের সাহায্যে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা: ১৫৩)
আর আরেকটা কথা বলেই শেষ করতে চাই আজকের মতন… এটাও পবিত্র কুরআন থেকে নেয়া। আমরা মানুষ। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ চেষ্টার পর আর কিছুই করার থাকেনা আমাদের… হৃদয়ে একটা শূণ্যতা সৃষ্টি হয় চাওয়া-পাওয়া নিয়ে। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সেই জায়গায় কত সুন্দর করে তার অভিভাবকত্বের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন!
… এতদ্দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। (সূরা তালাক: ২)
এই স্বল্প সময়ের পৃথিবীতে যেন আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে বিদায় নিতে পারি সেই প্রার্থনা আমার সবার জন্য রইলো। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। সঠিক পথ তো সে-ই পায়, যে তার জন্য স্বপ্ন দেখে, চেষ্টা করে, হৃদয় যার লালায়িত থাকে মুক্তির প্রত্যাশায়……

Tuesday, May 15, 2018

ভালবাসার শেষ কথা


প্রিয়তমা,
"বেদনার বালুচরে দাড়িয়ে বুক ভরা হাহাকার আর আর্তনাদ নিয়ে বড় জানতে ইচ্ছে করছে,তুমি কেমন আছো? "
তেমনি আছো কি, যেমনটি ছিলে? নাকি চন্দ্র সূর্যের দিন রাত্রির চির আবর্তনে পাল্টে গেছে তোমার অবস্থান? তুমি কি শরতের নীল আকাশের তুলো মেঘের মত মাথার ঠিক উপরে যেভাবে ছিলে সেভাবেই আছো, না কি কুয়াশায় ঢাকা কোন হাড় কাঁপানো শীতের মধ্য দুপুরে সূর্য হয়ে দক্ষিন গোলার্ধ ঘেষে এগিয়ে যাচ্ছ অনাগত গ্রীষ্মের দিকে? সত্যিই খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
জানো সোনা,
আজ আমার মনের আকাশটা বিরহের অমাবস্যার ঘুটঘুটে আঁধারে ঢাকা।স্বপ্নের জোনাকি গুলো ডানা ভেঙে লুটিয়েছে জমিনে। কষ্টের ঝিঝিপোকা গুলো আর্তনাদ করে চলেছে স্মৃতি গুলোর বুক জুড়ে।আমি না পেরেছি তাদের বুঝাতে, না পারি নিজেকে বুঝাতে।ব্যর্থতার এহেন পরিস্থিতিতে আমি আজ বোবা-কালা কিংবা, অন্ধ কিছু একটা হব হয়ত।
জানো,আর তাই
ভালোবাসার যে আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে তুমি ছিলে তা আজ আঁধারে ঢাকা। । ছোট ছোট স্বপ্ন আর সুখের স্মৃতিগুলো রাতের আকাশে যে তারা হয়ে জ্বলত,তারাও আজ নিভে গেছে প্রায়।অশরীরী স্বপ্নেরা মাঝে মাঝে সামনে এসে ভীর করে বটে,কিন্তু তাদের ধরা যায় না,ছোয়া যায় না।
সত্যি তুমি ছাড়া আমি আজ অসহায়। সত্যি আজ আমি সেই আমি আর নেই।।আমি মরে গেছি মন থেকে, শুধু অর্ধ মৃত খাঁচাটা পরে আছে মানুষের মাঝে একটা নাম নিয়ে!
আজ তুমি বললে,"কিছু একটা লিখো তো,তোমার লেখা কতদিন হল পড়িনা।"
আমি বললাম,"লেখার ভাষা হারিয়েছে তোমার সাথে সাথে।"
তবুও তোমার অনুরোধে মোবাইলের ডিসপ্লের উপর ঘন্টা চার কেটে গেলো শুধুই তাকিয়ে তাকিয়ে! কিন্তু
শেষ পর্যন্ত অনেক চিন্তাভাবনা করে একটা শব্দ বেরুলো না যা লিখা যায়। একটা বাক্য এলো না, যা দিয়ে মনের কথা গুলো তোমাকে জানাতে পারি। তাই এলোমেলো শব্দের বিন্যাসে অনর্থক কিছু কথা বলে গেলাম,যার হয়ত কোন মানে হয়না! তবুও লিখলাম, হয়ত এরই মধ্যে কোন শব্দের আড়ালে আমার লুকোনো বেদনার ছাপ তুমি খুঁজে পাবে বলে।হয়ত কোন অনর্থক শব্দের আড়ালে লুকিয়ে থাকা তোমাকে পাবার তীব্র বাসনা তুমি বুঝবে বলে।
আচ্ছা,
তুমি কি খুঁজে পেয়েছ সেরকম কোন কিছু? বুঝেছ কি শব্দের আড়ালে হৃদয়ের তীব্র আর্তনাদ??
জানিনা।
আর জানতেও চাই না।
লক্ষীটি,
শুধু একটা কথাই জানতে চাই,
তুমি কি এখনো ভালবাসো আমাকে? এখনো কি অমাবস্যার আধার ঠেলে পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে আমার আকাশে উদিত হওয়ার তীব্রতা অনুভব কর তুমি? যেমনটি করতে!
এখনো কি মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে মোবাইলের ডায়াল প্যাডে আমার নাম্বার তুলো আনমনে? একলা ঘরে ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে, এখনো কি ইচ্ছে করে শক্ত করে জরিয়ে ধরে থাকতে?
হয়তবা!!
যদি এখনো হৃদয়ের কোন এক কোণে স্মৃতিগুলো জ্বলে উঠে হঠাৎ হঠাৎ, কিংবা চোখের কার্নিশে জমা হয় বিরহী লোনা জল, তবে চলে এসো।
চলে এসো চির উন্মুক্ত হৃদয়ের দরজা ঠেলে।আমি অপেক্ষায় থাকবো এভাবেই ।।
ভালো থেক।খুব বেশি মিস করলে আয়নায় নিজেকে দেখো।স্পর্শ গুনো একটা একটা করে। সেখানেই আমাকে খুঁজে পাবে!
#সেইলকুফিশ

ভাবনার জীবন

আমি এত এত ভাবি যে,ভাবতে ভাবতে ভাবনাগুলোও ভুলে যাই।
আমার গার্লফ্রেন্ড প্রায়শই বলে,"তুমি এত বেশি বুঝ ক্যান? এত বেশি ভাবো কেন? "
গার্লফ্রেন্ডকে কিভাবে বুঝাই,"সুস্থ মস্তিস্কই ভাবনায় ডুবে থাকে,একমাত্র পাগলের কোন ভাবনা থাকে না।"
কে যেন বলেছিলো, "যে কোন চিন্তা করে না বা যার কোন টেনশন নাই সেই একমাত্র সুখি। আর যে সবচেয়ে বেশি সুখি সে অবশ্যই পাগল নয়ত ভগবান। কারন,পাগলের কোন ভাবনা থাকে না।আর মানুষ যেহেতু ভগবান নয় তাই সে পাগলই।"
আমার মনে হয় যিনি এ কথাটি বলেছিলেন তিনি এরিষ্টটলের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বলেছেন।এবং যা বলেছিলেন তা খাটি সত্য কথাই বলেছেন।
মানুষের ভাবনার ধারা বিচিত্র।একেক জনের একেক ধরনের ভাবনা।একেক বিষয়ে একেক জন ভাবেন। কিন্তু যেটা সবার ক্ষেত্রে কমন সেটা হলো,"সবারই ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু জীবন ও জগৎ। "
জীবনের ভাবনা গুলো আবার দুই রকমঃ
এক, ব্যবহারিক জীবন
এবং দুই, আধ্যাত্মিক জীবন
ব্যবহারিক জীবনের মধ্যে রয়েছে, দৈনন্দিন কর্মকান্ড, কল্পনা-জল্পনা,অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। এক কথায় ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমরা যা কিছু ভাবি তা আমার মতে, "ব্যবহারিক জীবন ভাবনা"।
আর জন্মের পূর্বের এবং মৃত্যুর পরের ভাবনা গুলো হলো আধ্যাত্মিক জীবন ভাবনা।
মজার বিষয় হলো, আধ্যাত্মিকতা এবং ব্যবহারিক জীবন দু'টো পরস্পরের উপর নির্ভরশীল ।
আমরা জন্মের পর থেকেই এমন একটা আধ্যাত্মিক ক্ষমতা নিয়ে জন্মাই যা জন্মের পূর্বে আমরা মাতৃ গর্ভে ব্যবহার করতাম।আমার মনে হয়,মাতৃ গর্ভে শিশুরা যখন ধীরে ধীরে বড় হয় তখন বাহ্যিক পৃথিবী সম্পর্কে একটা কল্পনা করতে থাকে।আর তারা বাহিরের পরিবেশের সাথে সাথে নানাভাবে রিয়েক্ট করে এটা তো প্রমানিত সত্য।কিন্তু এসব রিয়্যাক্ট করার সাথে সাথে তারা পরিবেশ সম্পর্কে একটা কল্পনাও করে নেয়।
আর এই কল্পনা শক্তি বা আধ্যাত্মিক শক্তি আমরা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরেও অনুভব করি।
কিন্তু ব্যবহারিক জীবনে এসে আমরা যখন কোন বিষয়কে নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করি কিংবা আমাদের মন যদি কোন বিষয়ে একান্তভাবে সায়/সাপোর্ট দেয় তখন তা বাস্তব হয়।তবে বাস্তব অবস্থা কল্পনা করার জন্য আমাদেরকে মাতৃগর্ভে ফিরে যেতে হয়।অর্থ্যাৎ যে বিষয়টা আমাদের সাথে নেই বা যা আমরা দেখতে পাইনা কিন্তু তার অবস্থা কিংবা পরিবেশ বুঝতে চেষ্টা করি,তা বুঝতে হলে সেই বিষয়কে সেভাবে অনুভব করতে হয় যেভাবে মাতৃগর্ভে থেকে আমরা পৃথিবীকে অনুভব করি।
এজন্য ওই বিষয়ের প্রতি একটা গভীর ও নিস্পাপ ভালোবাসা থাকতে হয়,নিষ্পাপ শিশুর মত।
উদাহরণ সরূপঃ
ব্যবহারিক জীবনে আমরা অনেক সময় খুব প্রিয়জনদের অনুপস্থিতিতে তার মুভমেন্ট গুলো আন্দাজ করতে পারি। যা অনেক সময় ৭০-৮০% সত্য হয়।
কিন্তু, এটা কিভাবে সম্ভব?
এটা সম্ভব এই কারনে যে,আমরা যখন কোন কিছুকে গভীর এবং নিষ্পাপ মনে চাই/ ভালবাসি তখন আমাদের মধ্যে সেই স্প্রিচুয়াল পাওয়ারটা অনুভব করতে পারি।
কিন্তু বাস্তব জগতে এটাকে আমি সরাসরি আধ্যাত্মিক ভাবনা না বলে বলতে চাই,"অধি-কাল্পনিক অনুভব"।
#আর যখন আমরা আমাদের মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে কল্পনায় বা ভাবনায় নিয়ে আসি তখন তাকে আধ্যাত্মিক ভাবনা বলা যেতে পারে।মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে অবিনশ্বর আত্মার একটা সীমাহীন পথ যাত্রা শুরু হয়।সেই যাত্রা পথের সাম্ভাব্য বিষয়াবলী কে অনুভব করা বা উপলব্ধি করা হলো, "আধ্যাত্মিক জীবন ভাবনা"।
তাই শুধু জীবন নিয়ে আমরা যদি ভাবতে যাই তবে আজীবনেই জীবনের ভাবনা শেষ হবে না।
যে সৃষ্টির শুরু হয়েছে কোটি কোট বছর পূর্বে এবং যা অনন্ত কাল ধরে চলতে থাকবে তা মাত্র ৬০ কিংবা ৭০ কিংবা সর্বোচ্চ ১০০ বছরের ক্ষুদ্র জীবনে ভেবে শেষ করা কি সম্ভব?
না,কখনোই তা সম্ভব না।
তাই আমাদের ভাবতে হয় জগতের ভাবনা। কিন্তু বৃহৎ জগতের আদি ও অন্ত ভাবনা অনন্ত।তাই জগৎ এর আদি বা সৃষ্টি ভাবনা এবং অন্ত বা ধ্বংসের ভাবনাকে জীবনের আধ্যাত্মিক ভাবনার মধ্যে স্থান দিলে মানুষের আয়ুষ্কালে যে ক্ষুদ্র পরিসর পাওয়া যায় তাই টিকে থাকে জগৎ ভাবনা হিসেবে।
জগৎ ভাবনার বিষয়ের মধ্যে থাকে জীবনের লেনদেনের হিসেব,জগতে টিকে থাকার সংগ্রামের বিষয়বস্তু।
এটাকে ব্যবহারিক জীবন ভাবনার সাথে তুলনা করা যেতে পারে তবে ব্যবহারিক জীবন ভাবনা ও জগৎ ভাবনাকে এক বলা যাবে না।
ব্যাবহারিক জীবন ভাবনার বিষয়বস্তু গুলো হলো মানুষিক কিন্তু জগৎ ভাবনার বিষয়গুলো হলো বস্তুগত।
তবে সে যাই হোক,
জীবন ও জগতের মধ্যে ব্যবহারিক জীবন ভাবনা এবং জগৎ ভাবনাই হলো গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই দু'টি ভাবনাকেই আমরা বাস্তবে উপলব্ধি করতে পারি কিংবা বাস্তবে প্রয়োজন হয়।বাকি গুলোর অস্তিত্ব শুধুমাত্র মৃত্যুর পরেই উপলব্ধি করা সম্ভব।। তার আগে নয়।।

#আমিসেইলকুফিশ