পৃষ্ঠাসমূহ

Wednesday, February 25, 2015


গাঁও গ্রামের ফর্সা রূপ : জিয়া হাশান

সবাই বলে গাঁও-গ্রাম বদলে গেছে। উন্নয়নি ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির কোমল পরশে তার রূপের ছটা এখন ঝলমলায়। এনজিও বটিকায় বলিয়ান বাহু-পেশি চার ইঞ্চি ফোলে। ইদানিং আমাকে প্রায়ই গ্রামে যেতে হয়। নিজেরটায় তো বটেই রাজধানীর আশপাশে কিংবা দেশের অন্যত্রও। কিন্তু কোথাও তো চোখে পড়ে না বদলানো ফর্সা রূপ। পেশি ফোলানো ভঙ্গি। বরং আগে যেমন ছিল তেমনি সবুজ-শ্যামলই তো আছে। খাল-নদী বিধৌত কাদাময় নোংরা এখনো তার স্বভাব-চরিত্র। তাহলে বদলালো কী? পাল্টালো কোন অঙ্গ? খুঁজতে খুঁজতে একদিন পেয়ে যাই। চোখে পড়ে তার অন্য রকম চেহারা। ভিন্ন রকম স্বভাব-চরিত্র। যা আগে কখনো দেখিনি। হয়তো অনেকের ভাবনায়ও আসেনি।

বিভক্তির দগদগে তাজা ঘা’র কারণে দেশের আর সব ইউনিয়নের পঙতি থেকে আমাদেরটা ছিটকে পড়ে। তাই তারে মাহরুম করে আর সব ইউনিয়ন দফায় দফায় নির্বাচন সেরে নেয়। ঘাড়ে তোলে নতুন জনপ্রতিনিধি। আমাদেরটা তখন ভোটার তালিকা দুভাগ করে ফাইনাল এ্যাপ্রুভালের জন্য গোমরা মুখে চেয়ে থাকে। এ কালো মুখে কাটে বেশ কয়েক মাস। তারপর একদিন নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়। ইউনিয়নজুড়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা মাথা তোলে।

আমাদের ভাই, মেজ চাচার বড় ছেলে অভিবক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। বিভক্তির পর ঘরের দুয়ারের ইউনিয়ন পরিষদের হর্তকর্তা হবার চান্স হাতছাড়া করতে নারাজ। সুতরাং আদাজল খেয়ে নামেন, কাছা দিয়া মাঠ, নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়ান। আমারে ফোন দেন-‘আবার খারাইছি। ক্যাম্পেন করতে হবে, আবি? ইলেকশন কিন্তু ঘনাইয়্যা আইছে।’
রথ দেখা আর কলা বেচা, গ্রাম দেখা আর ক্যাম্পেইন করার বেশ যুৎসই চান্স হাতছাড়া করি কী করে। তাই অফিস থেকে এক সপ্তাহের ছুটি ম্যানেজ করে ছুটি আমাদের পৈত্রিক গ্রামে।

আমাদের গ্রামটা সম্ভবত অজপাড়া গাঁ’র সেরা দৃষ্টান্ত। বিল ডুমুরিয়া নামের সাথেই অজত্বের দগদগে পরিচয় আঁকা। কারণ পুরো গ্রাম বিলের কব্জায় পোড়া। তার মাঝে মাঝে ঢিবির মতো উঁচা করা কিছু বাড়ি। শুধু বর্ষায় নয়, বরং শীত-বসন্তেও নৌকা ছাড়া বাড়ির বাইরে পা ফেলার উপায় নাই। বারো মাসই চারিদিকে পানির কঠিন রাজত্ব। তারে ফাঁকি দিতে, তার নাগপাশ থেকে শ্বাস ফেলতে কচুরিপানা জড়ো করে ‘ধাপ’ বানায়ে তার ওপর শাক-সবজি আবাদের এক অভিনব পদ্ধতি আমাদের পূর্বপুরুষরা আবিস্কার করেছেন। তা-ই এখন আমাদের ভরসা। তার বাহারি সবুজ রংয়ের ছটা ইদানিং দেশবাসীকে তাক লাগিয়েছে। কারণ আমাদের গ্রামের অভিনব কৃষিপদ্ধতি নিয়া কয়েকটি পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন-ফিচার আইটেম অনেকেইর চোখে পড়েছে।

যাইহোক, এরকম পান্ডববর্জিত বলা কম হবে বরং তাদের ধারণার অতীত গাঁকে উন্নয়নের বামন হাত নাগালে পাবে সে আশা করা বতুলতা। তাই রাস্তা-ঘাট, পোল-ব্রিজ বিদ্যুৎ ইত্যাদি দিয়া তার ‘ছতর’ ঢাকার জরুরী ‘ফরজ’ পোশাক-আশাক থেকে সে বঞ্চিত। উদলা উলঙ্গ তার গা-গতর। তবে দুএকটা হাটবাজারে ছোপ ছোপ উন্নয়নের আঁচড় কিছুদিন আগে লক্ষ্য করা গেছে।

রাস্তা-ঘাটের অভাবে নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলে নৌকা-ট্রলারে। জলপথে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি গিয়া ভোট প্রার্থনায় হাত মিলাই, সালাম বিনিময় করি। প্রথম দুদিনের পর তৃতীয় দিনের মাথায় মোক্ষম ঘটনা মাথা চাড়া দেয়। প্রত্যক্ষ করি গ্রামের, তার অন্তর বদলানোর, ফর্সা রূপ ধারণের তরতাজা আলামত।

সেদিন আমাদের বাড়ির সবচেয়ে কাছের হাট, তাও নৌপথে প্রায় একঘন্টার আগায় মনোহরপুরে ক্যাম্পেইনের সিডিউল। কাগজ-কলমে হাটের এ রকম রমনীয় নাম হলেও আমরা তারে আদর করে, মাথায় হাত বুলায়ে ডাকি মোনারপাড়। তিনখালের মোহনা সামনে নিয়া তার জীর্ণ আসন। কেননা মোহনাতেই, মানে খালেই বসে হাটের মূল আসর প্রতি শুক্র ও সোমবার সকালভাগে। নৌকায় নৌকায়, ইদানিং অনেকে পুচ্ছে স্যালো লাগায়ে ট্রলার নাম ধারণ করছে, তাতে চলে শাক-সবজি আলু-পটল কপি-কুমড়ার দরদাম হাঁকাহাঁকি কেনাবেচার হৈ হুল্লোড়। সূর্য মাথার ওপর ওঠার আগেই ব্যাপারি-ফরিয়ারা ভাটার পথ ধরে। বড় গঞ্জ বা শহর পানে তাদের মুখ। তাই তাদের আর কূলে ওঠার দরকার পড়ে না। ফলে কূলের আসর ম্যাড়ম্যাড়ে, ছাড়াছাড়া ভাব তার। দুসারিতে মুখোমুখি দাঁড়ানো খানকতক দোকান। তার বেশিভাগই লুঙ্গি-গামছা শাড়ির দখলে। আর দু একটায় অষুধপত্র ঝাঁকিয়ে বসলেও বাকিগুলায় মুদি-মনোহারিসহ হরেক রকম কারবার। মোট কথা কূলের গা-গতর এতো ছোট যে, যে কোনখানে দাঁড়ায়ে পুরা হাটে একনজর বুলানো, সবগুলো দোকানপাট এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা সম্ভব।

পথে আরো দুএক জায়গায় ক্যাম্পেইন সেরে হাটে গিয়া দেখি সে ভেঙ্গে গেছে। একেবারে চৌচির–খাল খালি,ব্যাপারিরা সব ভাটির পথে। কূলের বেশির ভাগ দোকানপাট মুখে ঘোমটা নামিয়েছে। ঝাঁপ ফেলে দোকানিরাও বাড়ির পথে। শুক্রবার বিধায় জুম্মার নামাজ হাতছানি দিয়া তাদের আগেভাগে ডেকে নেয়।

আমরা গিয়া হাটের নির্বাচনী ক্যাম্প অফিসে আসর জমানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ভাঙ্গা হাট কি জোড়া লাগে? খালি মাঠে অনায়াসে গোল দেয়া যায় কিন্তু ক্যাম্পেইন চলে না। তাহলে কী হবে? খালি হাতে ফেরৎ? তা কি করে হয়, এতো দূর এতোখানি পথ পাড়ি দিয়া আসা। বুথ এজেন্টের ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দরকার, তাও কি হবে না?
আমি অবাক হয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থীর মুখ পানে তাকাই। বিদ্যুৎ নাই তারপরও তার ফটোকপি মেশিন খোঁজা কেনো? তারপর হাটে দুবার চক্কর দেয়া সারা, দোকারপাটের চেহারা-সুরত পড়া শেষ। কিন্তু ফটো স্টুডিও কই? একবারও নজরে পড়েনি।
চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্দেশে আমাদের বহরের কেউ একজন ‘তসলিম ভাই! তসলিম ভাই!! এদিগে আহো’ বলে গলা উঁচা করে। তার কিছুক্ষণ পর ত্রিশের কোঠার এক যুবক এসে হাজির। বুঝি এ-ই তসলিম। তাকে দেখে আমার অবাক হবার পালা। কেননা তার বগল তলে ধরা আস্তো একখান ল্যাপটপ। বারো ইঞ্চি তসিবা। কিন্তু তার পরনের চেক লুঙ্গি কাছা দেয়া, গান্ধীজীর নেংটির মতো করে কোমরের কাছে গুটানো। তার নিচে হাঁটু অবদি তাজা কাদায় মোড়া। তারপর বাদামী থেকে কালোর দিকে ঝুঁকে পড়া বাকি পুরা শরীর খোলা। আমরা দেশি ভাষায় বলি উদলা গা। পাতলা গামছাখানাও গায়ে নাই। কোমরে কষে বাঁধা। তার মানে সে ডাক শুনে হাটের পাশের ধান ক্ষেত থেকে উঠে এলো? আমাদের বহরের একজন ঘাড় কাত করে হাঁ জানায়। ফলে আমার কৌতূহল আরো উঁচুতে মাথা তোলে। তার পানে অপলক চোখে তাকায়ে থাকি।
কার কার ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রিন্ট লাগবে তা জেনে নিয়া সে আগায়। আমি ক্যাম্প অফিস ছেড়ে তার পিছু নেই। দেখি সে কী করে। কোথা থেকে ছবি, পরিচয়পত্রের প্রিন্ট আমদানি করে।

দুদোকান পরেই তসলিমের আস্তানা। টিনের ঘোমটা তোলার পর ভেতরটায় নজর পড়ে। সামনের অংশে ছোটো একটি টেবিল, তার ওপর প্রিন্টার আর হাজারো রকমের তারের সমাহার। আর পার্টেক্স বোর্ডের পার্টিশনের ভেতরে অন্দরমহল। তসলিম তার ভেতরে যাবার পরপরই ভটভট আওয়াজ গলা তোলে। তার মানে স্যালো মেশিনের জেনারেটরের দৌড় শুরু হল। সামনে এসে টেবিলে রাখা ল্যাপটপের সাথে এটা ওটা তারের সংযোগ দেয়। তারপর শুরু হয় তার হাতের খেলা– ল্যাপটপের ‘টাচ প্যাডে’ দ্রুত আঙ্গুল চালায়। সাথে সাথে প্রিন্টার ওগড়ায় ছবি আর পরিচয়পত্র।

বিভিন্ন দেশে ডালপালা ছড়ানো একটি শীর্ষস্থানীয় আধা করপোরেট অফিসে আমার চাকরি। তার কোর ডিপার্টমেন্টে কাজ করি। সেখানে দেশি-বিদেশী লোকজনের আসা যাওয়া। ল্যাপটপ, আইপ্যাড ইত্যাদির অবাধ দৌরাত্ম্য। সুতরাং ল্যাপটপের মাধ্যমে ছবি ও পরিচয়পত্রের প্রিন্ট বার করা দেখে আমার অবাক হবার কী আছে। হা হয়ে দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে দেখা কেনো?
কিন্তু দেশসেরা অজপাড়া গাঁয়ের দু ইঞ্চি সাইজের হাটে এইমাত্র খেত থেকে হাঁটু অবদি তাজা কাদা নিয়া খালি গায়ে উঠে এসে এক যুবক চাষি লোহার মতো কর্কশ আঙুলের ছোঁয়া ল্যাপটপের সাথে কথা বলছে, পরশে পরশে তার দেহ মনে উত্তেজনা সঞ্চার করছে। তারপর তার গর্ভ থেকে একটার পর একটা ছবি, পরিচয়পত্রের প্রিন্ট বার করছে, তা দেখে চোখ বড় না করে উপায় আছে? আর বলি বা কী করে গ্রাম বদলায়নি? তার ফর্সা রূপ হয়নি?
দুকদম আগায়ে তসলিমের মুখোমুখি হই– তুমি এতো কিছু শিখছো কই? কার কাছ থাইকা?
কয়দিন ইন্দেরহাডে (আমাদের বাড়ির কাছের সবচেয়ে বড় গঞ্জ কাম হাট) এ্যাক দোকানে কাম করছি। হেহানে শিখছি। বাড়ি আইয়্যা এনজিও থাইকা লোন নিয়া এ্যাই কারবার খুলছি। এলাকার হগোলের ছবি, পরিচয়পত্র ল্যাপটপে ভইরা রাখছি। যহন যার লাগে প্রিন্ট দেই। ছবিতে দশ ট্যাহা, পরিচয়পত্রে পাঁচ ট্যাহা লই। খ্যাতের কামের ফাহে ফাহে কারবার চালাই। মাসের শ্যাষে কিস্তি দিয়াও লাভ থাকে।

জিয়া হাশান

লড়াকু রেশমা আর সুলতানা-জমিলাদের প্রতিবাদ : জোবাইদা নাসরীন


এক

রেশমারা্ বেঁচে থাকে, বেঁচে থাকার মধ্য দিয়ে ওরা প্রমাণ করে পুঁজিবাদী দুনিয়াতে ওরাই বড় সত্য, এর চেয়ে বড় আর কোনোটি নয়। সাভারে রানা প্লাজা ধসের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া হাজারের বেশি লাশের বহর এখন পর্যন্ত আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্ট, যন্ত্রণার জায়গা। কিন্তু তবুও ঘটনার সতের দিন পর বাতাস ভারি করা দুর্গন্ধ, শেষ সম্বল ছবিটিকে বুকে আঁকড়ে স্বজনদের আহাজারি, হাড়গোড় আর কঙ্কালের ভিড় ঠেলে জীবিত রেশমা সকল উৎকণ্ঠা, জিজ্ঞাসা ও বিস্ময় পাশ কাটিয়ে হাজির হয়েছে।

রেশমা আমাদের কাছে ফিরে এসেছে এটাই বড় সত্য। তাই আমাদের চোখের সামনে যখন বারবার আগুনেপোড়া আর ধ্বংসস্তূপে চাপাপড়া জীবনগুলো ছাই হয়ে যায়, আমাদের স্বপ্ন্ থেকে ফসকে যায়, তখন আমরা কেবলই মানবিক হাহাকারের জপ তুলি। কিন্তু কিছুই বন্ধ হয় না। সবকিছু ছাপিয়ে আমাদের আন্দোলিত করে কিছু এজাজউদ্দিন কায়কোবাদের মতো মানবিক মানুষের মুখ। শাহীনার মৃত্যু কাঁদিয়েছে আমাদের, বিনম্র শ্রদ্ধায় চোখের জল আনিয়েছে কায়কোবাদের বিদায় সংবাদটি।

এতকিছুর মধ্যে রেশমার বেঁচে থাকা এবং উদ্ধার হওয়া সকল পুঁজিবাদী বায়নার বিপরীতে বিরাট অর্জন। বিয়াল্লিশ বছর বয়সী বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতা অনেক। দক্ষ জনবলের বিপরীতে মানবিকতার ওপর ভর দিয়ে এদেশের মানুষ সাহসের যে লাঠিটি তুলে ধরেছে উদ্ধারকাজে তা বাংলাদেশ অনেকদিন মনে রাখবে।

15_Reshma_100513

দুই

প্রতিবাদী নারী গণসমাবেশ হয়ে গেল। এ সমাবেশে যোগ দেওয়ার কথা ছিল রড-সিমেন্ট আর বড় বড় লোহার রডে ছিদ্র ও ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া জীবনগুলোর। আমাদের ভোঁতা হয়ে যাওয়া ইন্দ্রিয়গুলো অবসরে সচল হয়ে ওঠে, আমরা কেবলই লাশ দেখি, কেবলই বাঁচার আকুতি শুনি। আর এ আকুতি আমাদের নিয়ে যায় প্রতিরোধের দরবারে। এদেশের নারীর লড়া্ই বারোয়ারি। ঘরে-বাইরে তার লড়াই। শুধু পুরুষতন্ত্রই তার শত্রু নয়, তার শত্রু অনেক। রাষ্ট্র ও সমাজের নানা বৈষম্যের উপাদান, সবকিছুই নারীর বিরুদ্ধে কাজ করে। পুঁজিবাদ, ধর্ম, বর্ণবাদ, জাতিভেদ সকল কিছুর সঙ্গে হাত ধরে এগিয়ে চলে পুরুষতন্ত্র আর ব্যবহৃত হয় নারীর বিরুদ্ধে। একেক জন এগোয় এগুলোকে বগলদাবা করে।

বাংলাদেশে যখন চলছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য আন্দোলন, তখনই গজায় হেফাজতে ইসলাম। নারীবিদ্বেষী দুই দফা, সংবিধানবিরোধী আরও কয়েক দফা সম্বল করে দুই পর্বে আমাদের সামনে হাজির হয়েছিল হেফাজতে ইসলাম। বিরোধী দলনেত্রী চোখ বুজে এ তের দফায় সমর্থনই শুধু দেননি, এ দেশের মানুষকে আহবান জানিয়েছেন হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে। সরকারি দল সুযোগ করে দিয়েছে এ দফাগুলো প্রচার করার জন্য। কেউ রুখে দাঁড়ানোর কথা বলেননি। নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরোধিতা করার পাশাপাশি হেফাজত প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধের দাবি তোলে।

এরই প্রতিবাদে ঢাকার বাইরের শহরগুলোতে নারীরা প্রতিবাদী সমাবেশ-মিছিল বের করে। আজকের এ নারী মহসমাবেশ হেফাজতের নারীবিদ্বেষ কেন্দ্র করে হলেও এ পাটাতন বাংলাদেশের অনেকগুলো অমীমাংসিত বিষয়ের ফয়সালা স্পষ্টতই চায়। বাস্তবতা পাশ কাটিয়ে নয় বরং নারীবিদ্বেষের সকল দ্বারকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই লড়াই-এর ময়দানে থাকতে চায় নারী। আর চায় বলেই এ ময়দানের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক এবং সমতার বাংলাদেশ তৈরি করা নারীর মতাদর্শিক জায়গা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও ওই সমতার জায়গাটি তৈরি করার জোর তাগিদে এ সমাবেশ। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে, একজন শহীদ পিতার সন্তান হিসেবে আমরা যে গর্ববোধ করি, একজন বীরঙ্গনার সন্তান হিসেবেও পরিচয়ের সমপরিমাণ গর্ব আমরা চাই। মুক্তিযুদ্ধের পৌরুষদীপ্ত ইতিহাসের বিপরীতে লৈঙ্গিক সমতাভিত্তিক ইতিহাস এ নারীরা তৈরি করবেন।

সমাবেশ আরও বলছে নারীনীতির কথা, তা বাস্তবায়নের কথা। সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরষের সমঅধিকারের কথা, বলছে সিডও সনদ বাস্তবায়নের কথা। নারীর বিরুদ্ধে সকল ধরনের নির্যাতন, নিপীড়নের বিপক্ষে দাঁড়ানোর কথা। আরও বলছে নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথের কথা, মতের কথা, ঈর্ষণীয় সংগ্রামের কথা।



তিন

ইবসেনের নোরা সংসার থেকে বের হয়ে গিয়েছিল পুতুলঘরে থাকবে না বলে। আর সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর জমিলা ধর্মীয় ভণ্ডামির বিরুদ্ধাচরণ করে থুতু ছিটিয়েছিল মজিদের মুখে। সুলতানার স্বপ্ন এখনও এ দেশের নারীর আরাধ্য। তবু এ দেশের নারীই পারে সন্তান বুকে নিয়ে, কোলে নিয়ে শরণার্থী হয়ে শিবিরে শিবিরে দৌড়াতে, পারে ভেঙে যাওয়া ভেসে যাওয়া ঘরখানির টুকরো খুঁজে এনে আবার সংসার গড়তে। কলাগাছের ভেলায় কিংবা টিনের চালে বসে খড়কুটো সংগ্রহ করে রান্না করে সকলকে বাঁচিয়ে রাখার স্পর্ধা দেখাতে।

এত সামর্থ আছে বলেই নারীর ঘরে-বাইরে এত শত্রু। আর তাদের মোকাবেলা করেই তাকে টিকে থাকতে হয়। এ জন্য এ দেশের সকল সংগ্রামী নারীর জীবন এত সমৃদ্ধ, এত দৃঢ়। জীবনের বিস্ময় কাটে না এ সংগ্রামী নারীদের পথ দেখে জীবন চিনে নেওয়ার, ছেনে নেওয়ার দুর্দমনীয় সাহস দেখে। শ্লোগানে শ্লোগানে মানবিকবোধের জয়গান শুনে।

আর রেশমাদের সতের দিন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপে বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা পড়ে।

জোবাইদা নাসরীন: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ কবে হবে : মাকসুদা সুলতানা

ইভ টিজিং বাংলাদেশে বহুল আলোচিত বিষয়। যেহেতু এই সামজিক ব্যাধিটি এখনও নির্মূল হয়নি তাই প্রসঙ্গটি আমাদের কাছে সেকেলে হয়ে পরেনি । বর্তমানে এনজিও ও সিভিল সমাজের চেষ্টায় ইভ টিজিং শব্দটিকে বাদ দিয়ে “সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট বা যৌন হয়রানী” শব্দটি ব্যাবহার করা হচ্ছে। কেননা ইভ টিজিং কথাটি নারীকে উত্ত্যক্তকরনের বিষয়টিকে হালকা করে দেয়। যৌন হয়রানী বা সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট পশ্চিমা তথা উন্নত দেশসমূহ অনেক আগে থেকেই একটি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত। সেসব দেশে ঘরে বাইরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যে কোন যৌন হয়রানী গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট নারীর মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। যৌন হয়রানীর শিকার কিশোরী বা তরুণী বড় হয়ে সে অন্য পুরুষ এমনকি নিজের স্বামীকেও ঘৃনা করতে পারে। এই দেশে, বাড়ীতে আত্বীয় স্বজনেরা, বাসের পার্শ্ববর্তী যাত্রী ও কন্ডাকটর, স্কুলে যাওয়ার পথে বখাটেদের দ্বারা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানীর শিকার হয় নারী কিন্তু তারা মুখ খুলে না। বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানীর ঘটনা ঘটে থাকে, যা নিয়ে বেশিরভাগ নারীই নিরব থাকে। গার্মেন্টস, কর্পোরেট সেক্টর, এনজিও, মিডিয়া, সরকারী অফিস প্রায় সবখানেই ক্ষমতার অপব্যাবহার হয়, চাকুরি হারানোর ভয় দেখিয়ে, মিথ্যা প্রলোভনের মাধ্যমে যৌন হয়রানী করা হয়ে থাকে । কিন্তু এসব নিয়ে যৌন হয়রানীর শিকার নারীটি দূর্নামের ভয়ে সচরাচর মুখ খোলে না । আর এ ব্যাপারে সরকার, গার্মেন্টস মালিক বা কর্পোরেট মালিকেরা কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দিয়েছেন কি? অথচ প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানী রোধে নিজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকা উচিত ।

জাতিসংঘ, নানা আর্ন্তজাতিক সংস্থা এবং কিছু বহুজাতিক সংস্থায় যৌন হয়রানীর ব্যাপারে “জিরো টলারেন্স” পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে । আর্ন্তজাতিক সংস্থাসমুহের মতো বাংলাদেশের সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর “জিরো টলারেন্স” পলিসি নেয়া কি খুব কঠিন? এক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সদিচ্ছা সবচেয়ে জরুরী ।

কিছুদিন আগে সংবাদপত্রের সূত্রে জানা গেল, গাজীপুরে গার্মেন্টস শ্রমিক একটি মেয়েকে ওভারটাইমে বাধ্য করা হয়েছিল। সে যখন রাতের অন্ধকারে বাসায় ফিরছে, তখন তাকে জোর করে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল। এমনি করে কত নারী যে কাজের ক্ষেত্রে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা ব্যাবস্থা না থাকার কারনে। তাকে কি নিরাপত্তার মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে, কখনো তার অফিস বা কারখানার কর্তৃপক্ষ?

নারী যে শুধু গৃহে নির্যাতনের শিকার হয় তা না, ঘরের বাইরের কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত নারীরও হুমকি মুখে থাকে। এক বি এন ডব্লিউ এল এর এক গবেষণা থেকে দেখা যায়, ৯১ শতাংশ নারী বাংলাদেশে কোন না কোনভাবে যৌন হয়রানীর শিকার । তাদের নিরাপত্তা যদি সংস্থা ও রাষ্ট্র না দেয় তবে অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্থ হবে, কেননা জনসংখ্যার অর্ধেক জনগোষ্ঠীই নারী। পত্রিকাতে একটি ঘটনা পড়ে গা শিউরে উঠে । ৭/৮ বছর বয়সের একটি বাচ্চাকে খেলার মাঠ থেকে বিস্কিট ও কলা খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় । মেয়েটিকে পরে একজন সহানুভুতিশীল মানুষ তার আকুতি শুনতে পেয়ে তাকে উদ্ধার করল রক্তাত্ত অবস্থায় । খবরের কাগজে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হলো তারা ভুক্তভোগী পক্ষের কারো কাছ থেকে এখনো কোন অভিযোগ পায়নি। এদিকে মেয়েটির বাবা মাকে নানাভাবে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে ধর্ষকের প্রভাবশালী দলবল । ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডাক্তারী পরিক্ষা না করালে আলামত নষ্ট হয়ে যায় । আমাদের দেশের ধর্ষণের ঘটনার অনেক আসামী প্রশাসনের অভাবে পার পেয়ে যায় । তাই তারা হুমকী দিয়ে ভয় দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছের লোকজনকে মামলা না করতে বাধ্য করে । এক্ষেত্রেও কি তাই হতে যাচ্ছে ? বাংলাদেশে ২০০৯ সনের ১৪ই মে হাইকোর্ট ডিভিশন সেক্সুয়াল হ্যারাজমেন্ট এর উপর একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করে বিধিনিষেধ আরোপ করে। সেখানে এ বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করার মাধ্যমে কী কী বিষয় নারীকে উত্ত্যক্ত করে এবং মানসিক ও শারীরিক ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে তাকে কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষা জীবনে ক্ষতি বয়ে আনে তা তুলে ধরা হয়েছে। কিছু সংখ্যক আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মাল্টি ন্যাশনাল সংস্থা অবশ্য এ নীতিটি মেনে নিয়ে তাদের সংস্থায় তা কাজে লাগাচ্ছে। তবে সরকারী সংস্থা সমূহে এখনও সেরকম কোন পলিসি তৈরি হয়েছে বলে এ পর্যন্ত শুনিনি। যদিও সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন বলেছেন এবং মন্ত্রিগনও তাদের বক্তৃতায় তা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেরকম কোন উদ্যোগ নজরে পড়েনি । বর্তমানে নারী নির্যাতনের ভুক্তভোগীকে সহায়তার জন্য রয়েছে ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, এর সাথে পুলিশের ভিকটিম সার্পোট সেন্টার । এদের সেবার সুবিধাগুলো নারীদের কাছে পৌঁছানো উচিত।

বর্তমান নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে কাউন্সিলর নিয়োগের বিষয়টি উঠে এসেছে। কিন্তু পলিসি তৈরি করতে সরকার কেন এখনও পিছিয়ে আছে? শুধু পলিসি নয়, সরকারের উচিত হবে, এক্ষত্রে পুলিশ বাহিনীকে কার্যকর হতে দেয়া। যৌন হয়রানী রোধে বাংলাদেশের সরকারী ও বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানসমুহে নিজস্ব সেফটি নেট ও মেকানিজম থাকা জরুরী । এ ব্যাপারে সরকারের সুস্পষট নির্দেশনা ও পলিসি কার্যকরীভাবে থাকা উচিত

হুমায়ুন ফরীদি : দেশটা ক্রমশঃ বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে

তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীর ছিলো সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব। এই মর্মান্তিক মৃত্যু শুধু যে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতি–তা না; এটা গোটা পৃথিবীর জন্যই ক্ষতি। আর এই ধরনের ক্ষতি কখনো পূরণ করা যায় না। একজন তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীর হতে গেলে যতটা জ্ঞান দরকার, যতটা বুদ্ধিমত্তা দরকার, যতটা মননশীলতা দরকার, যতটা শিক্ষা দরকার সেটা অর্জন করতে অনেক দিন লাগে ।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কী করছে জানি না। সড়কগুলো কবে ঠিক হবে জানি না। শুধু ভোট পাওয়ার জন্য রাজনীতি আর দেশের উন্নয়নের জন্য রাজনীতি এক কথা নয়। আমাদের দেশটাকে রাজনীতিবিদরা যখন যথার্থভাবে ভালোবাসবেন, যখন যথার্থভাবে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জেগে উঠবে, তখনই এই সংস্কারগুলো করা সম্ভব। দেশটা ক্রমশঃ বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। সেটা শুধু একা আমার জন্যে না– আমার একার কথা আমি ভাবছিনা–একটা সম্প্রদায় হিসেবে আমি ভীত হয়ে পড়েছি। দেশটা চলছে কীভাবে?

আর্সেনিক সমস্যা, পল্যুশন সমস্যা, সাউন্ড পল্যুশন– এইসব সমস্যা যারা করছে এবং দুর্নীতি করছে, যারা অপরাধ করছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। কয়েকটা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেই কিন্তু এসব বন্ধ হয়ে যাবে।

খাওয়ার মধ্যে বিষ, সবজি ও ফলমূলে কার্বাইড, মাছের মধ্যে ফর্মালিন–এগুলো যারা করে তাদেরকে কেন বড় ধরনের শান্তি দেয়া হয় না? সরকারের খাজাঞ্জিখানায় আমাদের ট্যাক্স যাচ্ছে না? এই ট্যাক্স দিয়ে আমরা কী পাচ্ছি সরকারের কাছ থেকে? রাস্তায় বেরুলে পুলিশ বা র‌্যাব মেরে ফেলবে। তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?

আমার এক বন্ধু চলে গেছে বিদেশে। আমি তাকে বললাম, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে তুই দেশ ছেড়ে চলে গেলি! ও আমাকে অদ্ভুদ একটা কথা বলেছিলো। ও বললো, এই দেশটার জন্য যুদ্ধ করি নাই, বন্ধু। যেই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম সেটা এই দেশ না। এই দেশটা কুৎসিত হয়ে গেছে, এই দেশটা বেঁচে থাকার জন্য অমানবিক এবং বিশ্রী। এরকম অসভ্য একটা পরিবেশে আমি কেন থাকবো? আমি তো সভ্য মানুষ।

আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আছে যে আমরা হচ্ছি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। কিন্তু কোথায়, কোথায় আমরা শ্রেষ্ঠ? আমরাতো শ্রেষ্ঠত্ব দাবী করতে পারি না। আমাদের দেশের যিনি নোবেল পুরস্কার পেলেন তাকে আমরা অপমান করি। কল্পনা করা যায়?

এই দেশের শিক্ষকরা, আল্লাহর পরই যাদের অবস্থান, তারা ছাত্রীদের উপর যৌন নিপীড়ন করে।

সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষটি নাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সব অযোগ্য মানুষ ক্ষমতা নিয়ে বসে আছে। একটা মুর্খলোক কী দেবে মানুষকে? সে মানুষকে কোন পথ দেখাবে? সে তো নিজেই অন্ধ। তার তো জ্ঞান নাই। এই অবস্থায়–আমার প্রশ্ন– আমরা এখন কী করবো?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ আমাদের প্রিয় শিক্ষক

আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষকদের মধ্যে তাঁকে মনে হত প্রায় রাজপুত্রের মতো। তাঁর উন্নত সুদর্শন কান্তি, রুচিস্নিগ্ধ ব্যক্তিত্ব ও অভিজাত মেধা চোখে না পড়ে উপায় ছিল না। সুচারুভাষী মুরশিদ তাঁর পরিশীলিত মনন, শাণিত শিল্পরুচি ও সচেতন প্রাণনা দিয়ে অপরিচিতদেরও অনায়াসে আকর্ষণ করতেন। তাঁকে আমার প্রথম দেখা ও চেনা এমনি একজন অপরিচিত হিসেবেই।

১৯৫৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আমার ইংরেজি বিভাগের বন্ধুদের কাছ থেকে প্রথম তাঁর গুণপনার কথা শুনি। তবে তাঁকে কাছে থেকে দেখার এবং তাঁর কথা শোনার প্রথম সুযোগ হয় এর কমাস পরে, ১৯৫৮ সালের প্রথমদিকের কোনো এক সময়। তখন তিনি ফজলুল হক হলের মিলনায়তনে প্রায় একক উদ্যোগে দশ বছরের পূর্ব-পাকিস্তানী সাহিত্যের বিভিন্ন দিকের ওপর সাত দিনব্যাপী একটি সেমিনার-ক্রম পরিচালনা করছিলেন। সে সময় পর্যন্ত আমি আমার নিজের কথা বলার ভঙ্গিকে মার্জিত ও শ্রুতিনন্দন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কারও মুখে সুন্দর ও সুশোভন কথা কানে এলেই তা রক্তের ভেতর বৃষ্টির মতো শুষে নিতে চেষ্টা করি। সেমিনারগুলোয় শোনা স্যারের অনবদ্য বাচনভঙ্গি, রুচিপূর্ণ শব্দচয়ন, শাণিত বৈদগ্ধ্য আমার মনের ওপর এক ধরনের সম্মোহন ছড়িয়ে দিয়েছিল।

অনুষ্ঠান-ক্রমে স্যারের দায়িত্ববোধ, উৎসাহ, ব্যক্তিত্বের দ্যুতি দীর্ঘদিন যে আমার মনের ভেতরটাকে কৃতজ্ঞ ও সশ্রদ্ধ করে রেখেছিল তা টের পেলাম এর বছর তিনেক পর, যখন রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনের সময় এলো। সময়টা তখন খুবই বৈরী, দেশ আইয়ুবী সামরিক শাসনের নির্মম বুটের নিচে নিষ্পিষ্ট, ব্যক্তিস্বাধীনতা শ্বাসরুদ্ধ, বিশেষ করে বাঙালি সংস্কৃতির যে কোনো তৎপরতা প্রায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। পাকিস্তানের মোট তেইশ বছরে পূর্বপাকিস্তানের ওপর পশ্চিমাদের যতরকম নিগ্রহ আর নিষ্পেষণ চলেছে, তার কোনোটিই বর্বরতা এবং নির্দয়তায় এই সময়ের সঙ্গে তুলনীয় নয়। অথচ ঠিক এই সময়ে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী এসে দাঁড়াল আমাদের সামনে। আমরা টের পেলাম সেদিন আমাদের জন্য এই শতবার্ষিকী উদ্যাপন কেমলমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ‘রাবীন্দ্রিক’ ঘটনা নয়, এই বিপজ্জনক উদযাপন সম্ভব হলে তা হবে অবরুদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতির আঙ্গিনায় কিছু দিনের জন্যে হলেও মুক্তির নির্মল হাওয়া বয়ে যাওয়া, আর সেই উজ্জ্বল আনন্দিত পরিবেশের ভেতর নিজস্ব সংস্কৃতিকে রক্তের ধারায় টেনে নিয়ে বাঙালি চেতনার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা।

সেই বৈরী পরিবেশে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়ার ঝুঁকি অনেক। কোনোখানে এ ব্যাপারে কোনো আশান্বিত আগ্রহও দেখা যাচ্ছে না। তবু আমরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষবর্ষের গুটিকয় বন্ধু, এককাট্টা হয়ে ঠিক করেছি যা মূল্য দিতে হয় দেব, কিন্তু আমরা জাতীয়ভাবে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবই। নিজেরা সব না পারলেও কাজটা শুরু করে একটা চলনসই পর্যায় পর্যন্ত এগিয়ে তুলে দেব বড়দের হাতে, তারা পরেরটা করবেন। এই ত্রাস আর ভীতির রাজ্যে কেউ নিজে থেকে এগিয়ে আসতে সাহস পাচ্ছে না, তাই আমাদের নির্বোধ তারুণ্য দিয়ে এই কাজটুকু শুরু না করলে হয়ত এ আলোর মুখই দেখবে না। এত বড় অনুষ্ঠান করতে গিয়ে প্রথমেই মনে আসে সংগঠনের কথা। মনে হল এমন বিরুদ্ধ পরিবেশে এরকম অনুষ্ঠান করতে হলে প্রথমে চাই বিশ্বাসযোগ্য মানুষদের একটা দায়িত্বশীল কমিটি। না হলে সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের মুখে এ টিকে থাকতে পারবে না। প্রথমেই ভাবতে হল কে হতে পারেন এর সাধারণ সম্পাদক যিনি যোগ্যতায় বৈদগ্ধ্যে পরিশীলনে সুধী সমাজের বিশ্বাস ও আস্থা ধরে রাখতে পারবেন। আলোচনার সময় আমাদের সামনে যে নামটি প্রথমেই উঠে এল সে নাম খান সারওয়ার মুরশিদের। বিদ্যা-বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব আর আত্মপ্রত্যয়ে তাঁর চেয়ে চোখে পড়ার মানুষ আমাদের চারপাশে তখন আর কেউ নেই।

তাছাড়া তিনি যে এমন একটা উঁচুমাপের সাংস্কৃতিক দায়িত্ব নেবার জন্য সাংগঠনিকভাবে যোগ্য তার পরিচয় তিনি তো বছর কয়েক আগের সেই সপ্তাহব্যাপী সেমিনার-ক্রম পরিচালনায় দিয়েছেন। কাজেই আপত্তি কোথায়।

আগেই বলেছি, তাঁর যে গুণগুলো আমাকে সবচেয়ে আকর্ষণ করেছিল তাঁর একটি হল তাঁর বৈদগ্ধময় অনবদ্য বাচনভঙ্গি। তিনি মননশীল মানুষ। তাঁর কথার পরতে পরতে তাঁর ভেতরকার চিন্তাশীল মনটিকে প্রতিমুহুর্তে অনুভব করা যেত। তিনি কথা বলতেন কিছুটা থেমে থেমে, ভেবে ভেবে, সবচেয়ে অনিবার্য শব্দটিকে মননলোক থেকে চয়ন করে করে। চিন্তার এই অমসৃণ ও বন্ধুর গতি যে কারও কথাকে কিছুটা আড়ষ্ট বা কৃত্রিম করে তুলতে পারে। মনে হতে পারে নিষ্প্রাণ বইয়ের ভাষা শুনছি। তাঁর ব্যাপারেও তা ঘটত না তা নয়। কিন্তু সে একেবারেই অল্পক্ষণের জন্যে। কিছুক্ষণ শোনার পরই টের পেতাম তাঁর ভেতরকার সজীবতা, স্বতঃস্ফুর্ততা ও উৎসাহের গতি সেই কেতাবি আড়ষ্টতাকে ছাপিয়ে তাঁর কথাকে করে তুলেছে স্বচ্ছন্দ ও প্রাঞ্জল। এই নিক্বনমুখর সাবলীলতা তাঁর সঙ্গীতময় প্রকৃতির একেবারেই নিজস্ব জিনিশ। এই প্রকৃতির সঙ্গে বক্তব্যের তীক্ষ্ণ প্রাণনা যোগ হয়ে তাঁর কথাকে করে তুলত প্রসাদগুণময়। তাঁর উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের ভেতর যে মননের উপভোগ্যতা, চিন্তার আস্বাদ্যতা বা মেধার তীক্ষ্ণতা আমরা পেয়েছি তার সমমাপের জিনিস আমাদের সময়ের খুব অল্প মানুষের মধ্যে দেখেছি।
Murshid-m
রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আয়োজন-উদ্যোগের প্রথম দিকে জাতীয় কমিটি গড়ে ওঠার পর্বে, আমি ছিলাম স্যারের কাছাকাছি। নানান সাংগঠনিক ব্যাপার নিয়ে স্যারের সঙ্গে তখন প্রায়ই কথা হত। কিন্তু কমিটি পূর্ণায়ত হয়ে নানা কার্যক্রম শুরু করে দিলে, দেশের বড় বড় মানুষ আর ব্যক্তিত্বদের পাশে আমরা, এই আয়োজনের প্রথম অস্ফুট উদ্যোক্তারা এক সময় প্রায় হারিয়েই যাই। স্যারের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ কমে আসে, অনুষ্ঠানের পর একরকম তা হারিয়েই যায়। এরপর আমার জীবনে আসে ষাটের দশকের তরুণ লেখকদের সাহিত্য আন্দোলনে জড়িয়ে যাবার দিন। আমাদের এবারের কর্মযজ্ঞ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে, শহরের এ পাড়ায়, ও পাড়ায়। ফলে স্যারের সঙ্গে যোগাযোগের মতো দেখাশোনাও শেষ হয়ে যায়। তবু দূর থেকে সাহিত্য নিয়ে আমার সে সময়কার এই নতুন মাতামাতির খবর যে তিনি কমবেশি রাখছেন তা বুঝতাম তাঁর মুখের ছিটোফোটা হঠাৎ দুয়েকটা কথায়। একদিন দেখা হলে হঠাৎ হেসে বললেন, ‘কী খবর, আমাদের সাহিত্যের ‘লোন ক্রুসেডার’। কথাটা বার দুই তাঁর মুখেই শোনা। বাক্যটার মধ্যে প্রসন্ন শ্লেষের আভাস থাকলেও সত্যিকার আন্তরিকতা নিয়েই কথাটা বলছেন বলে মনে হত। টের পেতাম আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক আমাদের এই সাহিত্য চেষ্টাটিকে যে উপহাস বা তাচ্ছিল্যের চোখে দেখতেন অন্তত তিনি সেভাবে দেখতেন না। এই সসম্মান ব্যাপারটা তাঁর ভেতর সব সময় দেখেছি। যোগ্যকে ন্যায্য মূল্য দেবার ব্যাপারে তিনি অকৃপণ ছিলেন।

তাঁর পরিশীলিত বাচনভঙ্গি ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বের সবচেয়ে জ্বলজ্বলে জিনিস। তাঁর ভেতরকার প্রখর বৈদগ্ধ, তীব্র মননশীলতা, ক্ষিপ্র বুদ্ধিমত্তা, গভীর উপলব্ধি-সবকিছুই তাঁর এই বাচনিক প্রতিভা ও সুললিত কণ্ঠমাধুর্যকে আশ্রয় করেই সারাজীবন দীপিত হয়েছে।

এ তাঁর ফ্যাশান নয়, স্টাইল। এ জন্যে তাঁর কথার সঙ্গে আর কারো মিল নেই। এর মধ্যে ফ্যাশানের মতো যদি কিছু থেকেও থাকে তা অন্যের কাছ থেকে ধার করা কিছু নয়। আর যদি স্টাইল হয়ে থাকে তবে তা অননুকরণীয়।


আগেই বলেছি তাঁর ব্যক্তিত্বের সবচেয়ে স্বতঃস্ফুর্ত প্রকাশমাধ্যম তাঁর বাচনভঙ্গি। কিন্তু কথা তো একদিন বাতাসে মিলিয়ে যায়। সবচেয়ে খুশির ব্যাপার হত যদি তিনি তাঁর গাঢ় সাহিত্যবোধগুলোকে কিংবা দেশ-সমাজ-রাষ্ট্র সম্বন্ধে তাঁর মৌলিক ভাবনাগুলোকে তাঁর মুখের কথার মত স্বতঃস্ফুর্ত ভাষায় লিখে রেখে যেতে পারতেন। নিশ্চিত বলা যায়, তাহলে আমাদের যুগের একজন উঁচু মাপের মেধাবী মানুষ হিসেবে তিনি স্মরণীয় হতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তিনি খুব বেশি লেখেন নি। যেটুকু লিখেছেন তার মধ্যে তাঁর ব্যাপ্ত চিন্তাজগত সামান্যই ধরা পড়েছে। খুবই বেদনাদায়ক যে এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত মৌলিক বই সাকুল্যে একটি– একেবারেই আটপৌরে নামের একটি প্রবন্ধগ্রন্থ: ‘কালের কথা’। বইটি কোনো বিশেষ বিষয়ের ওপর নয়, নিষ্কৃতিহীন কোনো প্রেরণা থেকেও লেখা নয়– দেশ, সমাজ, মুক্তিযুদ্ধ, সাহিত্য, শিক্ষাঙ্গন এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময় লেখা তাঁর বিক্ষিপ্ত কিছু রচনার একটা আধখেচড়া সংকলন মাত্র।

তার চেয়েও যা খেদের তা হল লেখাগুলোর অধিকাংশ তাঁর নিজের তাগিদে লেখা নয়, কমবেশি ফরমায়েসি লেখা। তবু অনুরোধের দায় হিসেবে লেখা এই প্রবন্ধগুলোর যে ব্যাপারটি অবাক করে তা হল লেখাগুলো পড়ার সময় এক মুহুর্তের জন্যও মনে হয় না এগুলো ফরমায়েসি। আচমকা বা আব্দারি লেখার মধ্যে সাধারণত এক ধরনের আড়ষ্টাতা বা কষ্টকল্পনার ব্যাপার থাকে। তাঁর এ লেখাগুলোয় এ ধরনের মননের বন্ধ্যাত্ব্য বা ক্লিষ্টতা নেই। বরং পড়তে গেলে মনে হয় লেখাগুলোর প্রতিটি কথা যেন তাঁর মাথার ভেতর বহুদিন ধরে চিন্তিত, অনুভূত ও পরিস্রুত হয়ে লিখিত হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করেছিল যে প্রতীক্ষার কোনো এক মুহুর্তে তিনি ফরমায়েশটি পেয়েছিলেন। তাই তাঁর ফরমায়েসি লেখাও এমন স্বতঃস্ফুর্ত, আর অন্তর্ভেদী। তাঁর মস্তিষ্ক প্রখর ও জাগ্রত, অন্তর্জগত ও বহির্জগতের অজস্র ব্যাপার নিয়ে অনুক্ষণ অতন্দ্র। তাই লিখুন বা না লিখুন, সারা জীবন তাঁর মস্তিষ্ক এমনি বহু বিষয় নিয়ে চিন্তা প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে লেখার জন্যে উদগ্রীব হয়ে থেকেছে, কিন্তু ফরমায়েশ দিয়ে বা জোরাজুরি করে কেউ তাঁর কাছ থেকে সেগুলো আদায় করে নেয়নি বলে আর সেসব লেখা হয়নি। এমনি অনেক অলিখিত লেখা মস্তিষ্কের খাঁজে বয়ে, প্রকাশের ব্যাথা নিয়ে তিনি অস্বস্ত জীবন কাটিয়েছেন। না-লেখার স্থবিরতা থেকে নিষ্কৃতির উপায় খুঁজেছেন, কিন্তু পথ বের করতে পারেনি। হয়তো সেই লেখাগুলোই কেবল তিনি লিখতে পেরেছেন যেগুলো গুণগ্রাহীরা তাঁর কাছ থেকে নাছোড়বান্দার মতো নিষ্কাসন করে নিতে পেরেছিলেন। ড. মুরশিদের ভেতর একজন শক্তিমান লেখকের ক্ষমতা ও যোগ্যতা ছিল, কিন্তু প্রকাশের ক্ষমাহীন আকুলতা ছিল না, যা লেখকমাত্রেরই থাকে।

আগেই বলেছি বাংলায় লেখা তাঁর একমাত্র বই ‘কালের কথা’। বইটি পড়লেই বোঝা যায় তাঁর লিখিত রচনা তাঁর মুখের ভাষার মতোই স্বতঃস্ফুর্ত। তবে মুখের ভাষার মতো হলেও এর মধ্যে কিছু বাড়তি সম্পন্নতা আছে যা এই লেখাগুলোকে বিশিষ্ট করেছে। তাঁর লেখা সংহত, গভীর ও মননের বিভায় জ্বলজ্বলে। তাঁর লেখায় হৃদয়াবেগ জোরালো, কিন্তু কখনোই তাঁর নির্মম রুচি ও পরিশীলনকে অতিক্রম করে না। ফলে তা এক সংযত বৈদগ্ধ্যের গাঢ়তা নিয়ে ফলে ওঠে। একটা ছোট বাক্য তুলে দিয়ে তাঁর লেখার এই গুণটি পাঠককে বোঝানোর চেষ্টা করি। তাঁর ‘স্বাধীনতা: কিছু স্মৃতি কিছু কথা’ প্রবন্ধের প্রথম বাক্য এরকম: একাত্তর একটি বিশ্বাস, একটি ভয়ংকর ও মহৎ অভিজ্ঞতা, একটা দুর্গম স্মৃতি, চেতনার এক ঝলসানো বিভাজন রেখা।’ পাঠক লক্ষ্য করুন বাক্যটির মধ্যে তাঁর লেখার বৈশিষ্ট্যের প্রায় সবগুলোই এক সঙ্গে উপস্থিত। এ একই সঙ্গে কবিতা, মনন, গভীরতা, পাণ্ডিত্য, বৈদগ্ধ্য, বুদ্ধির ক্ষিপ্রতা ও স্বতঃস্ফুর্ততা। এই হলেন খান সারওয়ার মুরশিদ। এই বৈশিষ্টগুলোকে ‘কালের কথা’য় সমন্বিত করে তিনি এমন এক গদ্যভাষা আমাদের উপহার দিয়েছেন যা আলাদা কেবল নয়, অনবদ্য।

‘কালের কথা’র বিষয়ও নানারকম, লেখক সেগুলোকে আলাদা আলাদা শিরোনামে গুচ্ছবদ্ধও করেছেন। শিরোনামগুলো দেখলেও তাঁর আগ্রহ ও উৎসাহের বহুমুখিতার পরিচয় মেলে। তাঁর লেখাগুলো মূলত প্রবাহিত হয়েছে পাঁচটি ধারায়– মুক্তিযুদ্ধ, রাজনীতি, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে। প্রতিটি বিষয়েই তাঁর চিন্তার স্বকীয়তা আর তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টির ছাপ প্রখর। ড. মুরশিদের মূল অবদান মননের ক্ষেত্রে। এই মননের জগৎ চিরকালই পদপাতবিরল। তাঁর লেখা কোনোদিন গণমানুষের স্বতঃস্ফুর্ত উৎসাহের কেন্দ্রবিন্দু হবে, এমন আশা হয়ত করা যাবে না। কিন্তু তাঁর এই ছোট্ট ও সুসংহত বইখানি যে সম্পন্ন শানিত চিন্তার জন্য বোদ্ধা পাঠককে অনেকদিন প্রলুব্ধ করবে তা অনায়াসেই বলা যায়।

আমাদের অধিকাংশ লেখকের মতো সাহিত্য তাঁর কাছে কেবল ব্যক্তিগত উপভোগ বা একান্ত চর্চার ব্যাপার ছিল না। একে তিনি দেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে। তাই সাহিত্যবোদ্ধার বা লেখক সত্তার পাশাপাশি তাঁর ভেতর সহজেই দেখতে পাই একজন সাহিত্যকর্মী ও সাহিত্য সংগঠকের হৃদয়। নিজের উদ্যোগে পঞ্চাশ দশকে বাংলা সাহিত্যের ওপর সেমিনার-ক্রম আয়োজন বা রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীর সাফল্যে তাঁর সেই যোগ্যতার প্রমাণ মেলে। এর শেষ প্রমাণ রয়েছে নব্বই-এর দশকে এশিয়াটিক সোসাইটিতে বাংলা সাহিত্যের মূল্যায়নের ওপর আর একবার তাঁর বড় ধরনের সেমিনার-ক্রম আয়োজনে। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি ও অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ বা সারা জীবন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যোগ্যতার সঙ্গে পালনেও এর পরিচয় আছে। তাঁর সাহিত্য-দায়িত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ তাঁর সম্পাদিত অভিজাত রুচির ইংরেজি পত্রিকা নিউ ভ্যালিউজ (১৯৪৯-১৯৬৫)। এই পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর ইংরেজি লেখাগুলোও তাঁর সাহিত্য-প্রতিভার প্রমাণ।

সুদর্শন, সুচারুভাষী ড. মুরশিদ আজীবন আমাদের সামনে ছিলেন অভিজাত মূল্যবোধ, উদারতা, পরিশীলন, মার্জিত রুচি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতীক। তাঁর সসম্ভ্রম ব্যক্তিত্ব, মর্যাদাবোধ ও সাহিত্যপ্রেম সব সময় আমাদের ভেতরে শ্রেয়ের স্বপ্ন জাগিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে; আশার প্রতীক হয়ে শক্তি বাড়িয়েছে। উনবিংশ শতকের বাঙালি জীবনে যে রেনেসাঁ জেগেছিল তা ইয়োরোপের মতো প্রাচীন গ্রিসের প্রেরণায় বিকশিত হয়নি। বাঙালির হাতে এ এসেছিল রেনেসাঁ-জাগ্রত ইংল্যান্ডের হাত ধরে। ইংল্যান্ড আর আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ভেতর দিয়ে সেকালে এদেশের জন্ম নিয়েছিলেন এমন কিছু মানুষ যাঁরা উদারতায় মহিমায়, মনুষ্যত্বে, ব্যক্তিত্বের বহুচ্ছরণে ছিলেন ইয়োরোপিয় ‘রেসেসাঁ মানব’দের সমকক্ষ। উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে বিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাঙালিদের ভেতর জন্ম নিয়েছেন এমনি বহু সম্পন্ন মানুষ যাঁরা তাদের অন্তর্লোকের আলোয় সমাজ এবং পরিপার্শ্বকে কমবেশি দীপিত করছেন। রেনেসাঁ-মানবের ঐ গুণাবলী নিয়ে আমাদের সমাজে জন্ম নেওয়া শেষ গুটিকয় মানুষের মধ্যে ড. মুরশিদ একজন।

প্রতিভার অবিস্মরণীয় উদ্ভাসে চারপাশকে তিনি বিচ্ছুরিত করেছেন– তাঁর সম্বন্ধে এমন কথা অত জোর দিয়ে বলব না কিন্তু তাঁর সুষম সুমার্জিত ব্যক্তিত্ব, শ্রেয়োবোধ, পরিশীলিত ও উচ্চায়ত বৈদগ্ধ দিয়ে আমাদের সামনে উন্নত জীবনের যে মানদণ্ড তিনি আজীবন উঁচু করে রেখেছিলেন তার মূল্য অস্বীকার করলে কৃতঘ্নতা হবে।

Tuesday, February 17, 2015

Brief Investment Guide for Trading in the Stock Exchanges





What is stock market?

A stock Market is place where stocks (shares) can be bought and sold



What is quoted company

A quoted company is company whose shares are traded on the stock Exchanges



What type of instruments are traded?

The following type of instruments are traded at Dhaka Stock Exchange (DSE) and Chittagong Stock Exchange (CSE) (a) Equity Shares (b) Debentures (c) Mutual Funds (d) Corporate bonds



What is DSE All Share Price Index? How does one read the index?

The DSE All Share Price Index is a market capitalization weighted index comprising all listed companies. Each stock has been given a weight in the index equivalent to its market capitalization. The base was at 100. Daily price change in index securities is captured in the market capitalization figure and reflected in terms of index movement. The index value compares the days market capitalization vis-a-vis base capitalization and indicates how prices in general have moved over a period of time.



How many brokers operate on DSE and CSE?

The Dhaka Stock Exchange (DSE) has 195 SEC registered trading members/brokers and the Chittagong Stock Exchange (CSE) has 124 registered brokers. Many of these registered brokers have authorized representatives operating on the floor on behalf of the concerned brokers of DSE or CSE. You should execute your deal through a registered broker of a recognized stock exchange or through a registered authorized representative.



How do I deal with a registered authorized representative?

You should send your request in writing for purchase or sale of shares/debentures/mutual funds. The authorized representatives on executing your order furnish you with a purchase/sale note. This purchase/sale note originates from the contract note which is issued by the main broker to the sub-broker. The purchase/sale note would help in resolving any disputes with the authorized representative.



What are the formalities for becoming a client of a broker/authorized representative?

All investors should open accounts with necessary documentary support of proof of identity and get the registration/account number. The features of this opening an account is to reduce the chances of any disputes.



What is the maximum brokerage that a broker can charge?

The maximum brokerage chargeable is at present 1% of the trade value



What is contract/confirmation note?

Contract note is a confirmation of trades done on a particular day for and on behalf of a client. A contract note issued in the prescribed format and manner establishes a legally enforceable relationship between the member and client in respect of the trades stated in that contract note. Contracts note are made in duplicate and the member and client both keep one copy each.



What are the points to be checked by an investors to check the validity of a contract note?

Name and address of trading member, their SEC registration number, details of trade like order No. trade No. trade time, security name, quantity rate, brokerage, settlement no, signature of authorized signatory.



What is a Book Closure/Record Date?

The ownership of shares of companies traded on the stock exchange is freely transferable by registration. However, shares are many times held by buyers without sending it for registration to the company. In order to be entitled to the benefits such as dividend, bonus, rights etc. announced by the company , a buyer would need to send it for registration. The company announces cut off dates from time to time. The list of members on the companies registers as of these cut off dates be the people entitled to the corporate benefits.



What is a no-delivery period?

Whenever a book closure or a record date is announced by a company, the stock exchanges sets up a no-delivery period for that security. During this period, trading is permitted in the security. However, these trades are settled only after the no-delivery period is over. This is done to ensure that investor's entitlement for the corporate benefit is clearly determined.



What is an ex-date?

The first day of the no-delivery is the ex-date viz. If there is any corporate benefit such as rights, bonus, dividend etc. announced for which book closure/record date is fixed, the buyer of the shares on or after the ex-date will not be eligible for the benefits.



How do I execute an order on the stock exchanges?

Select the broker you want to trade with opening an account and fulfill the other formalities. Place orders with the broker in writing. Ask for the order confirmation slip on the day the order is placed. Ask for trade confirmation slip on the day the trade is executed. Ask for contract note at the end of the trade date. Ensure smooth settlement of the trade by delivering securities and funds on time to your broker.



What are the documents you should receive from your broker and when?

Order confirmation slip. After the order has been placed. Trade confirmation slip. After the trade has been executed. Contract Note: with in 24 hours of the trade being executed.



To what extent price of a share can increase or decrease in a day and during a settlement?

Standard upward and downward price limits over the previous days market price applicable for each market day:





Previous days per share market price Limits
Upto Tk. 200 20% but not exceeding Tk. 35

Tk. 200 to Tk. 500



17.5% but not exceeding Tk. 75

Tk. 501 to Tk. 1000



15% but not exceeding Tk. 125

Tk. 1001 to Tk. 2000



12.5% but not exceeding Tk. 200

Tk. 2001 to Tk. 5000



10% but not exceeding Tk. 375

Tk. 5001 and above



7.5% but not exceeding Tk. 600



What is settlement cycle?

Settlement cycle on the DSE/CSE is an account period for the securities traded on the exchanges.
CLEARING AND SETTLEMENT PROCEDURE
Trading Procedure and Settlement:





Accounting Period


Settlement Day

Saturday to Monday


Next Wednesday

Tuesday to Thursday


Next Monday



If I have sold shares when do I deliver them to the broker?

You have to deliver the securities to the broker immediately upon your getting the contract note for sale but in any case before the shares pay-in-day.

If I have bought shares when do I pay money to the broker?

If you have bought shares, you have to pay-in-funds to the broker in such a manner that the amount paid is realized before the funds pay-in-day.

When can I expect to receive funds/securities from the broker?

The securities and the funds are paid out to the broker on the pay-out day.

What should I do if I receive a bad delivery?

All bad deliveries will have to be reported to the clearing house by the buying broker.

What are company objections?

An investors sends the certificate along with the transfer deed to the company for registration. In certain cases the registration is rejected because of signature difference, or if the shares are fake, forged ot stolen or if there's is a court injunction preventing the transfer of the shares etc. In such cases the company returns the shares along with a letter, which is termed as an objection memo. All such cases are identified as company objections.

What is proper transfer deed?

A deed of transfer is considered proper if it is:

(a) in the prescribed format (Form 117)
(b) dated by the prescribed authority (e.g. Registrar of Comaopnies) and its validity period has not expired
(c) duly signed by or on behalf of the transferor and transferee and complete in all receipts.

How does the transfer of shares take place?

After a sale is effected the share certificate along with a proper transfer deed and complete in all respects is sent to the company for transfer in the name of the buyer. A transfer is complete in the books of the company after the transfer is registered in the share transfer register maintained by the company.

What should I ensure while handling over securities which I have sold?

You have to ensure that the transfer deed is of a recent date and not dated prior to the book closure date. Also, you have to ensure that any other particulars are accurately filled in as contained in the share certificate and if there are any corrections made for the information filled in by the seller, such corrections are properly authenticated by all sellers

Why is it important to register the transfer of shares with the company?

All the corporate benefits like dividend, bonus, rights etc. announced by the company are given to those persons whose names appear in the register of members of the company as on the book-closure date or record announced by the company. It is therefore important for the buyer to register the ownership of the shares.

What are some of the common investor grievances?

Non-receipt of shares sent to transfer Non-receipt of corporate benefits Non-rectification of bad delivery by the broker Non-receipt of funds/securities on sale/purchase Introduction of fake, forged and stolen securities Non-rectification of company objections Contract notes not issued by the broker

What will you do if you have any of the above grievances?

First you should inform your broker of the matter. See what he suggests. If you are not satisfied put your complaints in writing to the authority of the stock exchanges. If it is not solved. Apply with your grievances to the Securities and Exchange Commission.

Rights and Obligation of an Investors

The right to access: the best price, the speediest service The right to get: Proof of price, proof of brokerage charged, your money on time, your shares on time, shares that are genuine The right for redress: against fraudulent price, against unfair brokerage, against delays of money of shares, against investor unfriendly companies The obligation to be systematic: open a proper account with your broker; have early deal recorded on an enforceable contact note The obligation to be correct: Keep your shares in good condition; Keep your signature verification records up to date The obligation to be timely: make sure you pay on time when you buy; make sure you deliver shares in time when you sell; make sure you pay your broker his brokerage charge in time; make sure to send shares for transfer in your name in time





What safeguards does a shareholder have for his investment?

Apart from the normal risks involved in the ups and downs of the market, a share holder in a listed company has the protection of a well organized market, the DSE, CSE and the Securities and Exchange Commission (SEC) a statutory body responsible for ensuring an orderly market and protecting the interest of investors, among other things.

Buying in the Primary Market

In order to buy shares issued by a company in the primary market, you will have to fill out a special form, which is obtained from the brokers, the issuing company, or any branch of a commercial bank involved in the particular issue of shares. Photo copies of such forms could also be used.

In such a primary issue the minimum number of shares that can be applied for is usually 50, and applications for higher quantities must be for multiple of hundred.

Application duly perfected and accompanied by check, bank draft or cash as indicated should be sent to a branch of a bank engaged for the purpose or to a share broking company or the company issuing the shares as stated in the prospectus

In the case of the issue of new shares which have a high demand, it is possible that the amount of money the company is seeking from the issue would be found or subscribed fully, before the closing date. Therefore, it is usually advisable to apply for shares in a primary issue within the stipulated times of the prospectus.

If the issue is over-subscribed the applicant will in due course receive a refund of the money paid for not getting shares through lottery. I f your application is accepted and shares are allotted in your name you will be issued a share certificate by the company. However, you will not be permitted to withdraw your investment from the company. This is because share investment as equities have no maturity dates as with debt obligations. The company in which you have purchased shares has not incurred a debt obligation by issuing shares. Further the Companies Act prohibits a company buying back its own shares.

You will in time earn a dividend, when the company declares dividends depending on its profitability. Or else you may be allotted bonus shares or entitled to buy more shares on a rights issue. However, if you wish to covert your shares into cash you can sell in the Stock Exchanges.





Tuesday, January 13, 2015

পরকাল যে সত্যিই হবে তার যুক্তি



১নং যুক্তি-

মানুষ সাধারণত দুটো কারণে মিথ্যা বলে। যথাঃ

১। মানুষ কোন না কোন লোভ বা স্বার্থের বশীভূত হয়ে-অথবা

২। কোন না কোন ভয়ের কারণে।

এ দুটো জিনিস যখন কারও সামনে থাকে না, তখন সে সত্য কথাই বলে এটাই মানব প্রবৃত্তি। আমরা দেখি দুনিয়ার নবী রাসূল সবাই বলেছেন; পরকাল হবে এবং তাঁরা প্রত্যেকেই এমন ছিলেন যে, কোন প্রকার লোভ বা ভয় তাঁদের স্পর্শ করতে পারেনি। কাজেই তাঁরা যখন সবাই একই কথা বলেছেন, তখন আবশ্যই তা মিথ্যা হতে পারে না।

২নং যুক্তি -

যা সত্য সাক্ষ্য তা যত মানুষেই (সাক্ষ্য) দিক না কেন প্রত্যেকের কথা একই প্রকার হয়। আর যা মিথ্যা সাক্ষ্য তা কখনও একটা সঙ্গের অন্যটার মিল হয় না। যেমন একই অঙ্কের সঠিক উত্তর প্রত্যেকটিই একই প্রকার হয়,কিন্তু ভুল উত্তর কখনও একটার সঙ্গে অন্যটার মিল হয় না। এই যুক্তি মোতাবিক দেখা যায় আল্লাহর প্রত্যেক নবী আল্লাহর একত্ববাদ,রিসালত বা নবী রাসূলগণের কার্যকলাপ ও যৌক্তিকতা এবং পরকাল সম্পর্কে হুবহু একই কথা বলেছেন। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, একথা মিথ্যা হলে সবার কথা একই প্রকার হতে পারতো না।


৩নং যুক্তি -

আল্লাহতে বিশ্বাসীগণ আমরা আল্লাহকে এভাবে পেয়েছি যে, যা কিছু আমাদের প্রয়োজন তা সবই তিনিই দেন। আর যা কিছু আমাদের মনের মৌলিক দাবী তা সবই তিনিই পূরণ করেন। এর ব্যতিক্রম আমরা পাইনি। আর লক্ষ্য করা গেছে যে, আল্লাহ সবই দেন বটে কিন্তু প্রয়োজনের পূর্বে দেন না। যেমন দুধের যখন প্রয়োজন ছিল তখন দুধ ঠিকই দিয়েছেন। দাঁতের প্রয়োজন ছিল না বলে দাঁত তখন দেননি। কিন্তু যখনই দাঁতের প্রয়োজন হয়েছে তখনই তিনি দাঁত দিয়েছেন।

দেখা যায় আল্লাহর সব কিছু দেয়ার ধারা মোতাবিক ভালো কাজের জন্য ভালো ফল এবং মন্দ কাজের জন্য মন্দ ফল মানব মনের এ দুটি প্রধান দাবী এখনও পূরণ করেননি। কিন্তু এ দাবী অবশ্যই পূরণ করবেন।

বলা বাহুল্য, মানব মনের সব চাইতে জোরালো এই দাবী দুটো পূরণের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ স্থায়ী জীবনের। যে জীবনের শাস্তি ও পুরস্কার ভোগ করার মত উপযুক্ত সময় পাওয়া যাবে। অর্থাৎ হিরোশিমা ও নাগাসাকির উপর বোমা ফেলে যে লোকটি এক মুহূর্তের মধ্যে কত হাজার হাজার লোককে বোমা বিস্ফোরণ করে মেরে ফেললো তাকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হলে হাজার হাজার বার তাকে মারা দরকার। কিন্তু এই পৃথিবীর জীবনে যেখানে একটা মানুষকে মাত্র একবারই মেরে ফেলা যায়,সেখানে একাধিক ব্যক্তির হত্যাকারীকে উচিৎ শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয়,তাই মানব মনের দাবী হচ্ছে এই যে,এমন একটা চিরস্থায়ী জীবন দিতে হবে সেখানে একাধিক ব্যক্তির হত্যাকারীকে একাধিক বার হত্যা করা যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা এ পৃথিবীর উন্নতির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন এবং মানুষের ভালো করতে গিয়ে চরম জুলুম নির্যাতন ভোগ করেছেন তাদের ব্যাপারে একচেটিয়াভাবে প্রত্যেকের মনের দাবী এই যে,তাদের উপযুক্ত পুরস্কার দেয়া হোক এবং সে পুরস্কার ভোগ করার মত একটা দীর্ঘ সময়ও তাকে দেয়া হোক। মানুষের এই যে মৌলিক দাবী এটা পূরণ করার জন্যই আল্লাহকে কিয়ামত দিতে হবে। আর তা যদি আল্লাহ না ই দেন তবে ন্যায় বিচারক হিসেবে গণ্য হতে পারেন না। (নাউযুবিল্লাহ)

এ আলোচনা থেকে বুঝা গেলো পরকাল হতে হবে মানুষের প্রয়োজনেই। কাজেই তা আল্লাহ দিতে ওয়াদা করেছেন যেন তিনি ন্যায় বিচার করে তা কার্যকর করতে পারেন।

যে ধরনের প্রেমিকা স্ত্রী হওয়ার যোগ্য




লাইফস্টাইল ডেস্ক :: অনেকেই প্রেম করছেন আবার অনেকেই প্রেমে পড়েছেন অথচ যখনই বিয়ের কথা ওঠে তখনই বেশ দ্বিধায় ভুগতে শুরু করেন আপনি। কারণ প্রেম করার সময় তো স্বল্প সময় একসাথে থাকছেন, কিন্তু বিয়ে তো অনেকদিনের ব্যাপার।

তাই বুঝতে পারছেন না আপনি সঠিক মানুষটির সাথেই প্রেম করছেন কিনা যে আপনার জীবনসঙ্গিনী হওয়ার যোগ্য। ভাবছেন কী ভাবে বুঝবেন যে আপনার প্রেমিকা আপনার স্ত্রী হওয়ার যোগ্য। জেনে নিন কিছু লক্ষণ যেগুলো মিলে গেলে বুঝতে পারবেন প্রেমিকাই যোগ্য স্ত্রী-

আপনাদের দুজনেরই যদি অভ্যাসে বেশ কিছু মিল থাকে এবং আপনার প্রেমিকা যদি আপনার শখ এবং অভ্যাসগুলোকে যথেষ্ট সম্মান করে তাহলে আপনি সঠিক মানুষটির সাথেই প্রেম করছেন।

আপনার প্রেমিকা কি প্রায়ই আপনার জন্য রান্না করে নিয়ে আসে? আপনার পছন্দের খাবারগুলো সে যদি পরম মমতায় শখ করে রেঁধে নিয়ে আসে তাহলে আপনি বুঝে নিন আপনি সঠিক মানুষটির সাথেই প্রেম করছেন। আপনার প্রেমিকা সত্যিই আপনার প্রতি দায়িত্বশীল এবং আপনাকে মন থেকেই ভালোবাসে।

আপনার প্রেমিকা যদি আপনার ব্যস্ততার সময় কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় অহেতুক বিরক্ত না করে কিংবা হস্তক্ষেপ না করে তাহলে বুঝে নিন আপনার প্রেমিকা একজন আদর্শ স্ত্রী হতে পারবেন।

আপনার প্রেমিকার মন খারাপ থাকলে তার প্রকৃত কারণটা কি তিনি মন খুলে বলেন? যদি না বলে থাকেন তাহলে তিনি চাপা স্বভাবের এবং এক্ষেত্রে সম্পর্ক সুখের হয় না। আর যদি আপনার প্রেমিকা আপনাকে মন খুলে তার সমস্যা ও মন খারাপের কারণ জানিয়ে দেয় তাহলে বুঝে নিন তিনি হতে পারবেন আপনার স্ত্রী হিসেবে যোগ্য।

আপনার প্রেমিকা কি ক্রমাগত আপনাকে বদলে দেয়ার চেষ্টা করছেন নাকি আপনাকে বদলানোর কোনো চেষ্টা আপনার প্রেমিকা করেন না? আপনার প্রেমিকা যদি আপনি যেমন সেটাই গ্রহণ করে নেন এবং অহেতুক আপনাকে বদলে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি না করেন তাহলে তিনি আপনার জীবনসঙ্গী হওয়ার যোগ্য।

আপনার প্রেমিকা যদি হাস্যোজ্জ্বল হয় এবং খুব একঘেয়ে মূহূর্তগুলোকেও রঙিন করে দেয়ার ক্ষমতা তার থাকে তাহলে তাকেই নিজের জীবন সঙ্গী করে নিন। কারণ এধরণের নারীর সাথে জীবনটাকে কখনই একঘেয়ে মনে হয় না।

আপনার প্রেমিকা যদি আপনাকে নিজস্ব কিছু একা সময় কাটাতে দেয় এবং তিনি নিজেও যদি আপনার উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল না হয়ে থাকে তাহলে তিনি আপনার স্ত্রী হওয়ার জন্য যোগ্য একজন নারী। কারণ সুখী মানুষ হতে হলে প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব কিছু সময় প্রয়োজন যা শুধুই নিজের মত করে কাটানো যায়।

আপনার সঙ্গিনী কি বিপদের সময় আপনাকে নানা রকম ইতিবাচক পরামর্শ ও সমাধান দিয়ে থাকে? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আপনি একজন সৌভাগ্যবান পুরুষ যিনি পেয়েছেন একজন আদর্শ সঙ্গিনী।

ধূমপান ছাড়তে চাচ্ছেন, জেনে নিন কিছু কৌশল



লাইফস্টাইল ডেস্ক :: ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর৷ সবাই আমরা জানি৷ কিন্তু জেনেও জানি না, বুঝেও বুঝি না৷ মানে সব জায়গাতেই এই সাইনবোর্ডটা লাগানো থাকে৷ কিন্তু পড়ে আমরা বিজ্ঞের মতো ব্যাপারটা নিয়ে দু মিনিট ভেবে আবার নতুন উদ্যমে আর একটা সিগারেট ধরাতে থাকি৷আমি-আপনি বললেও এটা সত্যি, আর না বললেও ধ্রুব সত্যি৷ কারণ সিগারেট খাওয়ার ফলে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, হার্টের রোগের মতো ভয়ংকর ব্যাধি আমাদের জীবনে থাবা বসাতে পারে জেনেও আমরা এর মায়া থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারি না৷ আর পারি না বলেই আমরা চেষ্টাও করি না৷ হোক বা না হোক, নিদেনপক্ষে চেষ্টাটা শুরু তো করা যেতে পারে-

১. আপনি হয়তো একদিনে ১২-১৫ টা সিগারেট খান৷ আর এমতাবস্থায় আপনাকে পুরোটা ছেড়ে দিতে বললে আপনার পক্ষে তা সম্ভব নয়৷ তাই চেষ্টা করুন আস্তে আস্তে সিগারেটের সংখ্যাটা কমিয়ে আনতে৷দিনে দশটা খেলে কমিয়ে আনুন সাতটায়, পনেরোটা খেলে আজ থেকেই এগারোটা খাওয়ার দৃঢ় সংকল্প নিন৷ তাহলে দেখবেন একদিন এমন আসবে, যে সারা দিনে আপনি হয়তো একটা সিগারেট খেয়ে দিব্যি রয়েছেন৷

২. পুরোপুরি যদি নিজেকে ধূমপান থেকে মুক্ত রাখতে চান , তাহলে নিকোটিনের স্বাদ আর গন্ধকে কাছে ঘেঁষতে দেবেন না৷তাই আপনার ঘরে ফার্নিচারের নীচে বা চারপাশে অল্প বেকিং সোডা ছড়িয়ে রাখতে পারেন৷ আশেপাশে কেউ সিগারেট খেলেও নাকে আর নিকোটিনের গন্ধ আসবে না৷

৩. সিগারেট ছাড়ার আর একটা ভালো বিকল্প চুইংগাম৷ মুখে চুইংগাম, ললিপাপ বা লজেন্স রাখুন৷ এতে সবসময় চিবোনোর একটা অনুভূতি থাকবে৷ সিগারেটের দিকে মন ছুক ছুক করবে না৷

৪. যদি ধূমপান ছাড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন, তাহেল প্রথমেই সেইসব জায়গায় যাওয়া এক্কেবারে বন্ধ করে দিন যেখানে আপনি একসময় আয়েশ করে সুখটান দিতেন৷ বা প্রথম যেখানে লুকিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে সিগারেটে টান দিয়েছিলেন তার দশহাতের মধ্যে পা রাখবেন না৷

৫. সিগারেট না খেয়ে মনটা অশান্ত হয়ে উঠছে? কুছ পরোয়া নেহি৷ পছন্দসই গান চালিয়ে মনটাকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করুন৷

৬. ঘরে রুম ফ্রেশনার বা অন্য সুগন্ধী রাখুন৷ আপনার সিগারেট ছাড়ার সহায়ক হবে৷

৭. সকালে ব্রেকফাস্টের পর, দুপুরে লাঞ্চের পর সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আস্তে আস্তে ছাড়ুন৷ চাইলে ওই সময়ে নিজেকে অন্য কোনও কাজে ব্যস্ত রাখুন৷আর যদি সিগারেটের ধোঁওয়া ছাড়া আপনি কফির কাপের দিকে হাত না বাড়ান, তাহলে সিগারেটের সঙ্গে সঙ্গে কফিটাও বাদ দিয়ে দিন জীবন থেকে৷ চায়ের পেয়ালাতেই আপাতত আপনাকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে৷

৮. অ্যাশ ট্রে, লাইটার, দেশলাই বাক্স, সিগারেটের প্যাকেট নিজের চৌহদ্দি থেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে ফেলুন৷ এগুলো চোখের সামনে থাকলেই সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছেটাকে আপনি নিয়ন্ত্রণ না-ও করতে পারেন৷

৯. কাজের ফাঁকে ফাঁকে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা দ্রুত বদলে ফেলুন৷ না হলে যে একদিন মারণরোগের প্রকোপে আপনার জীবনটাই পালটে যাবে৷ কাজের ফাঁকে ফল বা কোনো স্ন্যাকস খেতে পারেন৷ খেতে ইচ্ছে না করলে খানিকক্ষণ কম্পিউটার গেম খেলুন আর তাতেও যদি বসের চোখরাঙানি থাকে, তাহলে অগত্যা ফোনেই না হয় কথা বলে সময় কাটান৷ মন থেকে সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছেটা আস্তে আস্তে চলে যাবে৷

ব্রনের দাগ দূর করার ৮ টি সহজ উপায়


ব্রন খুবই অস্বস্তিকর একটি সমস্যা। কম বেশি সবাই এ সমস্যায় ভোগেন। তবে মুখে ব্রন উঠে যতটা না অস্বস্তিতে ফেলে তার থেকে বেশি অস্বস্থি হয় যখন ব্রনের দাগ মুখে গেড়ে বসে। আর তখনই ভর করে দুশচিন্তার। যার কারনে ব্রনের প্রকপ আরও বেড়ে যায় এবং তার থেকে সৃষ্টি হয় দাগের। তাই ব্রন ও ব্রনের দাগের সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য রয়েছে ব্রনের দাগ দূর করার সহজ ৮ টি উপায়। চলুন জেনে নেই ব্রনের দাগ দুর করার উপায়গুলি -

১. ব্রনের দাগ দূর করতে মধু একটি কার্যকারি উপাদান। রাতে ঘুমানোর আগে মুখ ভালো করে ধুয়ে মধু লাগান। সারারাত তা রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে তা ধুয়ে ফেলুন।

২. মধুর সাথে দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে শুধুমাত্র দাগের উপর লাগিয়ে ১ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। চাইলে সারারাতও রাখতে পারেন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই আপনার মুখের দাগ দূর হয়ে গোছে।

৩. ২-৩ টি এস্পিরিন ট্যাবলেট এর সাথে ২ চামচ মধু ও ২-৩ ফোঁটা পানি মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। এস্পিরিন এর স্যালিসাইলিক এসিড ব্রণের দাগ দূরের জন্য খুবই সহায়ক।

৪. ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা ও সামান্য পানি একসাথে মিশিয়ে মুখে ২-৩ মিনিট ঘষুন এবং শুকানোর জন্য কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর মুখ ধুয়ে এর উপর কোনও ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা অলিভ অয়েল লাগান। সপ্তাহে অন্তত দু’দিন এটি ব্যাবহার করুন, ভালো ফল পাবেন।

৫. দিনে দুইবার অ্যালোভেরা জেল মুখে লাগান এবং ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি শুধুমাত্র ব্রণের দাগই দূর করবে না, বরং আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং টানটান হবে।

৬. একটি লাল টমেটোর কিছু অংশ নিয়ে তার রস নিন। এরপর তা শশার রসের সাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগান। ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩ বার এই প্যাকটি লাগান। ব্রণের দাগ দূর তো হবেই সেই সাথে রোদে পোড়া দাগ দূর হয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

৭. লেবু একটি প্রাকৃতিক ব্লিচ। লেবুর রসের সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে একটি তুলার বলের সাহায্যে তা মুখে ৩-৪ মিনিট ঘষুন। যদি সেনসিটিভ স্কিন হয় তাহলে এর সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে নিবেন। সম্ভব হলে ১ চামচ লেবুর রসের সাথে ২ চামচ ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। ভিটামিন ই ক্যাপসুল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।

৮. ১ টেবিল চামচ লেবুর রস, ১ টেবিল চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ আমন্ড তেল, ২ টেবিল চামচ দুধ একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। একটানা ৭-১০ দিন এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে ব্রণ থাকা অবস্থায় দুধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।-সূত্র: উইমেন্স মেকওভার।

ছেলেদের কাছ থেকে যে ৫ টি জরুরী বিষয় শেখা উচিত মেয়েদের

কে বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ তা নিয়ে বিতর্কে জড়ালে ছেলে এবং মেয়ে উভয়য়েই নিজেদের দিকেই আঙুল দেখাবেন। মেয়েরা দাবি করবেন তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং অপরপক্ষে ছেলেরাও দাবি করবেন ছেলেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই এই ধরণের তর্কে না যাওয়াই ভালো। কারণ আসল কথা হলো কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নন। নারী-পুরুষ উভয়েই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেকেরই অনেক কিছু শেখার রয়েছে অন্য মানুষটির কাছ থেকে।

এরই প্রেক্ষিতে, আজকে আপনাদের জন্য রয়েছে ছেলেদের এমন কিছু গুনের কথা যা মেয়েদের আয়ত্ত করা উচিৎ। অনেক মেয়ে ভাবতে পারেন, কী এমন গুন রয়েছে যা শিখতে হবে? কিন্তু মুখ বাঁকা করলে তো হবে না, আসলেই কিছু ব্যপারে ছেলেরা মেয়েদের চাইতে বেশি দক্ষতা রাখেন। এই দেখে আবার কোনো ছেলে নিজেদের সুপারহিরো ভেবে বসবেন না যেন! কারণ পরবর্তী ফিচারে আসবে মেয়েদের কাছ থেকে যে জিনিসগুলো শিখতে পারেন ছেলেরা।
ছেলেদের যুক্তিতর্কের ক্ষমতা

মেয়েরা এই কথা মানুক বা না মানুক, ছেলেরা কিন্তু যুক্তি দেখিয়ে তর্ক করতে বেশি পারদর্শী। তারা কোনো তর্কে জড়ালে অযৌক্তিক কোনো কথা বলা একেবারেই পছন্দ করেন না এবং বলেন না। তাদের কাছে নিজেদের কথার পেছনে যুক্তি দাঁড় করানোটাই থাকে মূল লক্ষ্য। কিন্তু মেয়েরা তর্কের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার যুক্তি মানেন না। মেয়েদের কাছে তর্কে জিতে যাওয়াটা থাকে মূল লক্ষ্য। সে কারণে তারা কী যুক্তি দিচ্ছেন তা নিজেরাই বুঝতে পারেন না ফলে যুক্তি হয়ে যায় অযৌক্তিক। তাই মেয়েদের ছেলেদের কাছ থেকে যৌক্তিক কথা বলার এই গুনটি শিখতে হবে।
অযথা আবেগী না হওয়া

কথায় বলে মেয়েরা মস্তিষ্ক দিয়ে নয় হৃদয় দিয়ে ভাবেন। আসলেই কথাটি সত্য। কিন্তু ছেলেরা মস্তিষ্ক দিয়েই ভাবেন। একারণে ছেলেরা খুব বেশি আবেগী হন না কোনো ব্যাপারে। এটি অবশ্যই একটি ভালো গুন। কারণ আবেগ মানুষকে শুধুমাত্র পেছনে টেনে নেয়। সফলতা আনতে চাইলে জীবনে আবেগের কোনো স্থান নেই। তাই মেয়েদের উচিৎ ছেলেদের মতো অযথা আবেগী না হওয়া। হয়তো দেখা গেল যেখানে কেউ অসুস্থ সেখানে ছেলেরা এগিয়ে এসে সাহায্য করলেন কিন্তু মেয়েরা কাঁদতে শুরু করে দিলেন। হ্যাঁ, মেয়েদের মন নরম হয় কিন্তু সব সময় তো আবেগী হয়ে পরা ঠিক নয়। মাথা খাটিয়ে কাজ করা উচিৎ।
অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা না করা

মেয়েরা অনেকবেশি অনুভূতিপ্রবণ হয়ে থাকেন। এবং অনেক ক্ষেত্রে অনেক বেশি মাত্রায় অনুভূতিপ্রবনতা দেখান। এবং বেশি বেশি চিন্তা করেন। দেখা যায় অনেক সামান্য ব্যাপারে অযথাই বেশি কিছু চিন্তা করে নিয়ে গণ্ডগোল পাকিয়ে বসে থাকেন অনেক মেয়ে। কেউ ফোন ধরছেন না, ভেবে বসবেন তাকে এড়িয়ে চলছেন অথবা কোনো মারাত্মক বিপদে পড়েছেন। কিন্তু হয়তো দেখা গেল আসলে যাকে ফোন করা হয়েছে তিনি ঘুমাচ্ছেন। এই ধরণের অতিরিক্ত চিন্তা করা ছেলেদের একেবারেই পছন্দ নয়। তারা হয়তো এতোটুকুই চিন্তা করবেন যে ‘সে হয়তো ব্যস্ত’। তাই মেয়েরা অযথা চিন্তা না করে কোনো ঘটনাকে সাধারণভাবে ভাবতে শিখুন।
স্বপ্নের দুনিয়ায় বসবাস না করা

ছেলেরা স্বপ্নের দুনিয়ায় বসবাস করতে একেবারেই পছন্দ করেন না। ছেলেদের মতে স্বপ্নের দুনিয়া বলতে কিছুই নেই। নিজের জীবনটাকে স্বপ্নের মতো সাজাতেই তারা ব্যস্ত থাকেন। মেয়েরা সব সময় স্বপ্নের দুনিয়ায় বসবাস করেন। তাদের কাছে বেশীরভাগ জিনিসই স্বপ্নময়। স্বপ্নের রাজপুত্র, স্বপ্নের ঘরবাড়ি সব। কিন্তু এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হন মেয়েরাই। কারণ স্বপ্ন সব সময় পূরণ হয় না। তাই মেয়েদের বলছি, স্বপ্নের দুনিয়ায় বসবাস না করে ছেলদের মতো বাস্তব দুনিয়ায় থাকা শিখুন।
যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নেয়া

ছেলেরা নিজেকে যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেন। এটি অনেক বড় একটি গুন। অনেকে বলতে পারেন মেয়েদের নিজেদের ঘর ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে চলাটা কি এর মধ্যে পড়ে না। হ্যাঁ অবশ্যই পড়ে। কিন্তু এটি একটি বাধ্যগত মানিয়ে নেয়া। এটি করতেই হবে। কিন্তু কোথাও ঘুরতে বা বেড়াতে গেলে ‘এখানে থাকবো না, ঐখানে যাবো না, এটা করবো না, ঐটা সমস্যা’ এই ধরণের কথা সব সময় একটি মেয়ের মুখ থেকেই শোনা যায়। বাধ্য না হলে নিজেকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত নন মেয়েরা। কিন্তু ছেলেরা এই কাজে পারদর্শী। মেয়েরা যদি নিজেকে যে কোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার এই দক্ষতাটি আগেই আয়ত্ত করতে পারেন তবে পরবর্তীতে শ্বশুরবাড়িতেও আশা করি মানিয়ে নিতে বেশি সমস্যা হবে না।

যে ৬টি কারণে খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত ভাত

যে ৬টি কারণে খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত ভাত


(প্রিয়.কম) অনেকেই এই ধারণা রাখেন যে ভাত খেলে শরীরে পানি জমে, বাতের ব্যথা বাড়ে, ওজন বাড়ে ইত্যাদি। ভাত আসলেই খাওয়া উচিত কি না সেটা নিয়েও রয়েছে নানারকম মতামত। অনেকে মনে করেন ভাত খেলে সহজে ঘুম পায়, মোটা হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। আবার অনেকে মনে করেন ভাত আর রুটির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে বিতর্ক যাই থাকুক না কেন, ভাতের গুণ রয়েছে কিন্ত যথেষ্ট। ভাতের নানা গুণ সম্পর্কে এবং ভাত কীভাবে সঠিক ডায়েটে জায়গা করে নিতে পারে জেনে নিন।
১.লো-ক্যালরি ফুড

একটা ধারণা বেশ ভালোভাবেই প্রচলিত আছে যে, ভাত খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু অন্য আর সব খাবারের মতোই ভাত পরিমিত পরিমাণে খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। ১০০ গ্রাম ভাতে রয়েছে প্রায় ১০০ ক্যালরি। ফ্যাটের পরিমাণও খুব কম, ভাত্র ০.৪ গ্রাম। আটার রুটির প্রায় সমান ক্যালরি। ময়দা, পরোটা বা তেলে ভাজা পুরির তুলনায় ভাত খাওয়া উপকারী। দিনে দু বার ভাত খেতেই পারেন, তবে আপনার উচ্চতা ও ওজন অনুযায়ী ভাতের পরিমাণ নির্দিষ্ট রাখুন।
২.ভিটামিনের আধার

ভাতে যথেষ্ট পরিমাণে নিয়াসিন, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, আয়রন, থিয়ামিন ও রাইবোফ্লাভিন রয়েছে।
৩.সহজে হজম হয়

কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার হওয়ায় ভাত সহজে হজম হয়। হজমপ্রক্রিয়ার জন্য ভাত খুব উপকারী। বিশেষ করে ডায়রিয়া হলে জাউভাত খুব ভালো কাজে দেয়।
৪.বাওয়েল মুভমেন্টের জন্য উপকারী

ভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে স্টার্চ। স্টার্চ স্বাভাবিক বাওয়েল মুভমেন্টের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া নিঃসরণে সহায়তা করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে বা বদহজমের সমস্যা হলে ভাত খাওয়াটাই ভালো।
৫.হাইপারটেনশনে নিরাপদ

ভাতে কোলেস্টেরল ও সোডিয়াম নেই। হাইপারটেনশনের সমস্যা যাদের রয়েছে তারা ডায়েটে ভাত রাখার চেষ্টা করুন।
৬.গ্লুটেন মুক্ত

গম, বার্লি, ওটসে এক ধরনের বিশেষ প্রোটিন রয়েছে 'গ্লুটেন', যা অনেকেই হজম করতে পারে না। ভাতে গ্লুটেন না থাকায় যারা গ্লুটেন-ফ্রি ডায়েট মেনে চলেন তাদের জন্য ভাত উপযোগী। এ কারণেই পেটের সমস্যার সময় জাউভাত খেলে উপকার পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া

তর্ক বিতর্কের প্রতিযোগিতা



স্কুল-কলেজে অনেক ছেলেমেয়েই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। শুধু তর্কের খাতিরে তর্ক না, অনেক জরুরি বিষয় নিয়ে সেখানে আলোচনা সমালোচনা হয়। একপক্ষ আরেকপক্ষকে তর্কে হারিয়ে জিতে যায় এই প্রতিযোগিতায়। এই বিতর্কের প্রতিযোগিতা এখন স্কুল-কলেজের সীমানা পেরিয়ে দেশের বাইরে যেয়ে পোঁছেছে।

কয়েকদিন আগেই জার্মানির বার্লিনে হয়ে গেল ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ। এটি ছিল বিশ্ব বিতর্ক প্রতিযোগিতার ৩৩তম আসর। এই বিতর্কে এবার ৮২ টি দেশের প্রায় ৪০০ টি দল অংশ নেয়। বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আকিব ফারহান হোসেন ও রাতিব মুর্তজা আলীর দল। বাংলাদেশের এই দুই বিতার্কিক ‘ইংলিশ এজ সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ ক্যাটাগরির মূল পর্বে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন এবং বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত এই বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হন। তাঁদের এই সাফল্য শুধু তাঁদের না, পুরো দেশবাসীর।

তর্কবাগীশ হতে চাইলে-

কথায় আছে, যেই মুলোটা বাড়ে তা পত্তনেই বোঝা যায়। তাই ছোটবেলা থেকেই স্কুলপর্যায়ে যেসব বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় সেগুলোতে অংশগ্রহণ করতে হবে। বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য অনেক বিষয় সম্পর্কে প্রচুর পড়ালেখা করতে হয়। আর যেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হবে তা সম্পর্কে ভালোভাবে না জানলে প্রতিপক্ষের সাথে সমান তালে তর্ক করা যাবে না। তাই ওই নির্দিস্ট বিষয়ে জ্ঞানের পরিধি আরও ব্যাপক হতে হয়।

আশেপাশে কোথায় কি ঘটছে প্রতিনিয়ত এই ব্যাপারে জানতে হলে অবশ্যই প্রতিদিন সবাদপত্র ও খবর দেখার অভ্যাস করতে হবে। এছাড়াও এখন বাজারে অনেক বই পাওয়া যায় সাধারণ জ্ঞানের। এগুলো পড়লে সহজেই জানা যাবে দেশ ও বিদেশে কখন কি হচ্ছে, কবে কোন আইন টি পাশ হয়েছে, কার সাথে কি চুক্তি হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে। যা একজন তার্কিকের বিতর্কের জন্য অবশ্যই জানা থাকা জরুরি।

এখন আসা যাক বিতর্ক প্রতিযোগিতার আপনি কিভাবে যুক্তি তর্ক খণ্ডাবেন, কোন কোন ব্যাপার মেনে চললে আপনার পারফরমেন্স ভালো হবে সেই বিষয়ে-

*মানুষ খুব বিপজ্জনক হয় যখন তারা সিরিয়াস ব্যাপারে আলোচনায় বসে। অবশ্যই আপনার বিপক্ষে যে থাকবে সে আপনার প্রতিটা কথা নোট করে পাল্টা জবাব খুঁজবে। আর বিচারকদের খুশি করা তো প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। তাই আপনাকে সাধারণ কিছু পদ্ধতি মাথায় রাখতে হবে।

*বিতর্কের শুরুতেই বিতর্কের বিষয়ে সংজ্ঞা দিতে হবে। তারপর কোন কোটেশন, কবিতার দুটি লাইন বা এমন কিছু উল্লেখ করুন যা আপনার বিতর্কের বিষয়ের সাথে যায়।

*গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে, দর্শক ও বিচারকদের দিকে তাকিয়ে কনফিডেন্টলি আপনার বক্তব্য শুরু করুন। বক্তব্যের শুরুতে আমম...উউউ...এরকম করবেন না।

*বিতর্ক শুরুর ভূমিকাটা বেশি বড় করবেন না। সরাসরি যেই বিষয়ে বিতর্ক সেই পয়েন্টে চলে আসুন। যদি বিতর্কের বিষয় কোন সমস্যা সম্পর্কিত হয় যেমন- ‘বাংলাদেশের যানজট সমস্যা’ তাহলে এই সমস্যার কারণে কোন কোন দিকে সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং এই সমস্যা নিরসনের উপায় নিয়ে বলবেন।

*অবশ্যই উদাহরণ থাকতে হবে আপনার বক্তব্যের মধ্যে। যদি আপনি সমস্যার সমাধান বলতে যান তাহলে আপনাকে সমস্যা অনুযায়ী উদাহরণ, সমীক্ষা ও বিশেষজ্ঞের মত উল্লেখ করতে হবে।

*অপরপক্ষের তার্কিক কি বলেছে সেগুলো লাইন আপ করে রাখবেন বা লিখে রাখবেন এবং এর বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে বোঝাবেন উনার দেখার দিকটা বা সমাধানের উপায়*টা ভুল ছিল, আপনারটা নয়।

*এটা মনে রাখবেন যে যত গুরুগম্ভীর বিষয়ই হোক না কেন, আপনার উপস্থাপনার উপরই দর্শকদের দৃষ্টি থাকবে। তাই যুক্তিতর্কের সময় আপনার উপস্থাপনা ও বচনভঙ্গি যেন সাবলীল কিন্তু জোরালো হয়।

*সবসময় আইকন্টাক্ট মেনে চলবেন। বিশেষ করে বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলীর উপর চোখ রেখে কথা বলবেন। এছাড়াও উপস্থিত দর্শকদের দিকে তাকিয়েও কথা বলবেন। এতে করে আপনার বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

*সবশেষে আপনার বক্তব্য শেষ করার সময় পুরো বিষয়বস্তুটি আবার সংক্ষিপ্ত আকারে বলুন, বিশেষ বিশেষ পয়েন্টগুলো তুলে ধরুন এবং সমস্যা সমাধানের উপায় বলুন। শেষ করার আগে সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে আপনার বক্তব্য শেষ করুন।

বিতর্কটাকে মজা নিয়ে উপভোগ করুন। কখনোই বেশি মানুষ দেখে নার্ভাস হয়ে যাবেন না বা স্ট্রেস নেবেন না। আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীকে শত্রু ভাবার কোন কারণ নেই। স্টেজের বাইরে এরাই হতে পারে ভালো বন্ধু। নতুন মানুষের সাথে মিশতে পারছেন, নতুন নুতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারছেন, আপনার অভিজ্ঞতা বাড়ছে এসব ভেবে বিতর্ককে ইতিবাচক ও শিক্ষণীয় ভাবুন।

ধর্ম ও মানবসভ্যতা



বিতর্ক কেন করি? এই প্রশ্নের জবাবে মোটামুটি সব বিতার্কিক একটি কথাই বলবেন- আমরা যুক্তি দিয়ে সত্যকে বিচার করতে চাই। আমরা কুসংস্কার ও অজ্ঞতার ঊর্ধ্বে প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে নিজেদের দাবি করি। আর তাই যৌক্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সত্যকে বিভিন্ন আঙ্গিকে দেখার প্রয়াস করি। অথচ সভ্যতার শুরু থেকে আজ অবধি সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় ধর্ম নিয়ে সদা তর্কে লিপ্ত হলেও দেশের বিতর্কের মঞ্চে বিতর্ক করতে খুব বেশি দেখা যায়না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে বলে কিংবা হয়তো ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞান না থাকার কারনে আয়োজক ও বিতার্কিক উভয়েই বিতর্কে ধর্মের প্রসঙ্গ সচেতনভাবে এড়িয়ে চলেন। যদিও বা কখনও ধর্ম নিয়ে বিতর্কের বিষয় নির্ধারন করা হয়, তখন সংজ্ঞায়নের বেড়াজালে ফেলে ধর্মের নেতিবাচকতা নিয়ে কথা না বলার সুকৌশল অবলম্বন করা হয়। অবস্থা দেখে মনে হয়, ধর্ম নিয়ে বিতর্ক করলে যেন জাত চলে যাবে। তবে এটাও ঠিক যে, ধর্ম সম্পর্কে খুব অল্প জ্ঞান নিয়ে বিতর্ক করার চেয়ে এড়িয়ে চলা উত্তম। মানব সভ্যতা ও ধর্মীয় ইতিহাস নিয়ে আমার সীমিত পড়াশুনার ফলে অর্জিত কিছু তথ্য জানানোর জন্যে এই উদ্যোগ, যেন নতুন বিতার্কিকরা ভবিষ্যতে ধর্ম নিয়ে বিতর্ক করতে তথ্যাভাবে অস্বস্তিবোধ না করেন, ধর্মকে ছোট করার জন্যে কিংবা নাস্তিকতাবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে নয়।

ছোটবেলায় সমাজবিজ্ঞান বইয়ের সুবাদে আমরা সবাই জানি যে, আজ থেকে প্রায় ১৪০০০ বছর আগে “মনু” বা “মনা”- অর্থাৎ অতিপ্রাকৃত শক্তির ধারনা থেকে মুলত ধর্মের উদ্ভব। যদিও আব্রাহামীয়(Abraham/ইব্রাহীম(আঃ)এর উত্তরসূরি) ধর্মত্রয়(ইহুদীবাদ, খ্রিস্টবাদ ও ইসলাম) মতে প্রায় ৬৫০০ বছর আগ থেকে ধর্ম ও মানুষের উদ্ভব(আদমকে প্রথম মানুষ মনে করে), তবে বিভিন্ন সভ্যতায় মানুষের উদ্ভব সম্পর্কে ভিন্নমত লক্ষ্যনীয়-যেমন, গ্রীক ও রোমান সভ্যতায় ২৫৮৬৮ খ্রিস্টপূর্বে, মিশরীয় সভ্যতায় ২৮০০০ খ্রিস্টপূর্বে (দেবতাদের ১১৯৮৪ বছর, উপদেবতাদের ২৬৪৬ বছর ও মানুষের ১৭৬৮০ বছর), সুমেরীয় ও ব্যবীলননীয় সভ্যতায় ৪০০০০০ খ্রিস্টপূর্বে, চীনা সভ্যতায় ৩৬০০০ খ্রিস্টপূর্বে মানব সৃষ্টির ধারনা পাওয়া যায়। এছাড়া আধুনিক বিজ্ঞান আদিম মানুষের ফসিল দিয়ে প্রায় দেড় লাখ বছর পূর্বে মানুষের অস্তিত্ব প্রমান করেছে। তবে ঐতিহাসিকরা অন্তত এই বিষয়ে একমত যে, সভ্যতার শুরুর দিকের দেবীপ্রধান বহুঈশ্বরবাদের ধারনা ছিল মূলত মানুষের দুর্বলতা ও অজানার প্রতি ভয় থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ও মাতা প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। রাহুল সংকৃত্যায়নের “ভোলগা থেকে গঙ্গা” থেকে আমরা দেখতে পাই যে, আদিম যাযাবর জাতিগোষ্ঠীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধাকে বলা হত “মনা”-যার ঈশ্বর প্রদত্ত শক্তি ছিল বলে মনে করা হত। যদিও তৎকালীন সমাজব্যবস্থা মাতৃপ্রধান ছিল কিন্তু ক্রমান্বয়ে এই যোদ্ধারা যেহেতু সমাজের নিরাপত্তা তাদের হাতে ছিল, যাযাবর সমাজের নিয়ন্ত্রন নিজেদের কাছে নিয়ে নেয়। ধারনা করা হয়, কালের পরিক্রমায় এভাবেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আবির্ভাব ঘটে। আর প্যাগান দেবীদের হটিয়ে দেবতারা রাজত্ব শুরু করেন। সুমেরীয় সভ্যতার ইনানা, ব্যবীলনীয় সভ্যতার ইশথার, কানান(বর্তমান ইসরায়েল) সভ্যতার আনাত, মিশরীয় সভ্যতার আইসিস কিংবা গ্রীক সভ্যতার এপ্রোদিত দেবীদের তুলনায় এল, আমুন, রা, ক্যাওস, তিয়ামাত, আপসু, এপোলো, প্রমিথিউস, জিউস, পোসাইডন ও হেইডিসরা মানুষের কাছে অধিক পূজনীয় হয়ে উঠেন। আর পৃথিবীতে তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন রাজা বা ভূপতিরা। অনেক ইতিহাস বিশারদ মনে করেন যে, শাসন কার্যের সুবিধার জন্য এবং শাসিত শ্রেণীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রাচীন সমাজের অধিপতিরা ধর্মকে ব্যবহার করেছেন। মিশরীয় সভ্যতার ফেরাউনরা যার উৎকৃষ্ট প্রমান। যারা জাদুর দেবী আইসিস এর উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের প্রচার করত। যদিও তারা আমুন ও রা এর মত পুরুষ দেবতাদের উপসনা করত। একই ভাবে ভারতীয় উপমহাদেশেও আমরা ধর্মের পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাব দেখতে পাই। সনাতন ধর্মের প্রথম দিকে দেবীদের উপসনা করা হত এবং সমাজে কোন শ্রেনীভেদ ছিলনা। কিন্তু এর পরিবর্তন ঘটে যখন খ্রিষ্টপূর্ব ১৭০০ শতকের দিকে আর্য্যরা ইরান থেকে ইন্দো উপত্যকায় নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়, যা ঋগবেদে উল্লেখ আছে। রাহুল সংকৃত্যায়নের মতে, আর্য্যরাই প্রথম শ্রেণীপ্রথা(ব্রাক্ষ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) চালু করে এবং মানুষকে ত্যাগে উদ্ভুদ্ব করতে পুনর্জন্মের ধারনার প্রচার ঘটায়। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, বাংলাদেশ ও কলকাতায় যেভাবে দূর্গা, লক্ষী, স্বরস্বতী, কালী দেবীদের পূজা হয়, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ঠিক তার বিপরীতভাবে গণেষ, হনুমান, শিব, কার্তিক দেবতাদের পূজা হয়। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশ ও কলকাতার এই অঞ্চলে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থার ফলে মূলত এই পার্থক্য। যেমনটা আজও গারো উপজাতিদের মধ্যে বিদ্যমান। তবে ধর্মে পুরুষতান্ত্রিকতা আরও ব্যাপকতা লাভ করে একেশ্বরবাদ তথা আব্রাহামীয় ধর্মের বিকাশের পরে। বিশেষ করে ১৪৮০ থেকে ১৭৫০ সাল পর্যন্ত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ডাইনী শিকার(Witch Hunt) এর নামে যখন ৪০০০০ থেকে ৬০০০০ নারীকে চার্চের নির্দেষে হত্যা করা, তখন ধর্মে পুরুষদের নিয়ন্ত্রনের যুক্তি আরো জোরালো হয়।

ঐতিহাসিকদের মতে সর্বপ্রথম ব্যাপকভাবে গৃহীত একেশ্বরবাদ প্রচার করেন তেরাহ(Terah/আযার) এর পুত্র আব্রাহাম (Abraham/ইব্রাহীম(আঃ))। বাইবেলের জেনেসিস মতে, ১৮৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি ও তার জাতি মেসোপটেমিয়ার হারান(পশ্চিম তুরস্ক) থেকে ভূমধ্যসাগরীয় কানান অঞ্চলে আসেন এবং ‘ইয়াহওয়েহ’ বা ‘এলহিম’ এর ধর্ম প্রচার করেন। আব্রাহাম ফেরাউনদের হাত থেকে রক্ষার জন্য তার সৎবোন সারাহকে বিয়ে করেন এবং তার ১০০ বছর বয়সে আইজ্যাক (Isaac/ইসহাক(আঃ))জন্মলাভ করেন। আমরা কোরবানীর ইতিহাসে ইব্রাহীম (আঃ) এর তার প্রিয় পুত্র ইসহাক(আঃ) এর ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত আছি। আইজ্যাক পরবর্তীতে কানানের (বর্তমান ইসরায়েল) পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন করেন। তার পুত্র জ্যাকব(Jacob/ইয়াকুব), যিনি ইতিহাসে ইসরাঈল নামে পরিচিত এবং তার ১২ পুত্রের সম্মিলিত জাতিগোষ্ঠীকে ‘বনী ইসরাঈল’ জাতি বলা হয়। ইসরাঈলীরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে মনে করত এবং তাদের ঈশ্বর ‘ইয়াহওয়েহ’ কে সকল দেবতার ঊর্ধ্বে স্থাপন করত। আর ‘ইয়াহওয়েহ’ এর ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা মিশরে প্লেগের বিস্তার ও নীলনদের মহাস্রোতে ফেরাউন ও তাদের দেবতাদের পতনকে চিহ্নিত করে। তবে মিশর থেকে ফেরাউনদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে(কিংবা শাস্তি দিয়ে) যখন জ্যাকবের উত্তরসূরি মূসা(আঃ)(Moses) ও তার দল ইসরায়েলে আসেন, তখন থেকে সমগ্র ইসরায়েল এক ঈশ্বর ও ধর্মীয় চেতনায় আবদ্ধ হয়। আর তার নাম হয় “ইহুদীবাদ”। তবে ইহুদী শব্দের উত্থান মূলত জ়্যাকবের ৪র্থ পুত্র ইয়াহুদ(Judah/Yudah/Yahudh) থেকে। পরবর্তীতে ইয়াহুদ, লেভি, বেঞ্জামিন ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠিকে সম্মিলিতভাবে ইহুদী বলা হত। ইহুদীদের বিশ্বাস ছিল তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জাতি এবং ‘ইয়াহওয়েহ’ তাদের পবিত্র পূণ্যভূমি ইসরায়েল এর রক্ষাকর্তা। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩২ এর দিকে জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে একটি স্বতন্ত্র জাতি গড়ে ওঠে। কিন্তু খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের দিকে বিস্তৃত রোমান সাম্রাজ্যের কাছে ৬ খ্রিস্টাব্দে পরাজিত হয়ে ইসরায়েলীরা জেরুজালেমের কর্তৃত্ব হারায়। আর রোমান সম্রাট আদ্রিয়ান(Hadrian) ১৩৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজধানী জেরুজালেমের নাম পরিবর্তন করে রাখেন এলিয়ে ক্যাপিতলিনা(Aelia Capitolina) এবং জুডিয়া(Judea) অঙ্গরাজ্যের নাম পরিবর্তন করে রাখেন সিরিয়া প্যালেস্তাইন(Syaria Palestine)। পরবর্তীতে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে কনস্টান্টিন-I পুনরায় জেরুজালেম নামকরন করেন।

বনী ইসরাঈল জাতিতে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ নবী আসেন ডেভিড(David/দাঊদ(আঃ))ও সুলেমান(Solomon/সুলায়মান(আঃ)) এর উত্তরসূরি কুমারী মাতা ম্যারী এর পুত্র যীশু(Jesus/ঈসা(আঃ)-খ্রিস্টপূর্ব ৭-২ সন থেকে ৩০-৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত)। ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম উভয়েই মনে করেন ঈশ্বরের অতিপ্রাকৃত শক্তির কৃপায় কুমারী ম্যারীর গর্ভে যীশুর আবির্ভাব। তবে অনেক ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ঐতিহাসিক মনে করেন যে, মিশরীয় জাদুর দেবী কুমারী আইসিস ও তার পুত্র হোরাসের জনপ্রিয় কাহিনী থেকেই ম্যারী ও যীশুর কাহিনীকে ধারন করা হয়েছে। যীশু জেরুজালেমে তার মতবাদ প্রচার করতে থাকেন, কিন্তু ইহুদীরা তাকে অধর্ম প্রচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং রোমান গভর্নর পন্থিয়াস পিলাত (Pontius Pilate) তাকে ক্রুসে বিদ্ধ করার নির্দেষ দেন। যীশুর মৃত্যর পর(কিংবা পুনরুত্থানের পর) তার অনুসারীরা তার মতাদর্শের প্রচার শুরু করেন এবং যা শুরুর দিকে একেশ্বরবাদের ধারনা হিসেবে প্রচারিত হলেও পরবর্তীতে ত্রয়ীবাদ(Trinity-Father, Son & Holly Spirit) হিসেবে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে রোমান চার্চ প্রচার শুরু করে। যদিও ত্রয়ীবাদ নিয়ে রোমান ক্যাথলিক, অর্থোডক্স ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান, তবে সবাই এ বিষয়ে একমত যে, চার্চের কর্তৃত্ব(পোপ, বিশপ, ক্লার্জি) থাকবে পুরুষদের হাতে। মূলত চার্চের হাতেই ধর্মে পুরুষতান্ত্রিকতা ব্যাপকতা লাভ করে বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, যা পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মেও লক্ষ্যনীয়।

বনী ইসরাঈল জাতির শেষ নবী হলেন আব্রাহামের ত্যায্যপুত্র(ইহুদী ও খ্রিস্টধর্মমতে) ইসমাঈল এর বংশধর মুহম্মদ(সাঃ)-জন্মসূত্রে প্যাগান, (৫৭০ খ্রিস্টাব্দ-৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) । তিনিও অন্যান্য প্রধান নবীদের মত ৪০ বছর বয়সে(!) নবুয়্যত প্রাপ্ত হন এবং ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু করেন। যদিও প্রথমে অন্যান্য আব্রাহামীয় ধর্মের মত ৬২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে জেরুজালেমকে পবিত্র ভূমি হিসেবে মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্র(ক্বিবলা) হিসেবে গণ্য করা হত, পরবর্তীতে ৬২০ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদের মিরাজের পরে তা মক্কার ক্বাবাতে পরিবর্তিত হয়। তবে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, বনী ইসরাঈল জাতিকে ধর্মান্তরিত করতে ব্যর্থ হয়ে এবং ইব্রাহীম ও তার পুত্র ইসমাঈল এর ক্বাবা শরীফ পুনঃনির্মানের কাহিনীতে উদ্ভুদ্ব হয়ে পরবর্তীতে মক্কাকে মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্র নির্ধারন করা হয়। যদিও জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ মুসলিম বিশ্বের প্রধান ৩টি মসজিদের অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। মূলত খ্রিস্টধর্ম ও ইসলামের আবির্ভাব বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় সংঘাতকে প্রভাবিত করে। কেননা এতদিন ধরে চলে আসা সনাতন ও ইহুদী ধর্মের অনুসারীরা যথাক্রমে আর্য ও বনী ইসরাঈল জাতি হিসেবে নিজেদের শ্রেষ্ঠতম জাতি মনে করত এবং এজন্যেই অন্য ধর্ম থেকে এই দুটি ধর্মে অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম উভয় ধর্মই ধর্মান্তরকে প্রাধান্য দেয় এবং এই দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় যে, তাদের ধর্মই সমগ্র মানব জাতির জন্য। মূলত খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম ধর্মের এই দ্বান্দ্বিক অবস্থাই বিশ্বব্যাপী আন্তঃধর্মীয় সংঘাতের জন্ম দেয়, যা আজও বিদ্যমান।

খ্রিস্ট ধর্মের ব্যাপক বিস্তৃতির ফলে রোমান সম্রাট কনস্টান্টিন-I প্যাগান থেকে খ্রিস্টান হন এবং পুরো রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্ট ধর্মকে বৈধতা প্রদান করেন। ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে ইহুদীদের জেরুজালেমে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়, শুধুমাত্র বছরে একবার প্রার্থনার কারন ছাড়া। ৩২৬ থেকে ৬২৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চার্চ ধর্ম প্রচারের নামে সকল প্যাগান দেব-দেবীর মূর্তি ভেঙ্গে ফেলে এবং খ্রিস্ট ধর্মের ব্যাপক প্রচার চালায়। ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে খলিফা ওমর ইয়ারমুকের যুদ্ধে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের পতন ঘটান এবং জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রন নেন। মুহম্মদ ইবনে জারীর আল তারাবী’র মতে, খলিফা ওমর ও পাট্রিয়ার্ক সাফ্রোনিয়াস ঐকমত্যে পৌছান যে, জেরুজালেমে খ্রিস্টানরা স্বাধীনভাবে থাকতে পারবে কিন্তু ইহুদীদের নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। ইহুদীদের প্রার্থনার জায়গা Temple Mount এর পবিত্র পাথর (Dome of Rock) কে মসজিদ-উল-মুকাদ্দাস এ রুপান্তর করা হয়, কেননা মুসলমানরা মনে করেন যে, এখান থেকেই মুহম্মদ মিরাজ যাত্রা আরম্ভ করেন। ৬৩৬ থেকে ৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জেরুজালেম, মিশর, সিরিয়া ও তুরস্কে রাশেদীন, উমায়্যাদ ও আব্বাসীদ খিলাফত বহাল থাকে। ৯৬৯ থেকে ১০৯৮ পর্যন্ত ছিল ফাতিমিদ খিলাফতের সময়কাল। এই সময়ের মধ্যে ইসলামী সাম্রাজ্য ব্যাপক বিস্তার লাভ করে, কিন্তু একই সাথে চার্চের সাথেও বিরোধ বাড়তে থাকে।

ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে বড় বিরোধ বাধে জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রন নিয়ে, আর ইতিহাসে যাকে ‘ক্রুসেড’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। ১০৯৫ সনে পোপ আরবান-II বাইযেন্টাইন সম্রাট আলেক্সিস কোমনেনস এর আবেদনে সাড়া দিয়ে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে মুসলিম সাম্রাজ্যের হাত থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য ‘প্রথম ক্রুসেড’এর ডাক দেন। ‘Just War’ তত্ব মূলত ক্রুসেডকে গ্রহনযোগ্যতা দেয়ার জন্য তিনিই প্রথম ব্যবহার করেন। ১২০০০০ ফ্র্যাঙ্ক(ফ্রেঞ্চভাষী পশ্চিমা খ্রিস্টান) ক্রুসেডে অংশ নেয় এবং ১০৯৯ সনে চার্চ জেরুজালেমের দখল নেয়। তারা মসজিদ-উল-মুকাদ্দাসকে চার্চে রুপান্তর করে। ১০৯৯ থেকে ১১৩৭ পর্যন্ত জেরুজালেম চার্চের অধীনে থাকে। তারা জেরুজালেম, এডেসা, এন্টিওক ও ত্রিপলী এই ৪ ভাগে ক্রুসেড রাজ্যকে ভাগ করে। যদিও তারা লেবাননের নিয়ন্ত্রন নেয়ারও চেষ্টা করে, কিন্তু দামেস্কের শাসক জহির আলদীন আতাবেকের কাছে পরাজিত হয়। ১১৩৭ সালে ইমাদ আদ্দীন জেঙ্গী এডেসা দখল করে। আর পুনরায় চার্চের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার জন্য ১১৪৭-১১৪৯ পর্যন্ত ‘দ্বিতীয় ক্রুসেড’ পরিচালিত হয়। ফরাসী রাজা লুইস-VII ও পশ্চিম জার্মানীর রাজা কনরাড-III ১১৪৭ এ এডেসার উদ্দেশ্যে তার সেনাবাহিনী নিয়ে যাত্রা শুরু করেন, কিন্তু জেঙ্গীর কাছে পরাজিত হয়। তবে এডেসায় ব্যর্থ তারা পর্তুগালের রাজা আফনসো-I এর সাথে যৌথভাবে আক্রমন করে মুসলিমদের কাছ থেকে লিসবন দখল করে নেয়। তবে ক্রমান্বয়ে মুসলিম সাম্রাজ্য শক্তিশালী হতে থাকে এবং ১১৮৭ সনে হাত্তিন(Battle of the Horns of Hattin) এর যুদ্ধে সালাউদ্দীন ইউসুফ ইবনে আইউব চার্চের কাছ থেকে পুনরায় জেরুজালেমের দখল নেয়। তিনি ইহুদী ও অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের সাথে সমঝোতায় আসেন এবং মসজিদ-উল-মুকাদ্দাস পুনরাস্থাপন করেন। ১১৯২ সনে ‘সিংহহৃদয়’ রিচার্ড এর নেতৃত্বে ‘তৃতীয় ক্রুসেড’ পরিচালিত হয়, কিন্তু তারা জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হন। তবে রিচার্ড ও সালাউদ্দিন রামলা চুক্তির মাধ্যমে পশ্চিমা খ্রিস্টানদের জেরুজালেমে স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার সুযোগ দেন। কিন্তু চার্চ থেমে থাকেনি। ১২৭২ সাল পর্যন্ত পবিত্র ভূমি পুনরুদ্ধারের নামে সর্বমোট ৯টি ক্রুসেড সংঘঠিত হয়। আর ধর্মের নামে লক্ষাধিক মুসলমান ও ইহুদী হত্যা করা হয়। তবে প্রায় সবকটি ক্রুসেডে পরাজিত হয় চার্চ। পরবর্তীতে ১৩০০ সালে মোঙ্গলীয়রা আর ১৩৮২ সালে মামলূক সাম্রাজ্য জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রন নেয়। তবে পূণ্যভূমির নিয়ন্ত্রনের যুদ্ধ এখানেই শেষ নয়। ১৫১৬ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের(Turkish Empire) সুলতান সেলিম, আলেপ্পো ও গাজা’র যুদ্ধে জেরুজালেমে মামলূক সাম্রাজ্যের পতন ঘটান। ১৭৯৯ সালে নেপলিয়ন বেনাপোর্ড মিশর ও সিরিয়ার মাধ্যমে জেরুজালেম দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে(১৯১৭ সালে), বৃটিশ সেনাবাহিনীর কাছে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। আর ১৯২৪ সাল থেকে শুরু হয় জিওনিস্ট বিদ্রোহ(Zionist Revolution), যা ছিল মূলত ইসরায়েল রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংঘবদ্ধ ইহুদী আন্দোলন। তবে ১৯৩৩ সালে যখন হিটলারের নাৎসী বাহিনী ক্ষমতায় আসেন, ইহুদীদের নিশ্চিহ্ন করতে ১৯৪৫ পর্যন্ত চলে নৃসংশতম হত্যাকান্ড যা ইতিহাসে ‘হলোকাস্ট’ নামে পরিচিত। এই হত্যাকান্ডে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ইহুদীকে হত্যা করা হয়। ইহুদীদের হত্যার পিছনে অনেক ঐতিহাসিক হিটলারের ধর্মীয় অহংবোধকে দায়ী করেন। ধারনা করা করা, ইসরাঈলীদের মত হিটলারও ইন্দো-আর্য জাতিকে(যার একটি ধারা পশ্চিম জার্মানীরা) শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে বিশ্বাস করতেন এবং যার কারনে নাৎসী বাহিনীর প্রতীক ‘সোয়াস্ত্রিকা’-হিন্দুদের(আর্যদের) থেকে অনুপ্রানিত। এছাড়া ইহুদীদের প্রতি রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিদ্বেষ্পূর্ণ মনোভাবও তাকে প্রভাবিত করেছে বলে অনেকে মনে করেন। নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের জন্য হিটলার হয়তো ইহুদীদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে ফেলতেন যদি না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর কাছে তার পরাজয় না ঘটত। আর দীর্ঘদিনের জিওনিস্ট বিদ্রোহের পর জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ১৯৪৭ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন ইসরায়েল রাষ্ট্রের পুনর্জন্ম মূলত বনী ইসরাঈল জাতিকে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিশ্রুত পবিত্র ভূমিতে ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে অনেকে এও মনে করেন যে, ইসরায়েল কখনই শুধুমাত্র বনী ইসরাঈল জাতির ছিলনা। জেরুজালেমে ঐতিহাসিকভাবে ইহুদী, খ্রিস্টান ও পরবর্তীতে মুসলমান, সবারই সহাবস্থান লক্ষ্যনীয়। তাই ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম অনেকেই জাতিসংঘের পক্ষপাতিত্ব বলে মনে করেন। কিংবা অনেকে মনে করেন যে, আপাত দৃষ্টিতে এটি ধর্ম যুদ্ধের অবসান ঘটালেও এটি ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম সাম্রাজ্যের উপর নিয়ন্ত্রনের জন্য পশ্চিমা শক্তির এক ষড়যন্ত্র। আর এই বর্তমান সময়ে অনেকেই উক্ত ধারনার সত্যতা দেখতে পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দুটি জিনিসের সমাপ্তি ঘটে-১.ধর্মীয় যুদ্ধ ও ২.সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার। তবে এরপরেও যে, ধর্ম নিয়ে সংঘাত হয়নি তা নয়। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব, ইরাকের শিয়া-সুন্নী সংঘাত, রুয়ান্ডার হুতো-তুতসী সংঘাত, গুজরাটের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, চেচনীয়া-বসনিয়া সংঘাত, তিব্বত-চীন দ্বন্দ্ব কিংবা অতি সাম্প্রতিক মায়ানমারের রোহিঙ্গা-বৌদ্ধ দাঙ্গা ইত্যাদি বিভিন্ন সংঘাত আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় ধর্মের নামে এখন পর্যন্ত কত নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আর খুব দ্রুতই যে, এর থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে-সে ব্যাপারেও অনেকে সন্দিহান। তাদেরই একজন সমাজবিজ্ঞানী স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন।

স্নায়ু যুদ্ধের শেষে অনেকের মত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা মনে করেন যে, বিশ্ব ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে পৌছেচে। তিনি ১৯৯২ সালে তার ‘The End of History and the Last Man’ বইয়ে জার্মান দার্শনিক হেগেলের তত্ত্ব দিয়ে সভ্যতার সংঘাতের সম্ভাবনাকে নাকোচ করে দেন। তবে হান্টিংটন ফুকুয়ামার সাথে একমত হতে পারননি। ১৯৯৩ সালে তিনি ‘সভ্যতার সংঘাত’ (Clash of the Civilization) তত্ত্ব প্রকাশ করেন। হান্টিংটন মনে করেন যে, অধিবিদ্যার(Ideology) যুগের সমাপ্তি ঘটলেও সভ্যতার সংঘাতের সমাপ্তি ঘটেনি। তিনি মনে করেন যে, আগামীর বিশ্ব মূলত সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সংঘাতে লিপ্ত হবে। আর এই সংঘাত সংগঠিত হবে মূলত পশ্চিম ও মুসলিম সভ্যতার মধ্যে। রাশিয়া, জাপান ও ভারতকে তিনি Swing Civilization নাম দেন, কেননা তারা যেকোন পক্ষকে সমর্থন করতে পারে। উদাহরনস্বরূপ, রাশিয়া তার দক্ষিণ সীমান্তের মুসলিমদের(চেচনিয়া) সাথে সংঘাতে জড়ালেও অপরদিকে ইরানের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করছে ভবিষ্যত মুসলিম-অর্থোডক্স সংঘাত এড়াতে এবং তেলের প্রবাহ নিশ্চিত করতে। এছাড়া মুসলিম-চীন সম্পর্ক, বিশেষ করে ইরান, পাকিস্তান, সিরিয়ার মত দেশের সাথে চীনের সম্পর্ক এক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। হান্টিংটন মনে করেন যে, ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা খ্রিস্টান-মুসলিম দ্বন্দ্ব এবং বিশ্বব্যাপী পশ্চিমা সংস্কৃতির ব্যাপক বিস্তার ও পশ্চিমা সমাজে মুসলিমদের উপর নেতিবাচক আচরন অনেক ক্ষেত্রে মৌলবাদের উত্থান ঘটাতে পারে এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে ধাবিত করতে পারে। তিনি সভ্যতার দ্বন্দ্বের ৬টি মৌলিক কারন আলোচনা করেন। যেগুলো হলঃ-

১. শতবছর ধরে ইতিহাস, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, প্রথা ও ধর্মের কারনে সৃষ্ট যে সভ্যতার ভেদাভেদ, তা খুব দ্রুত অবসান হবেনা।
২. ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসা পৃথিবীতে সাংস্কৃতিক মিথষ্ক্রিয়ার ফলে প্রতিটি সভ্যতা তার স্বকীয়তা নিয়ে অধিক সচেতন হবে।
৩. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের ফলে যখন মানুষ তার নিজস্বতা হারিয়ে বিশ্বমানব হয়ে উঠছে তখন ধর্ম মানুষকে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় ও জাতিস্বত্ত্বার পরিচয় দিয়েছে।
৪. একদিকে পশ্চিমা সভ্যতা যেখানে ক্ষমতার শীর্ষে, অন্যদিকে বাকি সভ্যতাগুলো চাইছে মূলে ফিরে যেতে। প্রাচ্য ও পশ্চিমের এই দ্বিমুখী অবস্থান সভ্যতার সংঘাতকে প্রভাবিত করতে পারে।
৫. রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো যত দ্রুত সমাধান করা সম্ভব, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র ও পার্থক্য নিয়ে সমঝোতায় আসা ততই দুরূহ।
৬. আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সভ্যতার সচেতনাকে প্রভাবিত করবে।

হান্টিংটন মনে করেন যে, আন্তঃসভ্যতা দ্বন্দ্ব মূলত দুইভাবে সংঘটিত হবে-১.ফল্ট লাইন সংঘাত ২.কোর লাইন সংঘাত। আর তাই সামরিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োগ, অন্য সভ্যতার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরন, সভ্যতার আধিপত্য কিংবা একটি সভ্যতার বিশ্বাস ও মূল্যবোধ জোরপূর্বক অন্য সভ্যতার উপর চাপিয়ে দেয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে সভ্যতার সংঘাত অনিবার্য। আর বর্তমান বিশ্বে পশ্চিমা সভ্যতার আধিপত্য এবং মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরন- হান্টিংটনের ধারনাকে আরও শক্ত করে। তবে অনেকেই আছেন যারা হান্টিংটনের মতবাদের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলেন। অমর্ত্য সেন(১৯৯৯) মনে করেন যে, “পশ্চিমা সভ্যতাসহ সকল সভ্যতারই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র রয়েছে। তবে তা স্বত্ত্বেও বিংশ শতকে গনতন্ত্রের বিপ্লব শুধই পশ্চিমা ধারনা নয়, প্রাচ্যও এর সাথে একমত। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনেক ইস্যুতে আজ সভ্যতারগুলোর মধ্যে খুব বেশি বিরোধ নেই”। হান্টিংটনের মতবাদের বিপরীত দুটি উল্লেখযোগ্য মতবাদ হল-১.ইরানের রাষ্ট্রপতি মুহাম্মাদ খাতামি’র ২০০১ সালের ‘সভ্যতার সংলাপ’ এবং ২০০৫ সালে জাতিসংঘের সাধারন সভায় উত্থাপিত স্পেনের রাষ্ট্রপতি, হোসে লুইস রদ্রিগুয়েজ ও তুরস্কের প্রধামন্ত্রী, তায়ীপ এর্দোগান এর সম্মিলিত মতাবাদ-‘সভ্যতার মৈত্রী’। উভয় মতবাদই ধারনা করে যে, মুসলিম ও পশ্চিমা সভ্যতার সাথে আলোচনা ও মতৈক্যের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত হবে।

মানব সভ্যতার শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত ধর্মের উদ্ভব, বিকাশ এবং এর সাথে জড়িয়ে থাকা সভ্যতাগুলোর আচরন আমাদের কতগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন করে- কেন মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বিলোপ ধর্মে পুরুষদের প্রভাব বাড়িয়ে তোলে, কেন বিশ্বের প্রধান তিনটি ধর্মই আব্রাহামের জাতির দ্বারা প্রচারিত, কেন শাসক গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ধর্মের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে আর কেনই বা নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের জন্য অন্য ধর্মের নিরীহ মানুষদের নিজ ধর্মে রূপান্তর কিংবা হত্যা করতে হবে? চায়ের দোকানে কিংবা মেসের আড্ডায় অনেক তর্ক হয় এই বিষয়ে। কিন্তু একমাত্র বিতার্কিকরাই পারেন গঠনমূলক আলোচনা করতে। বিতর্কের জয় হোক।

তথ্যসূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়া
২. ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’, রাহুল সংকৃত্যায়ন
৩. ‘The History of God’, Karen Armstrong
৪. ‘The Chariots of God’, Eric Von Daniken




The Descendents of Abraham
লেখক সানাউল হক হিমেল
সাবেক সভাপতি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ডিবেট ক্লাব

যুক্তিবাদী তারুণ্য গড়াই যার অঙ্গীকার



বিতর্ক একটি আলোময় ও বুদ্ধি উদ্ভাসিত জগত্। বিতর্ক মানুষের চেতনাকে জাগিয়ে তুলে, মনকে করে আলোড়িত ও শিহরিত, চিন্তা শক্তিকে করে উদ্দীপ্ত। আর এই উদ্দীপ্ত করার কাজটি নিষ্ঠার সাথে করে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা থেকে মফস্বল শহর তথা ইউনিয়ন পর্যায়ে বিতর্ক জগতের প্রিয় ব্যক্তিত্ব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। আমাদের এবারের আয়োজনে উঠে এসেছেন প্রজন্মের এ আইকনের জীবনের কথামালা। তাকে নিয়ে লিখেছেন খালেদ আহমেদ

'আমি বিতর্ক নিয়ে বুকের গভীরে অন্য ধরনের এক স্বপ্ন অনুভব করি। এ কারণে যাপিতজীবনের অনেক কিছু তুচ্ছ করে বিতর্ক নিয়ে দৌড়াতে থাকি। এখানে এক অদ্ভুত ভালোলাগা এবং হূদয়গত টান আছে। আছে এক অপূর্ব মায়ার বন্ধন। বিতর্ক শিল্পের বিকাশে যে সময়টা দিই সেটা যদি ব্যবসা বা অন্যখাতে দিতাম তাহলে আর্থিকভাবে আরও লাভবান হওয়া আমার জন্য অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু মন টানে না, সে পথে সায় দেয় না। মনে হয় এই শিল্পটাই জীবনের সবকিছুর সাথে জড়িত আছে। স্বভাবতই বিতর্কটাকে ছাড়তে পারি না।' কথাগুলো বলছিলেন, হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিতর্ক সংগঠক হিসেবে যার জনপ্রিয়তা এখন আকাশ ছোঁয়া। বিতর্ক অনুষ্ঠান আয়োজন, পরিচালনা আর নির্মাণে রীতিমতো যিনি আইকনে পরিণত হয়েছেন। এককথায় বললে টেলিভিশন মিডিয়াতে বিতর্ককে জনপ্রিয় করার মূল কারিগর তিনিই। একের পর এক বিতর্ক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যে দিয়ে তিনি এই শিল্পের জনপ্রিয়তা এবং বিস্তার দুটোকে সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের উদ্যোগে দেশের আট হাজার মাধ্যমিক স্কুলের অংশগ্রহণে যে বিশাল বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় সেই 'বিতর্কবিকাশ' আয়োজনের অন্যতম কুশীলব ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠান পরিকল্পনা, সঞ্চালনা ও আয়োজনে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। উল্লেখ্য ক'দিন আগে এই প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ডফাইনাল অনুষ্ঠিত হয় নগরীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। এটিএন বাংলা সরাসরি গ্র্যান্ড ফাইনাল অনুষ্ঠানটি প্রচার করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান, শিক্ষাসচিব আব্দুল কামাল নাসের চৌধুরীসহ আরও অনেকে। ওইদিন ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা এসে জড়ো হয়। সমাজের নানা শ্রেণীপেশার মানুষের উপস্থিতিতে গ্র্যান্ড ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। সবাইকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে গ্র্যান্ডফাইনালের শুভসূচনা করেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। তার চমত্কার এবং নিখুঁত উপস্থাপনায় দারুণ এক উপভোগ্য বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। পক্ষ-বিপক্ষের যুক্তি আর করতালিতে বিতর্কের এক অপরূপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে। আগত অতিথিরাও কিছুক্ষণের জন্যে বিতর্কে নিমগ্ন হয়ে পড়েন। কিরণ বলছিলেন সেই কথা, 'দেখুন গ্রামবাংলার আট হাজার মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ রকম আয়োজন আর কখনোই হয়নি। আমি নিজেই প্রাণভরে এই বিতর্ক আয়োজন উপভোগ করেছি। এই আয়োজনের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে শহর নয়, গ্রামেও আমাদের সুপ্ত সুন্দর প্রতিভা রয়েছে যারা সুযোগ পেলেই আলো ছড়াতে সক্ষম।' কিরণ আরও বলেন, 'যে সব প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এখানে অংশগ্রহণ করে তাদের অনেকেই মৌলিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত। এমন অনেকে ছিল যারা একটা ভালো পোশাক পর্যন্ত পরতে পারে না। কিন্তু তারা স্বপ্ন দেখে সুন্দরভাবে বড় হওয়ার। স্বপ্ন দেখে সুন্দর একটি সমাজ নির্মাণের।' পুরো আয়োজনটা সুন্দরভাবে শেষ করার জন্য ব্র্যাককেই সব কৃতিত্ব দিতে চান কিরণ। তার মতে, ব্র্যাকের উদ্যোগ ও সুসমন্বয়, এটিএন বাংলার সহযোগিতা এবং ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির নিরবচ্ছিন্ন সম্পৃক্ততা 'বিতর্কবিকাশ' অনুষ্ঠানকে উচ্চমাত্রায় নিতে সক্ষম হয়। তিনি জানান, 'বিশেষ করে ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালক ড. শফিকুল ইসলামের সার্বিক সমন্বয় বছরব্যাপী আয়োজিত এই প্রতিযোগিতাকে আমরা আমাদের প্রত্যাশিত জায়গায় নিতে পেরেছি।'

বিতর্কবিকাশের চূড়ান্ত লড়াইটা তো বেশ জমে উঠেছিল? কিরণ বলেন, 'নিঃসন্দেহে। এই প্রতিযোগিতা শেষে অনেক দূরদূরান্ত থেকে ফোন পেয়েছি। অনেকে এসএমএস করে অভিনন্দন জানিয়েছে। ওইদিন দুটি দলের শিক্ষার্থীরাই খুব ভালো বিতর্ক করেছিল। তথ্য, উপাত্ত দিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি দারুণ উপভোগ্য করে তুলেছিল। সঞ্চালক হিসেবে আমি নিজেও গ্র্যান্ড ফাইনালটাকে এনজয় করেছি। কিরণ বলেন, দেখুন যে দুটি দল ফাইনালে উঠেছিল সে দুটি দল একেবারেই গ্রাম পর্যায়ের স্কুল। অথচ এখানকার ক্ষুদে বিতার্কিকরা চমত্কার উপস্থাপনা দিয়ে সবার নজর কাড়তে সক্ষম হয়। আসলে বিতর্ক বিকাশের আয়োজনটাই ছিল অন্য রকম। আমার জানামতে, দেশের এতগুলো স্কুল কখনোই একসাথে এত বড় কোনো বিতর্ক প্রতিযোগিতাতে অংশ নেয়নি। আমার মনে হয় দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশেই এত বড় কোনো আয়োজন হয়নি। এ রকম একটি আয়োজনের অংশীদার হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হয়েছে। বিতর্ক বিষয়ক একটি অনুষ্ঠান কোনো চ্যানেল সরাসরি দেখাতে পারে এটাও বোধ হয় আমরাই প্রথম প্রমাণ দিলাম। এটিএন বাংলার সুবাদে 'বিতর্কবিকাশ' অনুষ্ঠানটি লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী এবং দেশ-বিদেশের দর্শক টিভি সেটের সামনে বসে উপভোগ করেছে।'

বাংলাদেশে বিতর্ক চর্চাটাকে কীভাবে দেখতে চান জানতে চাইলে কিরণ বলেন, 'দেখুন, বিতর্ক চর্চার প্রসার বৃদ্ধিতে আমরা অনেক দিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করছি। কিন্তু আমরা চাই বিতর্কচর্চাটা শিক্ষার মূলস্রোতে অর্ন্তভুক্ত হোক। এখন পর্যন্ত সেটা কিন্তু হয়নি। 'বিতর্কবিকাশ' অনুষ্ঠানের গ্র্যান্ড ফাইনালে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এসেছিলেন। আমরা কিন্তু তার কাছে কিছুই চাইনি। শুধু বলেছি কো-কারিকুলার হিসেবে বিতর্কটাকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। আমরা লক্ষ্য করছি এ বছরে পরিমার্জিত বা সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকে ব্যবহারিক এবং উন্নয়নমূলক অনেক ধরনের শিক্ষা যুক্ত করা হয়েছে। অথচ ব্যবহারিক শিক্ষার চেয়ে জরুরি বিষয় শিক্ষার্থীর ভেতরের বিকাশ। তার মনন ও চেতনার বিকাশ। তো সেই পটভূমি তৈরি করতে হলে তার চারপাশের পরিবেশ-প্রতিবেশ সম্পর্কে জানতে এবং বুঝতে হবে। নিজের মাঝে বিশ্লেষণ ও বিচারিক ক্ষমতা বাড়াতে হবে। কারণ এখন তো গোটা বিশ্বেই প্রতিযোগিতার যুগ। তো এখানে বিতর্ক শিক্ষাটা একজন শিক্ষার্থীর মেধামনন বিকাশে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা মন্ত্রীকে সে কথাই বলেছি যে, আপনি পাঠ্যপুস্তকে বিতর্কটাকে অন্তর্ভুক্ত করুন। এটা করা হলে শিক্ষার্থীদের মাঝে এই চর্চাটা আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে। মন্ত্রী মহোদয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে আগামী শিক্ষাবছরে বিতর্ককে পাঠ্যপুস্তকে অন্তুর্ভুক্ত হবে।'

বিতর্ক চর্চা, অনুশীলনকে কিরণ দেখেন সমাজের আয়না হিসেবে। কিরণ মনে করেন, সমাজে যেকোনো বিষয় নিয়ে যত বেশি বিতর্ক হবে তাতে করে সমাজ, রাষ্ট্রই বেশি লাভবান হবে বেশি। সমাজের সবক্ষেত্রে এক ধরনের জবাবদিহিতা উত্তরোত্তর বাড়বে। প্রথাগত চিন্তাভাবনা থেকে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে। তরুণ প্রজন্মের মাঝে মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, সদিচ্ছা তৈরি হবে। কিরণ বলেন, সমাজে-রাষ্ট্র, কী হচ্ছে কেন হচ্ছে তা জানার অন্যতম মাধ্যম—বিতর্ক। যেখানে নানা মতের সম্মিলন ঘটে। যেখানে কবলই যুক্তি দিয়ে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। যেখানে আবেগের চেয়ে বাস্তবতার আলোকে বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়ে থাকে। বিষয়গুলোকে কেবলই তথ্য-উপাত্ত দিয়ে গভীরভাবে তুলে ধরতে হয়। কিরণ দারুণভাবে বিশ্বাস করেন বিতর্ক চর্চার যত প্রসার ঘটবে তত দ্রুতই সমাজ, রাষ্ট্র বদলে যাবে। আর এই বদলানোর বড় কারিগর হচ্ছে তারুণরা। যারা এ দেশের আগামী দিনের সম্পদ। এ কারণেই তিনি বারবার তরুণদের কাছে ফিরে যান। তরুণদের সাথে প্রবীণদের ভাবনার চমত্কার সম্মিলন ঘটিয়ে সুচিন্তার ঐক্য গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন। এ জন্য বিতর্কের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের বিষয় বিশেষজ্ঞদের সাথে তরুণদের সেতুবন্ধন তৈরি করেন। এ পর্যন্ত দেশের অসংখ্য বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের তরুণদের পাশে বসিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন তিনি।

তারুণ্যে যাদের সাথে কিরণ বিতর্ক চর্চা শুরু করেছিলেন তাদের অনেকেই এখন আর বিতর্ক জগতের কেউ নন। কেউ কেউ একটু-আধটু জড়িয়ে আছেন। কেউ কেউ আবার একেবারেই লাপাত্তা। কিন্তু কিরণ সেই যে পথচলা শুরু করেছিলেন আর থামেননি। এখনও পথ চলছেন। বিতর্ক চর্চা আর প্রসারটাই তার কাছে মুখ্য বিষয়। বিতর্ক নিয়ে দীর্ঘ পথচলায় তার কোনো ক্লান্তি নেই। কখনও সঞ্চালক, কখনও স্পিকার হিসেবে দর্শকদের শুভ সম্ভাষণ জানান তিনি। কখনও পর্দার আড়ালে থেকে চমত্কার সব আয়োজন তরুণদের সামনে উপস্থাপন করেন। বিতর্ক নিয়ে কেন এই দীর্ঘ পথচলা? কিরণের সহাস্য উত্তর, 'দেখুন, একটা কমিমেন্ট থেকে বিতর্ক চর্চাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বহুবার বলেছি এ দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়তে হলে দায়িত্বশীল তরুণ দরকার। দেশপ্রেমিক তারুণ্য দরকার। যে তরুণরা বদলে দেবে আগামীদিন। আমি নিবিড়ভাবে বিশ্বাস করি যুক্তিশীল তারুণ্য গড়ে তুলতে পারলে আমাদের দেশ সামগ্রিকভাবে লাভবান হবে। আমরা বিতর্ক দিয়েই আলোকিত তরুণ সমাজ গড়ে তুলতে চাই। আর বিতর্ক চর্চাটাকে এগিয়ে নেওয়ার ব্রতে আমি কখনই পেছনে ফিরে তাকাইনি। বরাবরই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি নতুন ধারণায়, নতুন উদ্দীপনায় বিতর্কটাকে সবার সামনে হাজির করতে। বিতর্ক মানেই যুক্তির সাধনা। সাধনা মানেই যেটা অন্তরে ধারণ করা হয়। আমি বিষয়টিকে অন্তর দিয়েই ধারণ করি। আর এ কারণেই বিতর্কের সাথে আমার বন্ধন অবিচ্ছেদ্য।'

বিতর্কের সাথে কিরণের যেন এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন তৈরি হয়েছে। যে বন্ধন কখনই ছেড়া সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথের সেই গানের ভাষায় বলতে হয়—আমি তোমারও সঙ্গে বেঁধেছি আমারও প্রাণ...। আসলেও তাই। কিরণের বাসায় গেলে দেখবেন বিতর্ক বিষয়ক ছবি, বই ছাড়া আর কিছু নেই। চারিদিকে অসংখ্য বিতর্কের ট্রফি, শুভেচ্ছা স্মারক, সম্মাননা, মেডেল অথবা আরও সব দেশি-বিদেশি সুভেনির। কিরণ বলেন, 'বিতর্ক বরাবরই যেকোনো বিষয়কে গভীরভাবে আত্মস্থ এবং বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণের একটা উপকরণ। বিতর্ক মানুষের ভাবনা বা চিন্তার জগতকে সমৃদ্ধ করতে ভূমিকা রাখে। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অনেক বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত আমরা রাজনীতিবিদ এবং নীতিনির্ধারকদের কথা শুনছি। গণমাধ্যমগুলোও মতো প্রকাশ করছে। কিন্তু বিতর্কের চর্চামূলক অনুষ্ঠানে আমরা কিন্তু নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের চিন্তাভাবনার কথা শুনতে পাচ্ছি। পরিবর্তিত ধারায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গিগুলো বুঝতে পারছি। বিতর্ক অনুষ্ঠান হলো—তরুণ সমাজের মতামত দেওয়ার সবচেয়ে ভালো একটা প্লাটফর্ম। কিরণ আরও বলেন, 'নিজের একটা বিশ্বাস, বোধ আর অফুরন্ত ভালোবাসা থেকেই গত দু দশক ধরে বিতর্ক চর্চার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করে রেখেছি। সেই বিশ্বাস কিছু নয়, যুক্তিশীল আলোকিত তারুণ্য গড়ে তোলার নির্ভেজাল বিশ্বাস। আমরা যদি কিছু আলোকিত যুক্তিশীল তরুণ গড়ে তুলতে পারি তাহলে তারাই হবে আগামীতে সমাজ বদলের রূপকার। দেশ ও দশের জন্য তারাই হবে শ্রেষ্ঠ মানুষ। আমরা সেই মানুষ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।'

- See more at: http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDRfMjlfMTNfNF8zOF8xXzM2ODky#sthash.f1yZ8TQ8.dpuf

Monday, January 12, 2015

দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য ভূমি অফিস

The Daily Vorer Pata
১২ জানুয়ারি ২০১৫, সোমবার


রাজধানীর ডেমরা ভূমি অফিসের দেয়ালে একটি বিজ্ঞপ্তি লেখা আছে- নামজারি ফি বাবদ আবেদন কোর্ট ফি ৫ টাকা, নোটিশ জারির ফি ২ টাকা, রেকর্ড সংশোধন ও পরচা ফি ২২৫ টাকা। আবেদনের ৪৫ দিনের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন করার কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে নামজারি করতে গেলে এসব দিনক্ষণ শুধু বিজ্ঞপ্তিতে শোভা পায় বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। ৪৫ দিন তো দূরের কথা, অনেক ক্ষেত্রে এক বছরেও নামজারির মামলা নিষ্পত্তি হয় না। নামজারি মামলায় সরকার ২৩২ টাকা ফি নির্ধারণ করে দিলেও ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা ঘাটে ঘাটে সর্বনিম্ন ২০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ডেমরা ভূমি অফিসে নামজারি করতে আসা জহিরুল ইসলাম শাহীন নামে এক ভুক্তভোগী ভোরের পাতাকে জানান, ‘ভূমি অফিসে প্রতিটি কাজেই নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অধিক বেশি টাকা দিতে হয়। জমির নামজারি, জমা খারিজ, মিস কেসসহ বিভিন্ন কাজে ঘুষ ছাড়া চলে না এ ভূমি অফিসে।’ এসব ক্ষেত্রে খরচের হার সাইন বোর্ডে নির্ধারণ করা থাকলেও তা মানছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সাইন বোর্ডে নির্ধারিত ফির চেয়ে অনেক গুণ বেশি টাকা গুনতে হয় জমির মালিকদের। তারপরও টাকা দিয়ে পার পাওয়া যাবে সে নিশ্চয়তাটুকু নেই এই অফিসে সেবা গ্রহণকারীদের। অফিসে মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। আর তাদের ভোগান্তি যেন দেখার কেউ নেই! ৫টি সার্কেল অফিসের হালচাল : দুর্নীতি, অনিয়ম আর ভোগান্তির স্বর্গরাজ্য হয়েছে রাজধানীতে অবস্থিত সহকারী ভূমি কমিশনারের ৫টি সার্কেল অফিস, তহসিল অফিস, জেলা প্রশাসকের আওতাধীন রেকর্ড রুম, ভূমি অধিগ্রহণ শাখা এবং ভূমি জরিপ অধিদফতর। সাধারণ মানুষ এসব প্রতিষ্ঠানে সেবার পরিবর্তে শিকার হচ্ছেন সীমাহীন ভোগান্তির। তেজগাঁও, ডেমরা, ধানম-ি, মোহাম্মদপুর ও কোতোয়ালি- এ ৫টি সার্কেল অফিস ও জেলার রেকর্ড রুমে দালাল, উমেদার এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের খপ্পরে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ভূমি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র আর পর্চা। টাকা ছাড়া এখানে কোনো কাজ হয় না। এমন অভিযোগ রয়েছে টাকা দিলে মৃত মানুষের নামেও বের হচ্ছে পর্চা। বিভিন্ন জরিপ, সংশোধন, তদন্তের নামেও হচ্ছে লাখ লাখ টাকার দুর্নীতি। জমা-খারিজ, নামজারি (মিউটিশন), নামজারি সংক্রান্ত বিভিন্ন সংশোধন, মূল দলিল, ভায়া দলিলের সার্টিফাইড কপি, মিস কেইস দায়ের, ভূমি কর পরিশোধ, রেকর্ড সংশোধন, আরএস, এসআর ও মহানগর পর্চা কপি, এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভুলভ্রান্তি সংশোধন, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি ওয়াশিরদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে দেওয়া মূলত এসি (ল্যান্ড) অফিস ও স্থানীয় তহসিল অফিসের কাজ।
জানা যায়, ঢাকার ৫টি ভূমি সার্কেল অফিসে প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার মানুষ আসে তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে। প্রতিটি সার্কেলের প্রধান হলেন একজন সহকারী কমিশনার। এছাড়াও কাগজে-কলমে প্রতিটি সার্কেলে কানুনগো, সার্ভেয়ার, নাজির, মিউটেশন ক্লার্ক, প্রসেস সার্ভেয়ার, পিয়নসহ মোট ১০ থেকে ১২ জন স্টাফ কাজ করছেন। কিন্তু বাস্তবে সার্কেল অফিসগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি অফিসকে ঘিরে আছে কমপক্ষে ৪০/৫০ জন। বাকিরা সরকারি বেতনভুক্ত না হয়েও নিজেদের স্টাফ (ওমেদার) পরিচয় দিয়ে লাগামহীনভাবে চালাচ্ছেন দুর্নীতি আর লুটপাট। এদের জন্য সরকারিভাবে কোনো বেতন-ভাতা না থাকলেও তাদের মাসিক আয় একজন সহকারী কমিশনারের চেয়ে বেশি বলে জানা যায়।
দালালচক্র : অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছত্রছায়ায় প্রতিটি ভূমি অফিসে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ দালালচক্র। এ চক্রটি এমনভাবে ভূমি অফিসগুলোকে ঘিরে রেখেছে যে তাদের অতিরিক্ত টাকা দেওয়া ছাড়া সেখানে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর এভাবেই প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে বছরের পর বছর ধরে ভূমি অফিসের কার্যক্রম। কেউ যদি এ দালালচক্রকে অতিরিক্ত টাকা না দিয়ে স্বাভাবিক নিয়মে ভূমি অফিস থেকে তার প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে চান তাহলে অবশ্যই তাকে কোনো না কোনো হয়রানির শিকার হতে হবে। ডেমরা ভূমি অফিসের ভূমি রেকর্ড ও জরিপ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভূমি অফিসগুলোতে প্রকাশ্যে দুর্নীতি হয়- এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ভূমি অফিসকে ঘিরে স্থানীয় কিছু দালালচক্র গড়ে ওঠায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অফিসের কাজকর্ম মূলত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি।’
টিআইবির জরিপ : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবির পরিচালিত এক জরিপে জানা যায়, জমির মিউটেশন, রেজিস্ট্রেশন, ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ বা অনুসন্ধান ও সরকারি জমি বরাদ্দ থেকে শুরু করে আরো অনেক কাজ রয়েছে যেগুলোকে পুঁজি করে এসব দালালচক্র সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। ২০১২ সালে দেশের ৭,৫৫৪টি পরিবারের ওপর টিআইবির পরিচালিত এক জরিপে জানা যায়, এসব পরিবারের ৯২ শতাংশই বলেছে ভূমি অফিসের কাজ সম্পন্ন করতে তাদের অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়েছে।
জরিপে আরো দেখা গেছে, সময়মত ভূমি অফিসের কাজ আদায় করার জন্য প্রত্যেককে গড়ে ৭,৮০৭ টাকা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। ভূমি অফিসগুলোর এ দ–র্নীতি রোধ করতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। ২০১১ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিরসনের লক্ষ্যে ভূমি অফিসের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিভাগীয় ও উপকমিশনারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় ভূমি সচিব মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমানের পক্ষ থেকে দেশের ৭টি বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪টি জেলার উপকমিশনারদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
কিন্তু এখন পর্যস্ত তৃণমূল পর্যায়ে ভূমি অফিসের কোনো অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে উপকমিশনারদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভূমি অফিসের দুর্নীতি নিরসনে ভূমি মন্ত্রণালয় কি ব্যবস্থা নিচ্ছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বলেন, ‘সব ভূমি অফিসের যে কোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং ভূমি অফিসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্ দালালচক্রের অপসারণ করা হবে।’
ভূমি অফিসের উর্নীতি নিরসনে মন্ত্রণালয়ের নতুন কোনো নির্দেশনা আছে কিনা তা জানতে চাইলে ভূমি সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, ‘এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।

কোর্ট ম্যারেজের ফাঁদ: প্রতারিত হচ্ছে মেয়েরা





সীমা ও সুজন আদালতের নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে গিয়ে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করেছিল। কিন্তু তখন তারা বিয়ের কাবিন রেজিষ্ট্রী করেনি। বিয়ের কিছুদিন পরই সুজন সীমার সঙ্গে তার বিয়ের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করে। আর এ অজুহাতে সীমাকে মোহরানা, খোরপোষ ও দাম্পত্য অধিকার দিতেও তিনি রাজি নন। অবশেষে বিষয়টি গড়িয়েছে আদালতে ।

কাবিন রেজিষ্ট্রীর পরিবর্তে কোর্টম্যারেজ অধিকতর শক্তিশালী-এ ভুল ধারণার ফাঁদে পড়ে অনেক নারী তাদের দাম্পত্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আইনের ছদ্মাবরণে একশ্রেণীর নোটারী পাবলিক এ অবৈধ কাজে সহায়তা করে চলেছেন। অথচ বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ‘কোর্ট ম্যারেজের কোন বৈধতা নেই, এমনকি এর কোন অস্তিত্বও নেই।

পঞ্চাশ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা একশত পঞ্চাশ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের কার্যালয়ে গিয়ে হলফনামা করাকে বিয়ে বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এফিডেভিট বা হলফনামা শুধুই একটি ঘোষণাপত্র।

কাবিন রেজিষ্ট্রী না করে অনেকে বিয়ে সম্পন্ন করছেন। আইনানুযায়ী কাবিন রেজিষ্ট্রী ও আকদ সম্পন্ন করেই কেবল ঘোষণার জন্য এফিডেভিট করা যাবে। কিন্তু এ নিয়ম মানা হয় না। মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ বিধি ১৯৭৫ এর ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী ‘নিকাহ রেজিষ্ট্রার ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি যদি বিবাহ করান তাহলে সেই ব্যক্তি ১৫ দিনের মধ্যে ওই নিকাহ রেজিষ্ট্রারের নিকট অবহিত করবেন, যার এলাকায় উক্ত বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে’।

মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ আইন ১৯৭৪-এর ধারা ৫(২) অনুযায়ী বিবাহ রেজিষ্ট্রশন না করার শাস্তি সর্বোচ্চ (তিন) মাসের কারাদ- কিংবা পাঁচশত টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। আকদ বা বিয়ে রেজিষ্ট্রী না করে শুধুমাত্র হলফনামায় ঘোষণা দিয়ে ঘর-সংসার প্রবণতা অমাদের দেশে ক্রমেই বাড়ছে। অথচ এর কোন বৈধতা নেই।

আবেগঘন সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক তরুণ তরুণীর ভুল ধারণা হয় যে, শুধুমাত্র এফিডেভিট করে বিয়ে করলে বন্ধন শক্ত হয়। কাজী অফিসে বিয়ের জন্য বিরাট অঙ্কের ফিস দিতে হয় বলে কোর্ট ম্যারেজকে অধিকতর ভাল মনে করে তারা।
অনেকে এফিডেবিটের মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদন করে একাধিক বিয়ের কথা গোপন করার জন্য। কোন মেয়ের অভিভাবককে জিম্মি করে টাকা আদায় কিংবা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যও অনেক সময় এফিডেভিটের মাধ্যমে ভূয়া বিয়ের দলিল তৈরি করা হয়।

এ দলিল তৈরি করা খুব সহজেই সম্ভব এবং এসব ক্ষেত্রে হলফনামা প্রার্থীকে নোটারি পাবলিকের কাছে হাজির হতে হয় না। এর ফলে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা থেকে রক্ষার জন্য আসামী পক্ষের এরকম হলফনামা তেরীর প্রবণতা দেখা যায়।
লাইসেন্স বিহীন কাজীর নিকট বিয়ে রেজিষ্ট্রী করলে এর কোন আইনত মূল্য নেই। কাজীর কাছে গিয়ে কাবিন না করলে দু’পক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কাবিননামা না থাকায় নারীরা তাদের মোহরানাও পায়না। কাবিননামার বদলে কোর্ট ম্যারেজের বিয়েতে ছেলেরা একটা সুযোগ খুঁজে। জোর করে দস্তখত নিয়ে এফিডেভিট করেছে মেয়ে পক্ষ এই অজুহাত অনেক সময় দাঁড় করে ছেলে পক্ষ। আইনানুযায়ী বিয়ের আসরেই বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে হয়। বিয়ের আসরে সম্ভব না হলে বিয়ে অনুষ্ঠানের দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রী করতে হয়। কাজীকে বাড়িতে ডেকে এনে অথবা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রী করা যায়।

এছাড়াও কাবিননামার সকল কলাম পূরণ করার পর বর, কনে, উকিল,সাক্ষী ও অন্যন্যা ব্যক্তিগণের স্বাক্ষর দিতে হয়। এদেশের সব ধর্মের বিয়ে বিচ্ছেদের ব্যাপরে পারিবারিক আইন আদালতের নিয়ম মানতে হবে। কোর্ট ম্যারেজের বিয়েতে উৎসাহদানকারী নোটারি পাবলিকদের চিহ্নিত করে শাস্তির বিধান করতে হবে। আইন করে কোর্ট ম্যারেজের বিয়ে বন্ধ করা সময়ের দাবী।